এতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর রাজশাহীর কৃতি সন্তান অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপুসহ পাঁচজনের নাম এসেছে। অথচ এ পাঁচজন এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা ৭১'র যুদ্ধের সময় থেকে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি ও আদর্শের মানুষ।
এ ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মহানগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে মানববন্ধনও অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট এ মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে। এতে রাজশাহীর ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধারাও সংহতি প্রকাশ করেন। মানববন্ধন চলাকালে সেখানে সমাবেশও অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে প্রকাশিত ওই তালিকার তীব্র সমালোচনা করেন মুক্তিযোদ্ধারা।
মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, রাজশাহীর সব মুক্তিযোদ্ধার কাছে আবদুস সালাম অত্যন্ত সম্মানী ব্যক্তি। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার পরিবারের ঋণ কোনো দিন শোধ করা যাবে না। আর অ্যাডভোকেট টিপু মুক্তিযুদ্ধের একজন আজন্ম যোদ্ধা। তিনি এখনও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রাজাকারদের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছেন। আর অ্যাডভোকেট মহসিন ছাত্রনেতা হিসেবেই স্বাধীনতার আগে আন্দোলন করেছেন। সে জন্য তিনি দণ্ডিত হয়েছিলেন। কারাভোগ করেছেন। তাদের নাম রাজাকারের তালিকায় থাকায় মুক্তিযোদ্ধারা লজ্জিত, মর্মাহত। একইসঙ্গে ক্ষুব্ধ।
কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে পড়ার সময়ই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল রাজশাহীর অ্যাডভোকেট আব্দুস সালামের। তারা দুজনেই থাকতেন বেকার হোস্টেলে। তখন থেকেই গভীর ঘনিষ্ঠতা। এরপর গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে দু’জনের।
দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু রাজশাহীতে যতবারই এসেছিলেন, থাকতেন অ্যাডভোকেট আব্দুস সালামের সিপাইপাড়ার বাড়িতেই। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি মোড়ানো সেই বাড়িটি এখনও আছে আগের মতোই। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে যোগ দিতে এসেছিলেন বঙ্গবন্ধু। সে সময় রাজশাহী গিয়ে তিনি ওই বাড়ির দ্বিতীয়তলায় সিঁড়ির পাশে পশ্চিম দিকে ঘরটাই ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর জাতীয় চার নেতা অন্যতম শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানেরও বিশ্বস্ত ছিলেন তিনি। কামারুজ্জামানের ধানমণ্ডির বাসায় অবাধ যাতায়াত ছিল আব্দুস সালামের। অথচ তার নামও বাদ যায়নি প্রকাশিত ওই তালিকায়।
ভাষা সৈনিক আবুল হোসেন বলেন, তালিকা যারা করেছে তাদের মধ্যেই রাজাকার রয়েছে। রাজাকার আছে বলেই এমন গোলমাল করা হচ্ছে। তবে গুরুত্ব বিবেচনায় দ্রুত তালিকা সংশোধন প্রয়োজন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যদি এটি ঠিক করা না হয় তাহলে ভবিষ্যতে আমাদের খুব বিপদে পড়তে হবে। আওয়ামী লীগকে বলবো তোমাদের মধ্যে রাজাকার ঢুকে আছে।
তিনি আরও বলেন, রাজশাহীতে যে তিনজন অ্যাডভোকেটের নাম প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায় এসেছে তাদের আমি খুব ভালো করে চিনি। তবে কেবল রাজশাহীতে নয় চারিদিকেই মুক্তিযোদ্ধাদের এখন রাজাকার বানিয়ে বসে আছে। বুঝতে পারছি না এরা কী করতে চাচ্ছে!
সমাবেশে প্রবীণ সাংবাদিক মুস্তাফিজুর রহমান খান আলম বলেন, রাজকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধাদের নাম। এরকম একটি কাজের দায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় কখনও এড়িয়ে যেতে পারেন না। আমরা চাই রাজকারদের চিহ্নিত করে তাদের বিচার করা হোক।
মানববন্ধন চলাকালে অনুষ্ঠিত সমাবেশে রাজশাহী সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার ঘোষ, বঙ্গবন্ধু পরিষদ রাজশাহী মহানগর শাখার সভাপতি নুরুল আমিন প্রামানিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক অ্যাডভোকেট আবদুস সালামের পরিবারের সদস্য আরিফুল হক কুমার এবং রাজশাহী মহিলা পরিষদের সভানেত্রী কল্পনা রায়সহ আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন।
প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায় রাজশাহী বিভাগে ১৫৪ জনের নাম রয়েছে। এর মধ্যে তালিকার ৮৯ নম্বরে (ক্রমিক নম্বর ৬০৬) রাজশাহী জেলার পাঁচজনের নাম রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৯
এসএস/ওএইচ/