১৯৬৭ সাল থেকে নিয়মিতভাবে রমনা উদ্যানের অশত্থ গাছের নিচে (যা বটমূল নামে পরিচিত) আয়োজিত হয়ে আসছে ছায়ানটের পহেলা বৈশাখ উদযাপনের আয়োজন। ’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বছরটি বাদে নিয়মিতভাবে চলে রাজধানীবাসীর পহেলা বৈশাখ উদযাপনের প্রধান এ আয়োজনটি।
তবে করোনা ভাইরাস সংক্রামণের ভয়ে যেকোনো ধরনের জনসমাগম বন্ধ রাখার অনুরোধ করেছে সরকার। এ কারণে ছায়ানটের প্রভাতী আয়োজন না হওয়ার সম্ভাবনা দেখা গেছে। তবে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটলে আগের মতো করেই আয়োজন করা হবে।
এ বিষয়ে ছায়ানটের সহ-সভাপতি খায়রুল আনাম শাকিল বাংলানিউজকে বলেন, আমরা আমাদের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছি। তবে থিম এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। একইসঙ্গে মহড়াও শুরু করিনি।
তিনি বলেন, ছায়ানট গানের মাধ্যমে সবসময় মানুষের জয়গান গেয়েছে। করোনার কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত। তাই আমরা আয়োজন নিয়ে ভাবছি না। মানুষের মধ্যে সমস্যা সৃষ্টি করে আয়োজন আমরা করবো না।
বিকল্প ব্যবস্থা ভাবা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা পরিস্থিতি উন্নতির আশা করছি। যদি তা না হয় প্রয়োজনে আমরা পুরো আয়োজনটি রেকর্ড করে পহেলা বৈশাখের সকালে টেলিভিশনের মাধ্যমে প্রচার করবো। আমাদের ইচ্ছা রমনা বটমূলেই রেকর্ড করার। তা না হলে আমাদের নিজস্ব মিলনায়তনে রেকর্ড করা হবে।
’৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের আয়োজনে প্রথমবারের মতো মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। নিরবচ্ছিন্নভাবে চলা এ আয়োজনে এখন পহেলা বৈশাখের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ। যা ’১৬ সালে ইউনেস্কোর অস্পর্শনীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় যুক্ত হয়।
করোনার কারণে এ আয়োজনটি হওয়া না হওয়ার বিষয়ে এখনো পর্যন্ত চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। ছায়ানেটের মতোই প্রয়োজনে বিকল্প ব্যবস্থায় মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজনের চিন্তা করছে আয়োজক কর্তৃপক্ষ।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদের ডিন নিসার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের একটি দাবি শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়পক্ষেরই আছে। এ বিষয়ে এখনো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। যদি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হলে মঙ্গল শোভাযাত্রার বিষয়ে আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে। প্রয়োজনে শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে যেসব অনুষঙ্গ বানাতে পারে সেগুলো নিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।
‘মঙ্গল শোভাযাত্রা করা হয়, মানুষের জন্য। যদি পহেলা বৈশাখের দিন মানুষই না থাকেন, তাহলে কাদের জন্য এ শোভাযাত্রা বের করবো?’
বিকল্প ব্যবস্থার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা আয়োজনটি বাদ দেবো না। প্রয়োজনে স্বল্প আকারে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রদক্ষিণ করে ফিরে আসা হবে। যদি অনুমতি না পাওয়া যায়, তাহলে মঙ্গল শোভাযাত্রাটি রেকর্ড করে টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচার করা হবে।
এদিকে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি অনুকূলে না এলে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে না সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। সংগঠনটি প্রতিবছর ধানমন্ডি রবীন্দ্র সরোবরে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে।
এ বিষয়ে জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, অনুষ্ঠান জীবনের চেয়ে বড় না। মানুষের প্রতি সহমর্মিতা দেখিয়ে আমরা পহেলা বৈশাখের কোনো আয়োজন করবো না। যদি পরিস্থিতি অনুকূলে আসে তাহলে আমরা অনুষ্ঠান করবো।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২০
ডিএন/এএটি