সেখানে ১৪১ জন অফিসার, ১১৮ জন জিওসি, পাঁচ হাজার ৪৫০ জন সিপাহী এবং এক হাজার ৮৫৬ জন প্যারামিলিশিয়াবাহিনী নিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অধিনায়ক মেজর জেনারেল নজর শাহ্ ও ব্রিগেডিয়ার নওয়াব আহমেদ আশরাফ আত্মসমর্পণ করেন। এতে বিজয়ের উল্লাস ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে।
২৬ মার্চের কালোরাতে ঢাকায় অপারেশন সার্চ লাইটে অসংখ্য বাঙালি হত্যার পর পাকিস্তান সেনাবাহিনী সারাদেশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। যোগাযোগ সুবিধার কারণে পাকিস্তান সেনাবাহিনী নাটোরে তাদের ২য় হেড কোয়ার্টার প্রতিষ্ঠা করে।
সমগ্র উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গের যুদ্ধ নাটোর থেকে পরিচালনা করা হতো। শহরের ফুলবাগানে সিও অফিসে স্থাপিত হয় প্রধান কার্যালয়। এছাড়া তৎকালীন গভর্নর হাউস তথা বর্তমান উত্তরা গণভবন, রাণী ভবানী রাজবাড়ী, আনসার ক্যাম্প, পিটিআই এবং নবাব সিরাজ-উদ্-দৌলা কলেজে পাকিস্তান সেনাবাহিনী অবস্থান নেয়।
মুক্তিযোদ্ধা নবীউর রহমান পিপলু বলেন, শহরের বিভিন্ন প্রান্তে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী অবস্থান নেওয়ায় নাটোর শহর ১৩ এপ্রিলের পর থেকে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। ইতোপূর্বে নাটোর টাউন পার্কে খন্দকার আবু আলীর নেতৃত্বে গঠিত সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ এবং নাটোর রিক্রিয়েশন ক্লাব থেকে পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের কার্যক্রম মন্থর হয়ে পড়ে।
মুক্তিযুদ্ধের এ অঞ্চলের অন্যতম সংগঠক অ্যাডভোকেট মাজেদুর রহমান চাঁদ জানান, শহরে পাকিস্তানি হানাদারবাহিনীর শক্ত অবস্থানের কারণে মুক্তিযোদ্ধারা নাটোর ছাড়তে শুরু করেন। পরে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।
মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন বলেন, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের পর মুক্তিযোদ্ধারা রণাঙ্গন থেকে নাটোরে ফিরে আসতে শুরু করেন। ১৩ এপ্রিল থেকে ১৫ ডিসেম্বর নাটোর শহর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকলেও ১৬ ডিসেম্বর থেকে তারা নিজেদের গুটিয়ে নেয়। ১৬ থেকে ২০ ডিসেম্বর উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গের বিভিন্ন স্থান থেকে হানাদারবাহিনী নাটোরে আসতে থাকে। এসময় নাটোরে আসে মিত্রবাহিনী।
২১ ডিসেম্বর তৎকালীন গভর্নর হাউস তথা বর্তমান উত্তরা গণভবনে ১৪১ জন অফিসার, ১১৮ জন জিওসি, পাঁচ হাজার ৪৫০ জন সিপাহী এবং এক হাজার ৮৫৬ জন প্যারামিলিশিয়াবাহিনী নিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অধিনায়ক মেজর জেনারেল নজর শাহ্ ও ব্রিগেডিয়ার নওয়াব আহমেদ আশরাফ আত্মসমর্পণ করে।
আত্মসমর্পণ দলিলে বাংলাদেশের পক্ষে স্বাক্ষর করেন মিত্রবাহিনীর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল লসমন সিং। ১০ হাজার ৭৭৩টি অস্ত্রসহ জমা হয় ট্যাংক, মর্টার এবং অসংখ্য সাঁজোয়া যান। সকালের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে কোনো সিভিলিয়নের প্রবেশাধিকার ছিল না বলে জানান এলাকার ওই সময়ের যুবক বর্তমানে ব্যবসায়ী সাদেক খামারু।
একই মত পোষণ করেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নাটোর জেলা শাখার সদ্য প্রাক্তন কমান্ডার আব্দুর রউফ। আত্মসমর্পণের খবর ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। সারাদিন ধরে শহরে চলে বিজয় মিছিল আর মুক্ত আকাশে গানফায়ার। জয় বাংলা স্লোগানে মুখরিত হয় সারা শহর।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ২১ ডিসেম্বর-নাটোর মুক্ত দিবসকে রেড লেটার ডে হিসেবে অভিহিত করেছেন তৎকালীন বৃহত্তর রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি, বর্তমানে নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস।
২১ ডিসেম্বর নাটোর মুক্ত দিবস উপলক্ষে নাটোর প্রেসক্লাবের উদ্যোগে শহরে বিজয় শোভাযাত্রা শেষে প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৯
আরএ