ঢাকা, বুধবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

মুহূর্তেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার!

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১৯ ঘণ্টা, মার্চ ৯, ২০২০
মুহূর্তেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার!

লালমনিরহাট: ছোট বোনকে নিয়ে রাতের খাবার খাচ্ছিলাম। হঠাৎ কালোধোঁয়াসহ ঝড় এসে চোখের সামনে ঘরটি উড়িয়ে নিয়ে ফেললো গাছের মগডালে। পাশের রান্না ঘরে আটকা মায়ের চিৎকারে দৌঁড়ে গিয়ে বেড়া ভেঙে মাকে উদ্ধার করি। দেখতে না দেখতেই সব কিছু উড়ে গেলো।

রোববার (০৮ মার্চ) দুপুরে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার বড় কমলাবাড়ি বাদিয়াচওড়া গ্রামে টর্নেডোর ছোবলের বর্ণনা দিতে গিয়ে কথাগুলো বলছিল কিশোর রুবেল ইসলাম (১৩)।

এর আগে শনিবার (০৭ মার্চ) রাত ৮টার দিকে ওই বাদিয়া চওড়া গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া টর্নেডোর আঘাতে প্রায় অর্ধশত ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

কিশোর রুবেল ইসলাম ওই গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে। সে স্থানীয় চড়িতাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্র।

টর্নেডোর বর্ণনা দিতে গিয়ে কিশোর রুবেল ইসলাম বাংলানিউজকে জানায়, হালকা বৃষ্টির সময় ঘরে বসে ছোট বোন রুমা আক্তারসহ (৬) রাতের খাবার খাচ্ছিল রুবেল। এসময় হঠাৎ করে কালোধোঁয়াসহ একটি ঝড় এসে তাদের ঘরটি উড়িয়ে নিয়ে যায় গাছের মগডালে। পাশের রান্না ঘরটি পড়ে গিয়ে আটকা পড়ে তার মা। মায়ের চিৎকারে ছুটে গিয়ে বেড়া সরিয়ে মাকে উদ্ধার করে বাড়ির তিন জনই বাঁচতে ছুটে যায় পাশের বাড়িতে। এদিকে বাড়ির বৈদ্যুতিক তার ছিড়ে আগুনের লেগে যায়। বাড়ির জিনিসপত্র বাতাস উড়িয়ে নিয়ে গেছে। মুহূর্তেই সব তছনছ হয়ে গেছে।

টর্নেডোর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর।  ছবি: বাংলানিউজ

রুবেলের ছোট বোন স্থানীয় কিল্ডারগার্টেনের শিক্ষার্থী রুমা আক্তার আঘাত পেলেও সেটা নিয়ে তার কোনো মাথা ব্যাথা নেই। তার পড়ার সব বই-খাতা বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হওয়ায় বেশ কান্না করছিল সে। যে বইগুলো সে খুঁজে পেয়েছে সেগুলো রোদ শুকাচ্ছিল সে।

এক মিনিটের এ টর্নেডোর ছোবলে ওই গ্রামের ৩৬টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে ৭টি সম্পূর্ণ ও ২৯টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে সরকারিভাবে নিশ্চিত করা হয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আংশিক ক্ষতিগ্রস্তদের কেউ কেউ ঘরবাড়ি মেরামত শুরু করেছেন। তবে বেশির ভাগ ক্ষতিগ্রস্তরা রয়েছেন খোলা আকাশের নিচে। ক্ষতিগ্রস্তদের অধিকাংশই দিনমজুর।

শনিবার রাতেই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক আবু জাফর, অতিরিক্তি জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রফিকুল ইসলাম, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনসুর উদ্দিন ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মফিজুল ইসলাম। এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে চাল, ডাল, চিনি, লবনসহ শুকনো খাবার প্যাকেট ও কম্বল দেওয়া হয়। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে টিন ও নগদ অর্থ সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়।

আদিতমারী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে দুই সপ্তাহের জন্য শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় টিন ও নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন>> আদিতমারীতে টর্নেডোর ছোবলে অর্ধশত বাড়িঘর লণ্ডভণ্ড

বাংলাদেশ সময়: ০৩১৯ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০২০
এইচএডি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।