একইসঙ্গে যে তথ্যের ভিত্তিতে তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে তার অনুলিপি সরবরাহে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও আবেদেন করেছেন তিনি।
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে নিজ চেম্বারে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল পদমর্যাদায় থাকা চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু ।
১৭ ডিসেম্বর ওই তিন মন্ত্রণালয়ে এ আবেদন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর কাছে পাঠানো ওই আবেদনে বলা হয়, ‘গত ১৫ ডিসেম্বর রাজাকারের তালিকা প্রচার ও প্রকাশ করেছেন, সে জন্য অভিনন্দন। এ তালিকায় রাজশাহী বিভাগের.... নথিতে ঠিকানাবিহীন চতুর্থ নম্বর `Mr.Md Golam Arif Advocate’ লিখা আছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে আমি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর হওয়ায় উহা প্রচার ও প্রকাশিত হয়েছে। ’
‘....রাজাকার তালিকায় আমার নাম যুক্ত থাকায় আমি হতবাক, বিস্মিত, মর্মাহত ও অপমানিত। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রাজাকার তালিকায় প্রচার ও প্রকাশের ক্ষেত্রে সীমাহীন অযত্ন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে অত্যন্ত অবহেলার সাথে এ তালিকা প্রকাশ ও প্রচার করেছে মর্মে সর্ব মহলে অনুভূত। ’
আবেদনে আরও বলা হয়, ‘মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নিকট আমার জোর দাবী তারা তাদের ভুলটি অনুধাবন করতে সক্ষম হবেন এবং অনতিবিলম্বে ভুল সংশোধন করে আমার নাম `Mr.Md Golam Arif Advocate’ বাতিল ও প্রত্যাহারপূর্বক প্রজ্ঞাপন জারি করে গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশ করার জন্য আবেদন জানাচ্ছি। ’
এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো আবেদনে বলা হয়, ‘... গণমাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী উল্লেখ করেছেন যে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রেরিত তালিকা আমরা হুবহু ছাপিয়েছি। ’
‘... মন্ত্রণালয়ের নিকট আমার আকুল আবেদন আমার নাম `Mr.Md Golam Arif Advocate’ গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশ করা হয়েছে, যা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রেরিত রাজাকার তালিকার কপি এবং যে সব তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে ওই তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে তার কপি সরবরাহের জন্য বিনীত আবেদন জানাচ্ছি। ’
এসব আবেদনের অনুলিপি অ্যাটর্নি জেনারেল, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার ও তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ককে অনুলিপি পাঠানো হয়েছে।
এর আগে ১৭ ডিসেম্বর এক প্রতিক্রিয়ায় চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু
বলেন, ‘দাবি একটাই, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি, সেই শক্তিকে যারা রাজাকার-আলবদরের তালিকায় যুক্ত করেছে সেটা কীভাবে হলো, তার উৎস কারা, সেটা খুঁজে বের করে আইনগতভাবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। ’
একুশে পদকপ্রাপ্ত এই ভাষা সৈনিক বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় একটি লিস্ট বের করলো রাজাকারের, সেই তালিকায় দেখা যাচ্ছে .....আমাদের রাজাকারের তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে। এটা বুঝে পেলাম না কোথা থেকে তারা এ শক্তিটা পেলেন। এটা মনে হয় যে মুক্তিযুদ্ধ সংস্থায় যুদ্ধপরাধীর পক্ষের শক্তি বা মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধ শক্তি তাদের অবস্থান কিছুটা রয়ে গেছে। এবং সেখান থেকে এ জিনিসগুলো হচ্ছে উদ্দেশ্যেপ্রণোদিতভাবে। ’
পরে তার বিস্তারিত বক্তব্য তুলে ধরেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম, প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন।
এক পর্যায়ে প্রসিকিউটাররা ২০১৩ সালের ৪ আগস্ট একটি গেজেটের কথা উল্লেখ করেন। ওই গেজেটে ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়ন, বিশেষ গেরিলা বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা রয়েছে। সেখানে অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপু ৩৩ নম্বর ক্রমিকে রয়েছেন।
পড়ুন>>রাজাকারের তালিকায় বঙ্গবন্ধুর বেয়াইয়ের নাম!
>> রাজাকারের তালিকায় নাম: ব্যবস্থা চান ট্রাইব্যুনালের টিপু
>> রাজাকারের তালিকায় নাম দেখে ‘অপমানিত’ টিপু, সংশোধনের দাবি
>> ট্রাইব্যুনালের গোলাম আরিফ টিপুও রাজাকার!
বাংলাদেশ সময়: ১২৪১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৯/আপডেট: ১৩৫৩ ঘণ্টা
ইএস/এমএ