৬০টি পরিবারের জন্য নির্মিত এই আবাসনে নারী-শিশুসহ বাসিন্দা রয়েছে প্রায় সাড়ে চারশ’। নানা বিপর্যয়ে ভিটেহীন কিছু মানুষের বেঁচে থাকার ঠাঁই হয়েছে এখানে।
জানা যায়, ২০০৬ সালের ৬ জুন বাদামতলী মৌজায় ঐতিহাসিক অর্জুন রাজার দীঘির পাড়ে ৯ একর ভূমিতে আবাসন প্রকল্পটি উদ্বোধন হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে অদ্যবধি আবাসনে কোনো মেরামত কাজ না হওয়ায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন, নিরাপত্তা আর অবকাঠামোগত অব্যবস্থাপনায় অনেকটা মানবেতর জীবনযাপন করছে এখানকার বাসিন্দারা। অথচ এমনটা হওয়ার কথা ছিলো না। কথা ছিলো তাদের জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকবে, স্কুল থাকবে, স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য থাকবে সরকারের পক্ষ থেকে ঋণ। কিন্তু এ সুবিধাগুলো এখনো অধরাই রয়েছে গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মৌলিক চাহিদার শুধুমাত্র বাসস্থানের ব্যবস্থা রয়েছে সেখানকার বাসিন্দাদের। আবাসনের ঘরের বেশীরভাগ ছাউনি, বেড়া, দরজা, জানালাসহ সবকিছু নষ্ট হয়ে ব্যবহার অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। জরাজীর্ণ ঘরের চালে পলিথিন দিয়ে কোনোমতে বসবাস করছে। শুষ্ক মৌসুমেও আবাসন থেকে রাস্তায় আসা-যাওয়ায় বাঁশের সাঁকো ছাড়া কোনো পথ নেই।
আবাসনের ছয়টি টিউবওয়েলের বর্তমানে তিনটি পরিত্যক্ত, বাকি তিনটিতে ঠিকমতো পানি উঠে না। দূর থেকে সংগ্রহ করতে হয় খাওয়ার পানি। প্রতি ১০ পরিবারের জন্য চারটি টয়লেট স্থাপন করা হলেও সবগুলো টয়লেট সম্পুর্ণ পরিত্যক্ত অবস্থায়। বর্ষাকালে এখানকার বাসিন্দাদের দুর্দশার অন্ত থাকে না। অতি বৃষ্টিতে ডুবে যায় আবাসন এলাকা। তখন পরিবার-পরিজন, গৃহপালিত পশুসহ তাদের ঠাঁই নিতে হয় আশপাশের এলাকায়।
আবাসনের সন্নিকটে রয়েছে বেসরকারি হামিদুল হক প্রাইমারি স্কুল। কিন্তু সেখানে বই-পুস্তক, উপবৃত্তিসহ কোনো সরকারি সুযোগ-সুবিধা না থাকায় এবং আবাসনের সন্নিকটে সরকারি প্রাইমারি স্কুল না থাকায় এখানকার শিশুরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত রয়েছে।
এখানকার পরিবারগুলোর বিভিন্ন অনুষ্ঠান করার জন্য কমিউনিটি সেন্টার করে দিয়েছে সরকার। কিন্তু অযত্ন অবহেলায় সব ভেঙে একেবারেই ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
পুনর্বাসিত পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন উৎপাদনমুখী ও আয়বর্ধক কর্মকাণ্ডের জন্য ব্যবহারিক ও কারিগরী প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তেমন কোনো সুফল দেখা যায়নি।
অন্যকোনো কর্মসংস্থান না থাকায় চরম দারিদ্রতা আর অভাবের মধ্যে দিন কাটছে তাদের। বয়স্কভাতা, বিধবাভাতাসহ ভিজিএফ কার্ডের সুযোগ-সুবিধা থেকেও বঞ্চিত বলে অভিযোগ করেন আবাসনের বাসিন্দারা।
আবাসনে বা কাছাকাছি কোনো কমিউনিটি ক্লিনিক নেই, আর সে কারণেই এখানকার বাসিন্দাদের সামান্য কিছু হলেই অনেক দূরে উপজেলা সদরের হাসপাতালে যেতে হয়।
নিবৃত্তপল্লি এলাকা হওয়ায় আবাসনটি মাদকের আখাড়ায় পরিণত হয়েছে। প্রায় রাতে আবাসনের আশপাশ মাদক ব্যবসায়ী, মাদকসেবীয় পদচারণায় জমজমাট হয়ে উঠে।
বাদামতলী আবাসন প্রকল্পের সাধারণ সম্পাদক কুলসুম আরা বেগম বলেন, আমাদের প্রধান সমস্যা হচ্ছে ঘর, স্কুল ও যাতায়াত সমস্যা। আমাদের ছেলেমেয়েগুলো স্কুলে যাবে, এই ধরনের কোনো যাতায়াতের সুবিধা নেই। তাছাড়া বাথরুম, কল-এগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। ১৩ বছর আগে সৃষ্টি হলেও আজো মেরামত হয়নি। আমাদের আবাসনের পাশে একটি ঐতিহাসিক দীঘি আছে তা অর্জুনের দীঘি। বর্ষাকালে পানিতে সয়লাব হয়ে যায়। পুকুরের পানি ব্যবহারের ফলে আমরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হই।
দাগনভূঁঞা উপজেলা চেয়ারম্যান দিদারুল কবির রতন বলেন, দাগনভূঁঞার একমাত্র আবাসন ইয়াকুবপুর ইউনিয়নের বাদামতলী এলাকায় যে আবাসন প্রকল্প রয়েছে, সেখানে আপনারা বিভিন্ন সমস্যার কথা বলেছেন, এই সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য আমরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে বলেছি। আমাদের ফান্ড আছে, চেয়ারম্যান আমাদেরকে জানালে আমরা সে পদক্ষেপ নেবো। আমরা প্রথমে আবাসন প্রকল্পের রাস্তাঘাটসহ যে সমস্যা আছে, সেগুলো অগ্রাধিকার দেবো।
ফেনী জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজজামান সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, ফেনীর দাগনভূঁঞা উপজেলার বাদামতলী নামক স্থানে একটি আবাসন প্রকল্প রয়েছে, এখানে অনেক লোকজন বসবাস করছেন। তাদের কিছু সমস্যা রয়েছে। রাস্তাঘাটের সমস্যা, কাছাকাছি স্কুলের সমস্যা রয়েছে, সেখানে সংস্কারের বিষয় রয়েছে। আমরা এই বিষয় সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। আমরা আশা করছি, অতি দ্রতই এসব সমস্যার সমাধান হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৯
এসএইচডি/এএটি