সাধারণত বর্ষকালে পাহাড়ের পানি নামলে কিছুটা ঘোলাটে দেখায় ১৫ একর জুড়ে ছড়িয়ে থাকা এ বগা লেকের পানি। কিন্তু এবার কোনো কারণ ছাড়াই সুবিশাল এ লেকটির পানি ঘোলাটে হয়েছে।
চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি থেকে হঠাৎ করেই লেকের পানি ঘোলা হতে শুরু করে। এখন সম্পূর্ণ কাদামাখা পানির মতো ঘোলাটে আকার ধারণ করে রয়েছে সেই পানি। মাস পেরিয়ে গেলেও পানি পরিষ্কার হয়নি।
এদিকে কয়েক বছর পরপরই বগালেকের পানি পরিবর্তনকে দেবতার আশীর্বাদ হিসেবে মনে করছে স্থানীয়রা। আর অন্যদিকে পরিবেশবিদরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কারণেই এ পানির রং পরিবর্তন হয়। তবে নির্দিষ্ট সময় শেষে আবার তা স্বাভাবিক আকার ধারণ করে।
স্থানীয়দের মতে, স্বাভাবিকভাবে এ লেকের পানি নীল ও স্বচ্ছ। এখন লেকের চেহারা মাটির রঙের মতো হয়েছে। ঘোলা পানি থেকে হালকা কাদার গন্ধও বের হচ্ছে। এ জন্য পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়েছে, সেই সঙ্গে গোসল করা যাচ্ছে না। কেন লেকের পানি এমন হলো তা নিয়ে রয়েছে নানা মত।
এলাকাবাসী বলছে, বগা লেক সৃষ্টি নিয়ে বম, মারমা, ম্রো, খুমি ও ত্রিপুরা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের পৌরাণিক কাহিনী বা কিংবদন্তি তথ্য রয়েছে। লোকমুখে জানা যায়, বগালেক ছিল একটি সমৃদ্ধ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ম্রো সম্প্রদায়ের গ্রাম। গ্রামের পাশে একটি সুড়ঙ্গে বড় আকারের সাপ বসবাস করতো। একদিন ওই সাপ ধরে গ্রামবাসী খেয়ে ফেলে। ওই সাপ খাওয়ায় নাগরাজার প্রতিশোধের কারণে গ্রামবাসীসহ গ্রামটি দেবে যায়, আর এ লেকের সৃষ্টি হয়। আর তাই এখনো অনেকেরই বিশ্বাস লেকের গভীরে থাকা নাগরাজ লেজ নাড়ালে পানি ঘোলা হয়ে যায়।
বগা লেক পাড়ার কারবারি মংথোয়াইচিং বাংলানিউজকে জানান, কয়েক বছর পরপরই বগা লেকের পানি পরিবর্তন হয়, আর এটা হলো আমাদের দেবতার আশীর্বাদ। স্বয়ং দেবতা তুষ্ট হয়ে আমাদের আনন্দ দিতে পানির রং পরিবর্তন করে এবং কয়েকদিন পরে তা আবার স্বাভাবিক আকার ধারণ করে। দেবতার উপস্থিতি জানান দিতেই এই রং পরিবর্তন বলেও দাবি এলাকার কারবারির।
স্থানীয় প্রশাসনের মতে, কেন নির্দিষ্ট একটি সময়ে বগা লেকের পানি ঘোলা হয়- তা বলা মুশকিল। তবে পানির গভীরে কোনো আলোড়ন সৃষ্টির কারণে অথবা কোনো জলজ উদ্ভিদ নির্দিষ্ট সময়ে মরে পচে পানি ঘোলা হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। এতে আতংকিত হওয়ার কিছুই নেই বলে জানান প্রশাসন।
বান্দরবান সরকারি কলেজের রসায়ন বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মোর্শেদ আলী বাংলানিউজকে বলেন, কী কারণে বগালেকের পানি ঘোলা হলো তা নিশ্চিত করে বলা মুশকিল, তবে আমার ধারণা মতে পানির গভীরে কোনো আলোড়ন সৃষ্টির কারণে অথবা কোনো জলজ উদ্ভিদ নির্দিষ্ট সময়ে মরে পচে পানি ঘোলা হতে পারে। তিনি আরো বলেন, এই বিষয়ে সঠিক তথ্য পেতে লেকের পানি গবেষণা করা দরকার।
এদিকে বান্দরবান জেলা প্রশাসানের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শামীম হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বগা লেক বান্দরবানের একটি সুন্দর প্রাকৃতিক পর্যটন এলাকা। প্রতিদিনই এ পর্যটন স্পটে প্রচুর পর্যটকের আগমন ঘটে। হঠাৎ করে লেকের পানি ঘোলা হওয়ায় বিষয় নিয়ে আমরা অবগত রয়েছি এবং এ বিষয়ে আরো জানার জন্য আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
শামীম হোসেন আরো বলেন, এই লেক একটি সুন্দর এলাকায় অবস্থিত, তাই আমি বগা লেকে ভ্রমণ করা পর্যটকদের প্রতি অনুরোধ করবো যাতে তারা ভ্রমণে গিয়ে লেকের আশপাশে কোন ময়লা আর্বজনা না ফেলে এবং লেকের সৌন্দর্য বিনষ্ট হয় এমন কাজ থেকে বিরত থাকে।
বান্দরবানের রুমা উপজেলা সদর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে রুমা-কেওক্রাডংয়ে নির্মাণাধীন সড়কের সাড়ে ১২শ ফুট উচ্চতায় প্রায় ১৫ একর জায়গাজুড়ে এই বগা লেকের অবস্থান। আর পাহাড়ের চূড়ায় মনোরম এই লেক দেখতে প্রতিদিনই শত শত পর্যটক সেখানে ভিড় জমায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৬ ঘণ্টা, ফ্রেব্রুয়ারি ১৮, ২০২০
এসএইচ