গত ছয় মাস আগে এভাবেই একে একে শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করে সৌদি আরব যাওয়ার জন্য এসব সমুদয় টাকা তুলে দেন বিচ্ছেদ আলীর হাতে। ভিসাও পাঠানো হয় পাইলটের নামে।
পাইলটের বাবা মোজাহার আলী বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিবেশি বিচ্ছেদ আলীর ছেলে হাসান আলী সৌদিআরবে থাকায় তার ছেলে পাইলটকে সেখানে একটি হোটেল বয় হিসেবে চাকরির জন্য পাঠানোর প্রস্তাব দেন। এজন্য দাবি করা হয় সাড়ে সাত লাখ টাকা। দুই দফায় সাড়ে সাত লাখ টাকা হাতিয়ে নেন বিচ্ছেদ আলী। এরপর ভিসার কপি হাতে পেয়ে দেখা যায় সেটি জাল। বিষয়টি বিচ্ছেদ আলীর নজরে আনলে তিনি প্রথমে ভুল স্বীকার করেন এবং নতুন করে ভিসার ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেন।
পরে দ্বিতীয় দফায় ভিসা ও মেডিক্যাল পরীক্ষার নামে চাওয়া হয় আরও দেড় লাখ টাকা। ওই দেড় লাখ টাকা না দিলে সব প্রচেষ্টা শেষ হয়ে যাবে বলে জানান বিচ্ছেদ আলী। পরে আবারও ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয় তাকে। এরপরও ভিসা দিতে গরিমসি করেন তিনি। এতে তার ওপর সন্দেহের সৃষ্টি হয়। ঘটনাটি বাহরাইন ফেরত প্রতিবেশি সাইফুল ইসলামের মাধ্যমে কাগজপত্র দেখে জালিয়াতির বিষয়টি স্পষ্ট হয়। এ ঘটনা জানাজানি হলে বিচ্ছেদ আলী ধামাচাপা দিতে আরেকটি ভিসা এনে দেন। সেটিও জাল প্রমাণিত হয়।
এ নিয়ে এলাকায় একটি সালিশ বৈঠকে বিচ্ছেদ আলী ক্ষতিপূরণ বাবদ আড়াই লাখ টাকা দিতে সম্মত হন। কিন্তু পরে ওই সিদ্ধান্ত অমান্য করেন তিনি। এ ঘটনায় মোজাহার আলী ৩০ অক্টোবর বিচ্ছেদ আলী (৫৫) ও তার তিন ছেলে হাসান আলী (২২), রাকিবুল ইসলাম (২৬) ও বিপ্লব হোসেনকে (২২) অভিযুক্ত করে বাগাতিপাড়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। কিন্তু অভিযোগ করার পরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। উপরুন্তু অভিযুক্তরা এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং হুমকি দিচ্ছেন।
পাইলট আলী বাংলানিউজকে বলেন, আমাকে মেডিক্যাল পরীক্ষার নামে ঢাকায় নিয়ে একটি হাসপাতালে সারাদিন বসিয়ে রাখেন বিচ্ছেদ আলী ও লোকজন। রাত হলে তারা জানান, তারা সবকিছু ম্যানেজ করে নিয়েছেন, পরীক্ষা না করলেও চলবে। সৌদি যাওয়া ফাইনাল। কিন্তু তাদের প্রতারণার কারণে সৌদিআরবে আর যাওয়া হলো না আমার।
এ বিষয়ে কথা বলতে অভিযুক্ত বিচ্ছেদ আলীর বাড়িতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার বোন আসমা বেগম এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তার ভাইয়ের সঙ্গে পাইলটের পরিবারের কোনো লেনদেন হয়নি।
স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য আকরাম হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বিচ্ছেদ আলীকে দ্রুত পাইলটের পরিবারকে অর্থ ফেরত দিতে অনুরোধ করেছি। তবে বিচ্ছেদ আলী কর্ণপাত করেননি।
বাগাতিপাড়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাজ্জাদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, এ ব্যাপারে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার (০৫ নভেম্বর) উভয় পক্ষকে থানায় ডাকা হয়েছে। অবস্থা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ০২, ২০১৯
এনটি