টানা তিন দিন ধরে রাজধানীতে সূর্যের দেখা নেই। কার্যত গত তিন দিনই দিন-রাত সমান।
রাজধানীর বিমানবন্দর রেলস্টেশনে দেখা মিললো ক’জন ছিন্নমূল মানুষের। জামিলা নামে এক মা তার সন্তানকে জড়িয়ে ধরে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। কারণ শীতের কোনো পোষাক নেই তাদের। একটি চাদর দিয়েই মা-মেয়ে শীত থেকে বাঁচার চেষ্টা করছে।
জামিলা বাংলানিউজকে জানান, স্বামী নেই, মেয়েকে নিয়ে স্টেশনেই থাকেন। শীতে দিন কোনোমতে পার হলেও রাতেই সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয়। কারণ শীতের কোনো কম্বল নেই তাদের।
আবার পাতলা চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়েও আছেন অনেকে। এমনই একজন শায়লা। নিজের থাকার কোনো বাড়ি নেই। রেলস্টেশনেই কাটছে তার জীবন। আর সবার মতো তিনিও শীতের কষ্টে দিন যাপন করছেন।
স্টেশনের পাশেই ক’জনকে দেখা গেলো কাগজ-খড়কুটো পুড়িয়ে উষ্ণতা নিচ্ছে। আবির নামে এক কিশোর বললো, আগুন জ্বালিয়ে শীত থেকে তারা বাঁচার চেষ্টা করছে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার। শীতের সকালে সেখানকার ফুটপাতে ক’জন শুয়ে আছে। ময়লা চাদর গায়ে দিয়েই ঝুড়িতে ঘুমায় তারা। সারারাত কারওয়ান বাজারে কাজ করে এখানেই ঘুমিয়ে কোনোমতে জীবন যাপন করছে তারা। তাদেরই একজনের নাম শায়েখ মিয়া, বাড়ি বরিশাল। বাংলানিউজকে তিনি জানান, রাতে কাজ করে সকালে ঘুমান। কম্বল কিংবা শীত নিবারণের কোনো উপকরণ নেই তার। তাই কষ্টও হয় ভীষণ।
শুধু বিমানবন্দর স্টেশন কিংবা কারওয়ান বাজারই নয়, শীতের এমন চিত্র দেখা গেলো কমলাপুর রেলস্টেশন, ফার্মগেট ও বিজয় সরণির ফুটপাতসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। এসব এলাকায় শীতে অনেককেই গোল হয়ে কাগজ-খড়কুটো পুড়িয়ে উষ্ণতা নিতে দেখা গেছে।
রাজধানীর বাড্ডা এলাকা। তীব্র শীতেও থেমে নেই তার রিকশার প্যাডেল। দু’পা দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন রিকশা। গায়ে নেই শীতের জামা। জিজ্ঞেস করলে নাম জানালেন শ্যামল দাস। বাড়ি উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে। তিনি বাংলানিউজকে জানান, যা আয় করেন, তার সিংহভাগই চলে যায় রিকশার ভাড়া ও থাকা-খাওয়া বাবদ। বাকিটা বাড়িতে পাঠিয়ে দেন স্ত্রী-সন্তানের জন্য। তাই চাইলেও শীতের কাপড় কিনতে পারেন না।
এভাবেই তীব্র শীতেও বসে নেই রাজধানীর নিম্নবিত্ত মানুষ। হাড় কাঁপুনি শীতে কষ্টে দিনাতিপাত করছেন তারা। তেমনি এ শীতে কষ্টে রয়েছেন ছিন্নমূল হতদরিদ্র মানুষেরা।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ শৈত্যপ্রবাহ আরও কয়েকদিন চলবে। তাই সহসাই শীতের কষ্ট থেকে রেহাই মিলছে না নিম্নবিত্ত ও ছিন্নমূল মানুষের।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৯
টিএম/এসএ