ঢাকা, শুক্রবার, ১০ মাঘ ১৪৩১, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

করোনায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় সাধারণ মানুষ 

শাওন সোলায়মান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫০ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০২০
করোনায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় সাধারণ মানুষ 

ঢাকা: সংক্রমণের পর বাংলাদেশে মৃত্যুর ছোবলও হেনেছে করোনা ভাইরাস। দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম এক ব্যক্তির মৃত্যু সংবাদ প্রকাশের পর থেকে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের মধ্যে এ ভাইরাস নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা আর দ্বিধা। প্রতিদিনই করোনায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে শঙ্কা।

বুধবার (১৮ মার্চ) দেশে প্রথম করোনায় আক্রান্ত হয়ে এক ব্যক্তির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। মূলত এরপর থেকেই বহুগুণে সাধারণ জনগণের মনে এ ভাইরাস নিয়ে ভীতি দানা বাঁধতে থাকে।

 
 
এই ভীতি-উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থেকে কারও যেন রেহাই নেই। উচ্চবিত্তের ড্রয়িং রুম থেকে শুরু করে মহল্লার টং দোকানে চায়ের কাপে ঝড় তুলে চলছে করোনা নিয়ে আলোচনা। অফিসের কাজের ফাঁকেও এ নিয়েই উদ্বেগ প্রকাশ করছেন সবাই। মুঠোফোনে বন্ধু বা প্রিয়জনের সঙ্গে কথা বলার সময় বা গণপরিবহণে চলার কালে একে অপরের সঙ্গে আলাপ করছেন করোনা নিয়েই। জানাচ্ছেন ভীতি আর শঙ্কার কথা।  
 
বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) সকালে রাজধানীর মিরপুর-১২ নম্বর থেকে দারুস সালামগামী যাত্রীবাহী একটি বাসেও একই দৃশ্য চোখে পড়ে। তৈরি পোশাকখাত সংশ্লিষ্ট একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক কাওসার হোসেন তার পাশের সিটের যাত্রীকে বলেন, ভাই, এই যে আমরা বাসে যাচ্ছি, এটাও তো নিরাপদ না। গণপরিবহণতো নিরাপদ না। কে জানে করোনা সংক্রমণে থাকা কেউ এই বাসে উঠেছে বা উঠেছিল কি না?
 
উত্তরে পাশের যাত্রী বলে ওঠেন, আমরা তো মধ্যবিত্ত ভাই। আমাদের তো নিজস্ব গাড়ি কেনার সামর্থ্য নাই। জীবিকার তাগিদে বের হতে হয়। সরকার তো আমাদের জন্য কোনো ব্যবস্থা করছে না। আবার এসব গণপরিবহণে প্রতিদিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাও নিশ্চিত করছে না। যা আছে তার মাঝেই চলতে হবে। আমি তো এখন শুধু বাসা থেকে অফিস আর অফিস থেকে সোজা বাসায় যাবো ভাবতেছি। এর কোনো বিকল্প নাই। কোথাও আমরা নিরাপদ নই।

পঞ্চাষোর্ধ্ব আরেক যাত্রী সরকারের নীতিগত ধীরতার সমালোচনা করে বলেন, এতোদিন সরকার কিছু করলো না। বিদেশ থেকে দেদারসে মানুষ আসতে দিছে, তাদের আলাদা করে রাখেনি। যে যেমনে পারছে, ঘুরছে-ফিরছে। স্কুল বন্ধ করলো সেদিন। পৃথিবীর সব দেশ জরুরি অবস্থা জারি করে শুনতেছি। আমাদের সরকার এখনও এর ভয়াবহতা বুঝতে পারতেছে না। আল্লাহই জানে কী যে আছে। আমার ছেলে বলতেছিল যে, আর কিছুদিন গেলে বোঝা যাবে আমাদের কী অবস্থা হবে।  

এদিকে দেশে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় কেউ কেউ সরাসরি সদ্য বিদেশফেরত প্রবাসীদের দায়ী করছেন। এর ওপর সম্প্রতি বিদেশ থেকে আসা এসব ব্যক্তিদের মাঝে কোয়ারেন্টাইনে থাকার প্রবণতা না থাকায় অনেকের উদ্বেগ আরও বেড়ে গেছে।  

স্ত্রীর চিকিৎসার প্রয়োজনে ঢাকায় আসা পটুয়াখালীর ব্যবসায়ী বাবু সিদ্দিকী বলেন, সেদিনও বাড়িতে (পটুয়াখালী) দেখে আসলাম, এলাকায় ইতালি থেকে একজন আসছে। আসার পর থেকেই সে তো এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। এতো নিজে দেখলাম। আর পত্রপত্রিকা, টিভিতে তো প্রবাসীদের আরও অসচেতন আচরণের খবর দেখি। এমন হলে তো আমরা সবাই ঝুঁকিতে আছি।    
 
এদিকে করোনা মোকাবিলায় দেশের বিভিন্ন ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যেই তাদের কর্মীদের বাসায় থেকে কাজ করার অনুমতি দিয়েছে। টেলিকম ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে তুলনামূলকভাবে সবার আগে। আরও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান কর্মীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্কুল-কলেজসহ সব পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।  

রাজধানীর অফিস পাড়ার অলিগলি, সেসবে থাকা দোকানপাট কিংবা সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার মতো জায়গাগুলোও বৃহস্পতিবার ফাঁকা দেখা যায়। পথেঘাট, বিশেষ করে বিনোদন কেন্দ্রগুলো এখন অনেকটাই ফাঁকা। এরই মধ্যে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, পতেঙ্গা বিচ, সেন্টমার্টিনসহ দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে জনসমাগম সৃষ্টিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
 
এদিকে এই অবস্থায় যে অল্প কিছু মানুষ ঘর ছেড়ে বের হচ্ছেন, তাদের বেশিরভাগের মুখেই দেখা যাচ্ছে মাস্ক। সচেতনভাবে না হলেও অনেকটা ভয় থেকেই এখন মাস্ক পরছেন বলে জানান কয়েক পথচারী। কেউ কেউ সাথে নিয়ে ঘুরছেন হ্যান্ড লিকুইড সোপ, হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা অ্যালকোহল প্যাড টিস্যু। ব্যাংক ও এ ধরনের সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে হেক্সিসল দিয়ে হাত ধুয়ে তবেই প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে আগন্তুকদের।   
 
অনেকেই আবার করোনা পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে এমন আশঙ্কায় বাসাবাড়িতে মজুদ করছেন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাজার, মুদি দোকান ও সুপার শপগুলোতে গিয়ে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি পরিমাণে পণ্য কিনতে দেখা যায় গ্রাহকদের।     
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০২০ 
এসএইচএস/এইচজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।