মঙ্গলবার (১০ মার্চ) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ডিপ্লোমেটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিক্যাব) আয়োজিত 'ওমেন লিডারশিপ ইন বাংলাদেশ: চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড ওয়ে ফরোয়ার্ড' শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে প্রথম ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারী নেতৃত্বকে পুরুষের সমান সুযোগ দিয়েছেন।
সাংবাদিকতায়ও নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির বিষয়ে শাহরিয়ার আলম বলেন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন যখন সাংবাদিকতা শুরু করেছিলেন, তখন কতজন নারী সাংবাদিক ছিলেন। আর আজকে এত অভাব অভিযোগের পরও সেই সংখ্যাটা হিসাব করে দেখুন, অন্তত দ্বিগুণ সংখ্যক নারী সাংবাদিকতায় এসেছেন।
শাহরিয়ার আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার সরকারি কর্মকর্তা থেকে শুরু করে দলেও নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যন্ত দলে ৩০ শতাংশ নারী কর্মী নিশ্চিত করা হয়েছে। এর বাইরেও আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুব মহিলা লীগ রয়েছে। রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ নারীর ক্ষমতায়নে সবার আগে এগিয়ে এসেছে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, গত এক দশকের হিসাব করলেও দেখা যাবে, পুরুষের সমান সংখ্যক নারী সরকারি চাকরি করছেন। অনেক নারী সচিব রয়েছেন। ভবিষ্যতে নারী কর্মকর্তাদের হার পুরুষের চেয়ে বৃদ্ধি পাবে। আপনারা যদি খেয়াল করেন, দেখবেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা ভালো ফলাফল করেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিতির হারও মেয়েদের বেশি। যদিও উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে মেয়েরা একটু পিছিয়ে রয়েছে।
তিনি বলেন, ভবিষ্যতে গবেষণার জন্য হালনাগাদ তথ্য ব্যবহার করলে আশা জাগানিয়া অনেককিছু পাওয়া যাবে। আবার না-ও পেতে পারি। কারণ আমরা অনেক সময় অনেক কিছু পিচ করি। পিচ করতে ভালোবাসি।
শাহরিয়ার আলম আরও বলেন, শেখ হাসিনা নারীর ক্ষমতায়ন যে জায়গায় নিয়ে এসেছেন, তিনি ক্ষমতায় না থাকলে, আমরা যদি তালেবান শাসিত আফগানিস্তানকে উদাহরণ হিসেবে বিবেচনা করি, তাহলে বাংলাদেশ সেই অবস্থানে থাকতো।
তিনি আরও বলেন, আপনার বাড়িতে মা-বোন, স্ত্রীরা যে কাজটি করেন, আপনারা কেন করেন না, আমি সেটা বুঝতে পারি না। শেখ হাসিনা দলীয় সভা, অভ্যন্তরীণ বৈঠক ছাড়াও সবক্ষেত্রে নারীদের অগ্রাধিকার দিয়ে আসছেন। কোনো কাজের জন্য পাঁচজনের একটি তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কাছে গেলে, সেখানে একজন নারী থাকলে দায়িত্ব নিয়ে শেখ হাসিনা ওই নারীকে নির্বাচন করে উদাহরণ সৃষ্টি করেন।
অনুষ্ঠানে সুইডেনের রাষ্ট্রদূত চার্লোটা স্লাইটার বলেন, নারীর ক্ষমতায়নে বাধা-বিপত্তি আমাদের দেশে রয়েছে। তবে আমাদের দেশে নারীর ক্ষমতায়নসহ অন্যান্য বৈষম্য নিরসনে গ্রহণ করা পলিসি খুব শক্তিশালী হওয়ার কারণে বৈষম্যটা অনেক কম। তাই বলব, নারী-পুরুষের সমতা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রের পলিসি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্য দূরীকরণে গণমাধ্যমও ভূমিকা পালন করতে পারে। এতে গণমাধ্যম ছাড়াও অন্যান্য কর্মক্ষেত্রে নারী পুরুষের সমতা নিশ্চিত হতে পারে।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, নারীর শক্তিতে তার নিজের উপলব্ধি করতে হবে। উপলব্ধি করতে পারলেই কেউ আমাদের দাবিয়ে রাখতে পারবে না। যত বাধা-বিপত্তি আসুক আমরা অতিক্রম করে এগিয়ে যাব। সমাজের প্রতি অনুরোধ আমাদের সহযোগিতা করতে না পারলেও অসহযোগিতা করো না। টেনে ধরার চেষ্টা করো না।
ডিক্যাব সভাপতি আঙ্গুর নাহা মন্টির সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তব্য দেন, সংগঠনের যুগ্ম-সম্পাদক মিজানুর রহমান, সাবেক সভাপতি মাঈনুল আলম, নির্বাহী সদস্য ইশরাত জাহান উর্মি, রাশেদ মেহেদী, শাহিদুল ইসলাম চৌধুরী, ইউএন ওমেন কান্ট্রি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর শোকো ইশিকাওয়া, দৈনিক ইত্তেফাক সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাবরিনা সুলতানা চৌধুরী প্রমুখ।
ওমেন লিডারশিপ ইন বাংলাদেশ: চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড ওয়ে ফরোয়ার্ড শীর্ষক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ইন্ডিপেনডেন্ট জার্নালিস্ট ও মিডিয়া অ্যানালিস্ট শামীম আরা শিউলী।
এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মিজারুল কায়েসের স্মরণে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৫ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০২০
এসই/টিএ