বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) আজকের বৈঠকে পূর্ণ নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা ও সুরক্ষা এবং রোহিঙ্গা হিসাবে মেনে নেওয়ার দাবি-দাওয়াসহ নানা বিষয় নিয়ে রোহিঙ্গাদের আলোচনা হলেও কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়েছে প্রথম দিনের বৈঠক। একই বিষয়ে বৃহস্পতিবারও (১৯ ডিসেম্বর) একই স্থানে বৈঠক বসার কথা রয়েছে।
এর আগে বুধবার সকালে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলতে দুইদিনের সফরে কক্সবাজার পৌঁছেছে মিয়ানমারের উচ্চপর্যায়ের নয় সদস্যর ও আসিয়ানের ছয় সদস্যর প্রতিনিধি দল। দেশটির আন্তর্জাতিক সংস্থা ও অর্থনৈতিক বিভাগের ডিরেক্টর জেনারেল চ্যান অ্যায়ে দলটির নেতৃত্বে রয়েছেন।
কক্সবাজার অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. শামসু দৌজা নয়ন জানান, দেশটির আন্তর্জাতিক সংস্থা ও অর্থনৈতিক বিভাগের ডিরেক্টর জেনারেল চ্যান অ্যায়ে নেতৃত্বে নয় সদস্য এবং আসিয়ানের ছয় সদস্যর প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বেলা দেড়টার দিকে বৈঠকে বসেন। এ বৈঠকে পাঁচ নারীসহ রোহিঙ্গাদের ৪৭ জন কমিউনিটি লিডার উপস্থিত ছিলেন।
কয়েক ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠকে বরাবরের মতো রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদান, রোহিঙ্গা হিসাবে স্বীকৃতি, নিরাপত্তা ও সুরক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বৃহস্পতিবার আবার একইস্থানে বৈঠকের কথা রয়েছে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মুহিব উল্লাহ, সেক্রেটারি মওলানা ছৈয়দ উল্লাহ, রোহিঙ্গা কমিউনিটি লিডার মাস্টার আব্দুর রহিম, বদরুল ইসলাম, নারীদের মধ্যে জমাআলীদা, জমিরা বেগম ও ছিবান্নেছা প্রমুখ।
রোহিঙ্গা নেতা মো. ছৈয়দ উল্লাহ বলেন, নাগরিকত্ব, রোহিঙ্গা স্বীকৃতি, নিরাপত্তা ও সুরক্ষা, এনভিসি কার্ড নেওয়া-না নেওয়াসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে, চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বৃহস্পতিবার আবারও একই বিষয়ে আলোচনার কথা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, তারা আমাদের অনেক কিছুই বলেছেন কিন্তু, আমরা সেগুলো বিশ্বাস করতে পারছি না। তবে, প্রতিনিধিদলের প্রধান মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক সংস্থা ও অর্থনীতি বিভাগের পরিচালক সিন আয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, প্রত্যাবাসন ইস্যুতে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলবে।
২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল মিয়ানমারের সমাজকল্যাণমন্ত্রী উইন মিয়াট আয়ে’র নেতৃত্বে আরও একটি প্রতিনিধিদল রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলতে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আসেন। এরপর চলতি বছরের ২৭ ও ২৮ জুলাই মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ে’র নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল ও আসিয়ান প্রতিনিধিদল রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই বৈঠকও কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়া শেষ হলেও এ বিষয়ে সংলাপ অব্যাহত রাখার বিষয়ে মিয়ানমার ও রোহিঙ্গারা সম্মত হন।
তবে এ বৈঠক সেই সংলাপের অংশ নয় বলেও জানিয়েছেন রোহিঙ্গা নেতা ছৈয়দ উল্লাহ।
তিনি বলেন, আমরা তাদের কাছে জিজ্ঞেস করেছিলাম, এটি গত বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেই সংলাপ কিনা। তারা না বলেছে। মিয়ানমার যুক্তি দেখিয়েছে প্রত্যাবাসন চুক্তিতে সংলাপের কথা নেই। সে কারণে এটিকে সংলাপ বলা যাবে না। তারা বলেছে এটি ইনফরমেশনা শেয়ারিং।
বৃহস্পতিবার সকালে একইস্থানে মুসলিম এবং হিন্দু রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে দলটির।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনের ৩০ নিরাপত্তাচৌকিতে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিধন শুরু করে। এরপর প্রাণ বাঁচাতে অন্তত সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।
এর আগে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাসহ উখিয়া-টেকনাফের ৩৪ শিবিরে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী এই সংখ্যা ১১ লাখ ৮৫ হাজার ৫৫৭ জন।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৯
এসবি/এএটি