বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে লালমনিরহাটের সিনিয়র সহকারী জজ আদালত মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নির্মাণ কাজ স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন।
এর আগে সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) নকশা পরিবর্তন করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পুনঃনির্মাণ কাজ নিয়ে লালমনিরহাট পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম রিন্টুকে ১০দিনের সময় দিয়ে শোকজ করেন একই আদালত।
আদালত ও লিগ্যাল নোটিশ সূত্রে জানা গেছে, লালমনিরহাট পৌরসভার সাপ্টানা মৌজার মাতৃমঙ্গল কেন্দ্রের পাশে ১৯৭২ সালে ১৪.৫০ শতাংশ জমির উপর সড়কের পাশে পশ্চিম মুখো দৃষ্টিনন্দন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই থেকে জেলাবাসী বিভিন্ন কর্মসূচি এ শহীদ মিনারে পালন করে আসছে। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশে আলিসান বাড়ি নির্মাণ করেন জেলার প্রভাবশালী শাখাওয়াত হোসেন সুমন খাঁন। যা শহীদ মিনারের কারণে দৃষ্টির আঁড়ালে পড়ে।
প্রভাবশালীর এই আলিসান বাড়িটি দৃষ্টিনন্দন করতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি স্থানান্তর করতে এবং পুনঃনির্মাণের নামে নকশা পরিবর্তন করে নির্মাণ কাজ শুরু করে পৌরসভা। ১৬ লাখ ৯০ হাজার ৯৩৭ টাকা ব্যায়ে পুনঃনির্মাণ করা শহীদ মিনারের মূল বেদী পরিবর্তন করে উত্তর-পূর্ব পাশে নেওয়া হচ্ছে। ফলে সড়কের চলাচলকারী সর্বসাধারণের দৃষ্টির আঁড়ালে চলে যাচ্ছে এবং দৃষ্টিহীন হয়ে জৌলুস ও মর্যাদা হারাচ্ছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার।
বিষয়টি নিয়ে জেলার সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে নিন্দার ঝড় ওঠে। পুনঃনির্মাণ কাজ বন্ধ করতে আন্দোলনে নেমে পড়েন জেলার বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ। সরকারের বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সৌন্দর্য ফেরাতে ব্যর্থ হয়ে লালমনিরহাট সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক সাংস্কৃতিক কর্মী সৈয়দ সুফী মো. তাহেরুল ইসলাম আদালতের দারস্থ হন। যার পরিপ্রেক্ষিতে অ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমান হাফিজ শহীদ মিনার পুনঃনির্মাণ কাজ বন্ধ করতে ১৩ ফেব্রুয়ারি তিন দিনের সময় দিয়ে পৌরসভার মেয়রকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। সময় অতিবাহিত হলেও জবাব দাখিল না করে নির্মাণ কাজ চলমান রাখেন পৌরসভার মেয়র রিয়াজুল ইসলাম রিন্টু।
এ ঘটনায় দ্রুত কাজ বন্ধ করতে লালমনিরহাট সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক সাংস্কৃতিক কর্মী সৈয়দ সুফী মো. তাহেরুল ইসলাম বাদী হয়ে সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলা (৩০/২০২০) দায়ের করেন। মামলাটি আমলে নিয়ে আদালতের বিচারক আগামী ১০দিনের মধ্যে 'কেন নির্মাণ কাজে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞ দেওয়া হবে না' মর্মে উপযুক্ত ব্যাখ্যা চেয়ে পৌর মেয়রকে শোকজ নোটিশ দেন।
শোকজের জবাব দাখিলের আগেই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন শেষে ২২ ফেব্রুয়ারি শহীদ বেদী ভেঙে ফেলার আশঙ্কায় বাদী পুনরায় আদালতের দারস্থ হন। শোকজের জবাব দাখিল না করা পর্যন্ত শহীদ মিনার পুনঃনির্মাণ কাজে স্থগিতাদেশ চেয়ে বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) আদালতে আবেদন করেন বাদী লালমনিরহাট সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক সাংস্কৃতিক কর্মী সৈয়দ সুফী মো. তাহেরুল ইসলাম। আবেদনটি বিবেচনায় নিয়ে আদালত বৃহস্পতিবার শুনানির দিন ধার্য করেন। সেই অনুযায়ী বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) শুনানি শেষে মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শহীদ মিনার পুনঃনির্মাণ কাজে স্থগিতাদেশ জারি করেন আদালত।
মামলার বাদী লালমনিরহাট সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক সাংস্কৃতিক কর্মী সৈয়দ সুফী মো. তাহেরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, মামলা করায় একটি মহল আমার ও আমার পরিবারের ক্ষতিসাধনের অপচেষ্টা করছে। এতে পরিবারসহ আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
জজ আদালতের আইনজীবী অ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমান হাফিজ বাংলানিউজকে বলেন, বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানি শেষে আদালত কাজের স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। মামলাটি চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নির্মাণ কাজ সমূলে স্থগিত রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত।
লালমনিরহাট পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম রিন্টুকে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কয়েক দফায় ফোন করেও তিনি রিসিভ করেননি।
**লালমনিরহাট পৌর মেয়রকে লিগ্যাল নোটিশ
**লালমনিরহাট পৌর মেয়রকে এবার আদালতের শোকজ
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২০
এসএইচ