ঢাকা, শুক্রবার, ৯ মাঘ ১৪৩১, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মেঘনা দখল করেই যাচ্ছে মডার্ন গ্রুপ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০২০
নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মেঘনা দখল করেই যাচ্ছে মডার্ন গ্রুপ

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয় নুনেরটেক গ্রামের পাশে মেঘনা নদী দখল করছে মডার্ন গ্রুপ নামের একটি কম্পানি। নদী দখলের সত্যতা পেয়ে ওই কম্পানির সব ধরনের কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন, কিন্তু প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে নদী দখল অব্যাহত রেখেছে তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মডার্ন গ্রুপ মেঘনা নদী দখল করে জেটি নির্মাণ অব্যাহত রাখায় গত ৩ মার্চ অ্যাডভোকেট মো. মহিউদ্দিন উচ্চ আদালতে একটি রিট করেন। ওই রিটের প্রেক্ষিতে গত ১০ মার্চ আদালত সোনারগাঁ উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং দখলকারী প্রতিষ্ঠান মডার্ন গ্রুপকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন।

মেঘনা নদী দখল বন্ধে প্রশাসন কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না, এ মর্মে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলেছেন আদালত। এ ছাড়া মেঘনা নদী দখল বন্ধ রাখতেও নির্দেশনা দেওয়া হয়, কিন্তু আদালতের এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মডার্ন গ্রুপ নদী দখল অব্যাহত রেখেছে।

আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ফের মেঘনা নদী দখল করে মডার্ন গ্রুপ জেটি নির্মাণ করছে। এর আগে সোনারগাঁ উপজেলার বারদী ইউনিয়নের নুনেরটেক এলাকার পার্শ্ববর্তী চর হাজী মৌজায় নদীটির এই অংশে কম্পানিটি প্রায় ৭০ বর্গফুট জায়গা দখল করে একটি জেটি নির্মাণ করে। পরে প্রশাসনের বাধার মুখে কিছুদিন কাজ বন্ধ থাকে। সেই কাজ এখন আবার শুরু করেছে তারা। আর আগের জেটির পাশে জায়গা দখল করে কম্পানিটি আরেকটি জেটি নির্মাণ কাজ শুরু করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, উপজেলার বারদী ইউনিয়নের মেঘনা নদী এবং এর তীরবর্তী চর হাজী মৌজার প্রায় ২৩০ বিঘা জমিতে গজারিগাছ ও বাঁশ পুঁতে নদী, নদীর পাশের সরকারি জমি ও ব্যক্তিমালিকানার জমি অবৈধভাবে দখল করছে মডার্ন গ্রুপ। নুনেরটেক ও বারদীর প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সহায়তায় প্রভাব খাটিয়ে কম্পানিটি নদী ও নদীর তীরবর্তী কৃষকদের কৃষিজমি দখল করছে বলে অভিযোগ করে স্থানীয়রা।

সরেজমিনে নুনেরটেক গিয়ে দেখা যায়, নুনেরটেকের চর হাজী মৌজার দুই পাশ দিয়ে বয়ে চলা নদী, নদীর ফোরশোর লাইন, খাস ও মালিকানা জমির ওপর ভেকু দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। ৫০-৬০ জন শ্রমিক নদীর পারে তাঁবু খাটিয়ে কাজ করছে। নদীর তীরে সুরক্ষা দেয়াল নির্মাণের জন্য ইট, রড, সিমেন্ট, বালু জড়ো করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শ্রমিক জানান, তাঁরা সবাই মডার্ন কম্পানির ডকইয়ার্ড নির্মাণ করছেন। নদী থেকে বড় বড় জাহাজ যাতে ওপরে উঠতে পারে তার জন্য স্লিপার তৈরির কাজ চলছে। এ জন্য নদীর তীর থেকে প্রায় ২০০ মিটার পর্যন্ত যেতে হবে, তা না হলে স্লিপার দিয়ে জাহাজ উঠানো সম্ভব হবে না।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক মোতালেব মুন্সী বলেন, ‘আমার নদীপারের সাড়ে ছয় বিঘা, ভাইয়ের সাড়ে প্রায় ১০ বিঘা জমিতে বাঁধ নির্মাণ করে জোর করে দখলে নিয়েছে মডার্ন গ্রুপ। এসি ল্যান্ড এসে কাজ বন্ধ করার পর কম্পানির পক্ষে এলাকার প্রভাবশালীরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। নামমাত্র মূল্যে জমি বিক্রি করতে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। ’

চেঙ্গাকান্দি গ্রামের ভুক্তভোগী কৃষক চাঁন মিয়া জানান, তাঁর প্রায় পাঁচ বিঘা জমি মডার্ন গ্রুপ স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহায়তায় জোর করে দখল করে নিয়েছে। বাধা দেওয়ার পরও তারা কিছু শুনছে না।

একই গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে খাজা মিয়ার চার বিঘা জমি দখলেরও অভিযোগ পাওয়া গেছে। খাজা মিয়া প্রবাসী হওয়ায় তাঁর আত্মীয়-স্বজনের বাধা উপেক্ষা করে জমি দখল করছে কম্পানিটি। খাজা মিয়ার আত্মীয়রা জানান, নুনেরটেকের আবুল হাশেম এবং বারদীর আলী হোসেনের নেতৃত্বে জমি দখল করছে মডার্ন গ্রুপ।

জিজ্ঞেস করলে অভিযুক্ত আবুল হাশেম বলেন, ‘আমি কারো জমি জোর করে দখলের সঙ্গে জড়িত নই। ’ 

মডার্ন গ্রুপের প্রতিনিধি জলিল মিয়া বলেন, ‘আমাদের কাগজপত্র প্রসেসিংয়ে আছে। আমরা সরকারি খাসজমি ও নদী দখলের সঙ্গে যুক্ত নই। ’ কাগজপত্র জমা দিয়ে অনুমতির অপেক্ষা না করে কেন নদীতে গজারিগাছ ও বাঁশ পুঁতে দখল করা হচ্ছে—এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি মোবাইল ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

সোনারগাঁ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আল মামুন বলেন, ‘নদী দখলে মডার্ন গ্রুপের সম্পৃক্ততা পেয়ে ডিমারগেশন লাইন টেনে লাল পতাকা উড়িয়ে কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। যাচাইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আসতে বলা হলেও কম্পানির পক্ষে কেউ এখনো যোগাযোগ করেনি। ’ 

সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি মাত্র সাত দিন হয় সোনারগাঁয় যোগদান করেছি। মডার্ন গ্রুপের দখলের বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইতিমধ্যে কম্পানির সব ধরনের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। এক ইঞ্চি নদীও কাউকে দখল করতে দেওয়া হবে না। এ ব্যাপারে প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। যেসব কৃষকের জমি দখল করা হয়েছে তারা আমাকে লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা তাদের জমি উদ্ধারে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করব। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০২০
নিউজ ডেস্ক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।