এ আন্দোলন পরবর্তী সকল সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক আন্দোলনে প্রেরণা যোগায়। এই সংগ্রামে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে প্রাণ দিয়েছেন সালাম, বরকত, রফিকসহ অনেকে।
বাঙালির এই অকুতোভয় ভাষা সৈনিকদের শ্রদ্ধা জানাতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। দেয়াল লিখন, আলপনা ও দেয়াল চিত্রে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় ফুটে ওঠেছে ১৯৫২ সালের সেই কঠিন দিনগুলোর আবহ।
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) প্রথম প্রহরেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী, কূটনৈতিকসহ সর্বস্তরের মানুষ।
বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকালে শহীদ মিনার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পুরো শহীদ মিনারকে নিরাপত্তা বেস্টনীর মধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে। র্যাব ও ডিএমপির পক্ষ থেকে বসানো হচ্ছে ‘ওয়াচ টাওয়ার’। যে কোনোধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। র্যাব ডগ স্কোয়াড দিয়ে পুরো এলাকা তল্লাশি করেছে। সমগ্র এলাকাকে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় এনে জনসাধারণকে সতর্ক করতে লাগানো হয়েছে ডিজিটাল সাইনবোর্ড। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ডান পাশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী মোতাহার হোসেন ভবন সংলগ্ন মাঠে র্যাব, ডিএমপি ও ফায়ার সার্ভিসের কন্ট্রোল রুম বসানো হয়েছে।
অপরদিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মূল বেদীসহ সম্মুখভাগে শেষ হয়েছে আলপনা আঁকার কাজ। এবারই প্রথম শহীদ মিনারের বামপাশের দেওয়ালে ভাষা আন্দোলনের বিভিন্ন চিত্রপট নিয়ে রংতুলি দিয়ে আঁকা হয়েছে অসাধারণ দেয়ালচিত্র। মূল বেদীর ঠিক বিপরীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ভবনের দেয়ালে লাল রং-এ লেখা হয়েছে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, কাজী নজরুল ইসলাম, সুকান্ত ভট্টাচার্য, শামসুর রহমান, আবুল ফজল, ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, জসীম উদ্দীন, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ, মুনীর চৌধুরী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জীবনানন্দ দাশ, দীজেন্দ্রলাল রায়, আবুল মনসুর আহমদ, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, অতুলপ্রাসাদ সেন, মাইকেল মধুসূদন দত্তসহ বিখ্যাত মনিষীদের ভাষা নিয়ে বিভিন্ন উক্তি।
অঙ্কনের কাজ সম্পাদন করা ওয়াল পেইন্টিং বিডির কর্মী ইমরান বাংলানিউজকে বলেন, ভাষা আন্দোলন আমাদের গৌরবের। এই কাজ করতে পারা আমাদের জন্য গর্বের।
ঘোষণা মঞ্চ থেকে প্রতিনিয়ত শব্দযন্ত্র পরীক্ষা করা হচ্ছে। পরিচ্ছন্ন কর্মীরা শহীদ মিনারকে ঝকঝকে রাখতে অনবরত কাজ করে চলছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম, র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ শহীদ মিনার এলাকা পরিদর্শন করেছেন। ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ভাবগাম্ভীর্য বজায় রাখার জন্য ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
উপাচার্য বলেন, বিগত বছরগুলোর মতো এবারও শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২০ সুষ্ঠুভাবে পালনের জন্য কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। সমন্বয় কমিটি গৃহীত সব কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নে তিনি সংশ্লিষ্ট সবার সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, শহীদ মিনারের বেদী কেন্দ্রীক প্রথম স্তর, শহীদ মিনারের বাইরে দ্বিতীয় স্তর, দোয়েল চত্বর-শাহবাগ-নীলক্ষেত-পলাশী-বকশীবাজার কেন্দ্রীক তৃতীয় স্তর ও এর বাইরে আরেক স্তর। এর মাধ্যমে শহীদ মিনারকে ঘিরে মোট চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে।
একুশে ফেব্রুয়ারিতে ঢাবির কর্মসূচি
শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার উদ্দেশ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়। আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালকে সমন্বয়কারী, সমিতির সহ-সভাপতি অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়াকে যুগ্ম-সমন্বয়কারী এবং প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানীকে সদস্য-সচিব করে অমর একুশে উদযাপন কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়। শিক্ষক সমিতি যথাযোগ্য মর্যাদায় অমর একুশে উদযাপনে প্রণীত রুটম্যাপ যথাযথভাবে অনুসরণে সকলের নিকট আহ্বান জানিয়েছে।
সমিতির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শহীদ মিনারে আগত প্রত্যেকেই একুশের চেতনাকে ধারণ করে ভাষা শহীদদের প্রতি যথাযথ প্রক্রিয়ায় শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। মহান একুশের ভাবগাম্ভীর্য বজায় রেখে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের জন্য আমরা দলমত নির্বিশেষে সকলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতর জানায়, ২১শে ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) সকাল ৬টা ৩০মিনিটে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে প্রভাতফেরি সহকারে আজিমপুর কবরস্থান হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গমন ও পুস্পস্তবক অর্পণ। বাদ জুম্মা অমর একুশে হলে শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাত, বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদুল জামিয়া, সকল হলের মসজিদ এবং বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকার মসজিদসহ অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে ভাষা শহীদদের রুহের মাগফেরাত/শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত/প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া, ঢাবি সংগীত বিভাগের উদ্যোগে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় টিএসসি মিলনায়তনে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২০
এসকেবি/এজে