ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

হঠাৎ জেঁকে বসেছে শীত, লাফিয়ে নামছে তাপমাত্রা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৯
হঠাৎ জেঁকে বসেছে শীত, লাফিয়ে নামছে তাপমাত্রা

রাজশাহী: রাজশাহীতে মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৪ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) তা আরো নেমে রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে একদিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা কমেছে ২ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাই কোনো বর্ণনা ছাড়াই বলা যায়, রাজশাহীতে হঠাৎ জেঁকে বসেছে শীত।

এক লাফে তাপমাত্রা কমে আসায় পৌষের শুরুতেই তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে রাজশাহীতে। অথচ পুরো নভেম্বর এবং ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ কেটেছে শীতবিহীন।

শেষ রাতের শীতল পরশ আর ভোরের কুয়াশা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে রাজশাহীর এই পদ্মাপাড়ের মানুষদের। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কমতে শুরু করলেও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামেনি।  

আরও পড়ুন>> আসছে শৈত্যপ্রবাহ

বুধবার সকাল থেকে সূর্যের মুখ দেখা গেলেও ঠাণ্ডা বাতাসের দাপটে কাবু হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। ঠাণ্ডায় জড়োসড়ো হয়ে পড়েছেন পথের ধারে থাকা ছিন্নমূল মানুষগুলো। প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রের অভাবে ভাসমান ও ছিন্নমূল মানুষরা শীতে কাতর হয়ে পড়েছেন এখনই। আর শীত নিবারণের জন্য কম দামে শীতবস্ত্র কিনতে তারা যাচ্ছেন ফুটপাতের দোকানগুলোতে।

তবে শুরুতেই শীত মোকাবিলার প্রস্তুতি শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিভাগ প্রস্তুত হচ্ছে শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানোর। সরকারি এই দফতরটি জানিয়েছে, শীতার্তদের মধ্যে এবার প্রায় ৬০ হাজার কম্বল বিতরণ করা হবে।

জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, তাদের হাতে এখন ৬০ হাজার কম্বল রয়েছে। শীতের তীব্রতা বাড়তে শুরু করায় কম্বল বিতরণও শুরু হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে শীতার্তদের হাতে কম্বল পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। জেলার ৯ উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকায় কম্বল বিতরণ হচ্ছে। সিটি করপোরেশন এলাকার ৩০টি ওয়ার্ডেও প্রয়োজনীয় সংখ্যক কম্বল বরাদ্দ করা হয়েছে।
 
এদিকে, সন্ধ্যার পর ছিন্নমূল মানুষগুলোকে পথের ধারে খড়-কুটোয় আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করতে দেখা গেছে। এরইমধ্যে বেসরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু হয়েছে।  

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. আরিফুল হক জানান, হঠাৎই ঠাণ্ডা বেড়েছে। তাই হাসপাতালে শীতজনিত রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। এদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধদের সংখ্যা বেশি। আক্রান্তদের বেশিরভাগই ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, হৃদরোগ, অ্যাজমা নিয়ে হাসপাতালে আসছেন বলেও জানান এই চিকিৎসক।

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন বাংলানিউজকে বলেন, কয়েক দিন থেকেই তাপমাত্রা নামছে। তবে রাজশাহীতে আজই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে ১৭ ডিসেম্বর ছিল ১৪ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ১৬ ডিসেম্বর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে পরিসংখ্যানই বলছে তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমছে। এর মধ্যে বুধবারই দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এক লাফে ২ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমেছে।  

জানতে চাইলে লতিফা হেলেন বলেন, সাধারণত তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে মৃদু, ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে মাঝারি ও ৬ এর নিচে নামলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়ে থাকে। সেই হিসেবে এখনও মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়নি।

এদিকে, আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ডিসেম্বর মাসে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হতে পারে। তাই এ মাসে রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে কমতে থাকবে। এ মাসের শেষ দিকে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে ১ থেকে ২টি মৃদু (৮-১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ও মাঝারি (৬-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। শেষ রাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের উত্তরাঞ্চল ও নদ-নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। তবে জানুয়ারিতে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে।

এ মাসে দেশে ২ থেকে ৩টি মৃদু (৮-১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) থেকে মাঝারি (৬-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। যার মধ্যে ২টি তীব্র (৪-৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস) শৈতপ্রবাহে রূপ নিতে পারে। এ মাসে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চল এবং নদ-নদী অববাহিকায় মাঝাররি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে।
    
বাংলাদেশ সময়: ২০০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৯
এসএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।