ঢাকা, বুধবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

‘পরিবেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, নারীদের কাজে লাগানো উচিত’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪১ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০২০
‘পরিবেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, নারীদের কাজে লাগানো উচিত’

ঢাকা: ‘মেয়েরা ’৮২ সালে প্রথম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে এসেছে, এর আগে আসতেই পারত না। এখন সব ক্ষেত্রে এগোচ্ছে নারীরা। প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছাও তাই। মেয়েরা পিছিয়ে থাকলে দেশও এগোতে পারবে না।’

পরিবার, সমাজ কিংবা দেশ এগিয়ে নিতে হলে নারী-পুরুষের যে সমান অবদান থাকতে হয়- সে কথাই স্মরণ করিয়ে দিয়ে আন্তর্জাতিক নারী দিবস নিয়ে কথা শুরু করেন ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম।

বর্তমানে তিনি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন, রয়েছেন বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের নারী কর্মকর্তাদের সংগঠন ‘বিসিএস উইমেন নেটওয়ার্ক’র সভাপতির দায়িত্বেও।



বর্তমানে প্রশাসনে হাতে গোনা কয়েকজন নারী সচিব বা সচিব পদমর্যাদায় আছেন। সংসার সামাল দিয়ে নানা প্রতিবন্ধকতা জয় করে নারীরা চাকরি বা প্রশাসনেও কীভাবে আসীন হয়েছেন তার পেছনের গল্প বলছিলেন নাজমানারা খানুম।

সামাজিক প্রকিবন্ধকতাও নারীদের পেছনে টেনে ধরে, তবুও সরকারের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রায় রয়েছে নারীর অবদান। মাঠ পর্যায়ের কয়েক ধাপ পেরিয়ে প্রশাসনেও চাকরির অভিজ্ঞতা নিয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে আসীন হয়েছেন এই সচিব।

বলছিলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের নারীদের জন্য অনেক ক্ষেত্র অবারিত করে দিয়েছেন, যেখানে সুযোগ পাচ্ছেন নারীরা। তিনি নারী কর্মকর্তাদের যোগ্যতা অনুসারে বসানোর চেষ্টা করছেন। নারী কর্মকর্তারা যোগ্যতা অনুযায়ী পদায়ন সব সময় পান না, একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছা এবং দিক নির্দেশনায় আমরা সেই সুযোগ পাচ্ছি।
‘তিনি যে সুযোগ দিচ্ছেন, এই সুযোগটা যথাযথভাবে কাজে লাগো উচিত। ভবিষ্যতে যাতে আরো বেশি বেশি সুযোগ পাই, এ ধরনের পদ অলংকৃত করতে পারি আমরা, তাদেরও উৎসাহ দেই। ’

নাজমানারা খানুম বলছিলেন, এই সরকার চায় নারীরা এগিয়ে যাক। এখন সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশে নারীরা এগিয়ে আসছে। নারীরা এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রিন্সিপাল, স্কুলের প্রধান শিক্ষক, বিচারপতি হচ্ছেন; সব ক্ষেত্রে এগোচ্ছেন। স্কুলেও নারীদের ইনরোলমেন্ট ৫০ শতাংশের বেশি। মেয়েরা পিছিয়ে থাকলে দেশও এগোতে পারবে না।

নারীরা সামাজিক প্রতিবন্ধকতা অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে জানিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠে যেন কাজ করতে পারি সেজন্য প্রধানমন্ত্রী পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন। অনেক ক্ষেত্রে আমরা নিজেরাই নিজেদের প্রতিবন্ধকতায় পড়ে যাই। যেমন- ছোট বাচ্চাকে রেখে ভালো পদে দিলেও যেতে হেজিটেড (দ্বিধা) করে। এই প্রতিবন্ধকতা সারা বিশ্বেই। অন্যান্য দেশে স্বামী-স্ত্রী শেয়ার করে কাজ করে বটে, তবে সিংহ ভাগই নারীদের ওপর।

‘উন্নত দেশে নারীরা হয় চাকরি ছেড়ে দিচ্ছে, না হয় বিয়ে করছে না, বাচ্চা নিচ্ছে না। কিন্তু আমাদের দেশে সামাজিক অবস্থার মধ্যে কাজের লোক পাওয়া যাচ্ছে। তবে ভবিষ্যতে কাজের লোক আর পাওয়া যাবে না। এরমধ্যে কীভাবে টিকে থাকবো, কীভাবে যোগ্যতা-অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবো’, সেই প্রশ্ন তোলেন এই নারী।

তবে তার মতে, শীর্ষ পদে যেতে নারীদের জন্য এখনও সামাজিক প্রতিবন্ধকতা আছে।

‘পরিবারের বা গৃহস্থলীর কাজ নারীকেই সামলাতে হয়, কাজের লোক হোক বা নিজেকে দিয়েই হোক। সেক্ষেত্রে দায়িত্বশীল পদে যেতে নারীদের মধ্যে হেজিটেশন কাজ করে যে, যথাযথ ইন্ট্রিগেটি, ইফিসিয়েন্সি বা দক্ষতা বজায় রেখে করতে পারবে কিনা। ’

নানা বাধা-বিপত্তির মুখেও শীর্ষ পদে আসীন হওয়ার পেছনের গল্প নিয়ে খাদ্য সচিব বলেন, অনার্স পড়া অবস্থায় আমার বিয়ে হয়। প্রথম বাচ্চা হয় বিসিএস চাকরিতে ঢোকার আগেই। দুই মেয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাস করে এখন ডাক্তার।

‘পরিবারের সমর্থন ছাড়া এটা কোনোদিন সম্ভব ছিল না। আমার এই পর্যায়ে আসার পেছনে স্বামীর যথেষ্ট সমর্থন ছিল। বাচ্চারাও যখন বুঝতে শিখেছে তারা সমর্থন দিয়েছে। এক বাচ্চার বয়স চার বছর, আরেক বাচ্চা তখন সাত বছর। তাদের রেখেই জাপানে সাড়ে চার বছর পড়াশোনা করেছি। এই স্ট্রাগল করতে পারে না সবাই। ’

নারীর অগ্রযাত্রায় নিজেদেরও প্রস্তুতি প্রয়োজন জানিয়ে বিসিএস উইমেন নেটওয়ার্কের সভাপতি নাজমানারা বলেন, দায়িত্ব দিয়ে সরকার যদি আস্থা রাখতে পারে তাহলেই দেবে।

নারীদের জন্য বিশেষ করে নারী ক্যাডারদের জন্য নেটওয়ার্ক থেকে নানা রকমের সচেতনতামূলক কাজ করা হয়।  

‘এক্ষেত্রে তাদের মধ্যে যে ভয় কাজ করে তা কাটানোর চেষ্টা করি। প্রোপার ম্যানেজমেন্টে কাজ করতে পারলে সংসারও সামাল দিতে পারবা, অফিসও সামলাতে পারবা। ’

নেটওয়ার্কের পর্যবেক্ষণে নারীদের প্রতিবন্ধকতা নিয়ে নাজমানারা খানুম বলেন, আমাদের প্রতিবন্ধকতা বলতে সেভাবে কিছু নাই, এখন আমরা সাবলীলভাবে সামনে এগিয়ে যাচ্ছি। এখন বিসিএসে অনেক এগিয়ে যাচ্ছে। আগে মাঠ পর্যায়ে একজন নারী ইউএনও খুঁজে পাওয়া যেত না, এখন এক জেলাতেই সব নারী। কিশোরগঞ্জে সবাই নারী ছিল।

নারী বিসিএস ক্যাডারের কর্মকর্তাদের কাজের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, কর্মস্থলে কাজের ক্ষেত্রে, এসডিজি অর্জনের জন্য তারা কতটুকু প্রস্তুত। অন্যান্য ক্যাডারের নারীরা উন্নয়নের সঙ্গে কতটুকু খাপ খাইয়ে নিতে পারে- তা দেখতে হবে আমাদের।  

‘আমরা চাই নারীরা যাতে পিছিয়ে না থাকে। তারা যেন সমানভাবে এগিয়ে থাকে, যাতে তারা নিজেদের প্রিপিয়ার্ড করতে পারে, ভবিষ্যতে বড় পদে যেতে কোনো বাধা সৃষ্টি না হয়। যোগ্যতা ও দক্ষতা নিয়ে এগিয়ে যেতে পারে- সেজন্য আমরা মোটিভেশন করি। পাশাপাশি বন্যার সময় ত্রাণ বিতরণ, শীতার্তদের জন্য শীতবস্ত্র বিতরণের মতো কিছু মানবিক কাজও করা হয়। ’

‘নারীদের প্রশাসন ক্যাডারে আনতে মোটিভেশন, মিটিং করে তাদের উৎসাহ দেই। তারাও ভালো রেসপন্স দিচ্ছে,’ বলেন বিসিএস উইমেন নেটওয়ার্কের সভাপতি নাজমানারা।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০২০
এমআইএইচ/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।