মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে নিজ চেম্বারে সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিক্রিয়া জানান চিফ প্রসিকিউটর। তার পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন।
গোলাম আরিফ টিপু বলেন, গত রোববার (১৫ ডিসেম্বর) মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায় নাম দেখে আমি হতবাক, বিস্মিত, মর্মাহত ও অপমানিত। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সীমাহীন অযত্ন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে অবহেলার সঙ্গে এই তালিকা প্রচার ও প্রকাশ করেছে তা প্রমাণিত।
মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণের কথা উল্লেখ করে ২১শে পদক জয়ী এ ভাষা সৈনিক বলেন, সরকার পরীক্ষা-নীরিক্ষা ও যাচাই-বাছাই করেই ২০১০ সালের ২৮ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছে আমার জোর দাবি, তারা ভুল অনুধাবন করে অনতিবিলম্বে তা সংশোধন করে প্রজ্ঞাপন জারি করবেন।
এর আগে, রোববার (১৫ ডিসেম্বর) একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পথঘাট চেনাতে ও মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছে, তাদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়। এদিন সকালে সংবাদ সম্মেলন করে এ তালিকা প্রকাশ করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। প্রথম দফায় ১০ হাজার ৭৮৯ রাজাকার, আলবদর ও আলশামসের নাম প্রকাশ করা হয়েছে।
কিন্তু তালিকায় অনেক মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতার পক্ষের লোকদের নাম আসায় এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।
রাজশাহী বিভাগে রয়েছে এক থেকে ১৫৪টি রাজকারদের তালিকা। এসব তালিকায় কয়েকশ’ ব্যক্তির নাম রয়েছে, যাদের মধ্যে কয়েকজনের নাম এসেছে একাধিকবারও।
৮৯ নম্বর তালিকায় (ক্রমিক নম্বর ৬০৬) নাম এসেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপুসহ পাঁচজনের। অথচ এই পাঁচজন এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা ৭১’র যুদ্ধের সময় থেকে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি ও আদর্শের মানুষ।
স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকাটিতে নাম রয়েছে তৎকালীন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক অ্যাডভোকেট মহসিন আলীর। নাম এসেছে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে পরিচিত অ্যাডভোকেট আব্দুস সালামেরও। তার পরিবারের পাঁচ সদস্য মুক্তিযুদ্ধের সময় নিহত হন। ওই সময় আব্দুস সালাম পাকিস্তানি হানাদার ও তাদের দোসরদের ভয়ে দেশ ছেড়ে ভারতে অবস্থান করেন।
৮৯ নম্বর তালিকায় থাকা পাঁচজনের মধ্যে বাকি দু’জন হলেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক আব্দুর রউফ ও পুলিশ কর্মকর্তা এস এস আবু তালেব। যদিও এই তালিকার মন্তব্যের ঘরে লেখা রয়েছে, তাদের অব্যাহতি দিতে জেলা কমিটি আবেদন করেছিল। এর বাইরে আর কোনো তথ্য নেই। সেই হিসেবে ধরা যায়, এই পাঁচ ব্যক্তি রাজাকার বা স্বাধীনতাবিরোধী ছিলেন না বলেই তাদের অব্যাহতি দিতে আবেদন করা হয়েছিল।
এদিকে ১৫ ডিসেম্বর প্রকাশিত রাজাকারদের তালিকায় ভুল থাকায় দুঃখপ্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে নতুন কোনো তালিকা প্রণয়ন করা হয়নি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকা থেকে যেভাবে পাওয়া গেছে, সেভাবেই প্রকাশ করা হয়েছে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, এ তালিকায় বেশ কিছু নাম এসেছে, যারা রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস, শান্তি কমিটি বা স্বাধীনতাবিরোধী নন, বরং মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের বা মুক্তিযোদ্ধা।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় জানায়, এ ধরনের কোনো ব্যক্তির নাম তালিকায় কীভাবে এসেছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদি ভুলভাবে কারও নাম এসে থাকে, আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে যাচাই-বাছাই করে তার/তাদের নাম এ তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৯
একে