তবে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে তারা এর বিকল্পও পাচ্ছেন না। এ অবস্থায় কি ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও তেমন কিছু ভাবেননি।
ঢাকার মহানগর ও জেলার জুডিসিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এবং দায়রা আদালতকে ঘিরে প্রতিদিন হাজার হাজার মানষের আগমন ঘটে পুরান ঢাকার আদালতপাড়ায়। দেশের প্রান্তিক শ্রেণী থেকে শুরু করে সব পর্যায়ের মানুষই এখানে আসেন বিচারপ্রার্থী হিসেবে। প্রতিদিন কারাগার থেকে বিপুল সংখ্যাক আসামিকেও হাজির করা হয় এসব আদালতে। সেসব আসামির স্বজনরাও ভিড় করেন আদালতপাড়ায়।
এ অবস্থায় আইনজীবীসহ পেশাগত কারণে যারা প্রতিদিন আদালতে যান তাদের পক্ষে এই জনসমাগমকে উপেক্ষা করা অসম্ভব। তাই আইনজীবী, আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিতদের অনেকেই এ অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন।
তারা মনে করেন করোনা আতঙ্ক না থামা পর্যন্ত ক্রান্তিকালীন ব্যবস্থা নিলে জনসমাগম কিছুটা কমানো সম্ভব। বিশেষ করে যেসব আসামিকে কারাগার থেকে শুধু হাজিরার জন্য আদালতে আনা হয়, তাদের আপাতত আদালতে হাজির করা থেকে বিরত রাখা যায়। তাতে সেসব আসামির স্বজনরাও আদালত এলাকায় ভিড় করবে না। এছাড়া জামিনে থাকা আসামিদেরও শুধু হাজিরার জন্য এক থেকে দু’টি তারিখ এজলাসে নেওয়া থেকে বিরত রাখলেও ভিড় কিছুটা এড়ানো যায়।
সকাল বেলা ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে যেসব মানুষ ভিড় তাদের বেশিরভাগই মামলার হাজিরা দিতে আসেন। তাই হাজিরার বিষয়টি আপাতত শিথিল করা হলে জনসমাগম অনেকটাই কমে আসবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়াও জরুরি প্রয়োজনে অনাহূত মানুষের এজলাস কক্ষ ও আদালত ভবনে প্রবেশ করা থেকে বিরত রাখাসহ অন্যকোনো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নেওয়ার দাবি তাদের।
ঢাকার আদালতে নিয়মিত প্র্যকটিস করেন অ্যাডভোকেট কাউসার আহমেদ। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, করোনা আতঙ্ক না থামা পর্যন্ত এ সময়ে কিছুদিন আসামিদের হাজিরার বিষয়টি শিথিলের চিন্তা করতে পারে বিচার প্রশাসন।
হাজিরার জন্য আসা কারাবন্দি আসামিদের একত্রে কোর্ট হাজতে রাখা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক বা গ্রেফতার আসামিদেরও আদালতে তোলার আগে পরে রাখা হয় কোর্ট হাজতে। বিভিন্ন কারাগারের বিপুল সংখ্যক আসামিকে এভাবে একত্রে রাখাও স্বাস্থ্যগতভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। তবে কর্তৃপক্ষের এ নিয়ে কোনো ভাবনা নেই।
হাজতি আসামিদের নিয়ে কোনো সতর্কতামূলক নির্দেশনা নির্দেশনা পাননি বলে জানিয়েছেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত হাজতের ওসি মইনুল ইসলাম। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে সাধারণ নির্দেশনার বাইরে আলাদা করে সতর্কতা অবলম্বনের ব্যাপারে আমাদের কিছু বলা হয়নি।
তবে পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) জসীম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কাছে নির্দেশনা না আসলেও আমরা সংশ্লিষ্টদের ভিড় এড়িয়ে সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে বলছি। বিশেষ করে মাস্ক পরিধান, হ্যান্ডসেক থেকে বিরত থাকা ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অবলম্বন করতে বলছি। তবে আদালত এলাকার সামগ্রিক পরিস্থিতির কারণে সতর্কতা অবলম্বন করে চলাও একপ্রকার অসম্ভব।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে কীভাবে আদালতে ভিড় এড়ানো যায় বা কী ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সে বিষয়ে এখনো ভাবেননি আইনজীবী সমিতির নেতারা।
জানতে চাইলে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ইকবাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, নির্বাচিত হওয়ার পর আজই (সোমবার) ছিল আমাদের প্রথম কর্মদিবস। যেহেতু করোনা ভাইরাস আমাদের দেশেও ধরা পড়েছে, তাই এটা নিয়ে নিশ্চয়ই আমাদের ভাবতে হবে। সামনে কমিটির অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০১১০ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০২০
কেআই/এসআরএস