বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে করোনা ভাইরাস প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা জানান তিনি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা ঢাকা শহরে আরও বেশ কয়েকটি হাসপাতাল চিহ্নিত করছি।
সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বিশ্ব ইজতেমায় সেখানে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সেনাবাহিনীকে হস্তান্তর করা হয়েছে। ওই জায়গা মেরামতসহ পরিচালনায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সেখানে সব ধরনের ব্যবস্থা থাকবে, যতটুকু সম্ভব। আইসিইউ মেশিনতো এখন দেওয়া যাবে না। কোয়ারেন্টিনের জন্য যা প্রয়োজন দেওয়া হবে।
‘করোনা ভাইরাস নিয়ে আমরা গত ২ মাস ধরে কাজ করছি। ইতোমধ্যে চায়নায় করোনা নিয়ন্ত্রণে চলে আসলেও ইউরোপে অনেক বেড়ে গেছে। বাংলাদেশেও করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে গেছে। দেশে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১৭ জন। একজন মৃত্যুবরণ করেছেন। সারাদেশে বিদেশ থেকে আগত ৫ হাজারের বেশি লোককে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সব বিভাগের সব সংস্থার সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করেছি। মহাপরিচালকের অফিসে সমন্বিত একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করেছি। যার মাধ্যমে দেশে করোনা কতোখানি বৃদ্ধি পেলো তা জানতে পারবো, কোথায় কী প্রয়োজন তা জানা যাবে। গত দুইদিন ধরে এ কক্ষটি কাজ করছে। ’
করোনা মোকাবিলার প্রস্তুতি প্রসঙ্গে মন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের দেশ থেকে ইউরোপের সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। একটি খোলা ছিল, যুক্তরাজ্য। আজ জানতে পেরেছি আগামী এক-দুইদিনের মধ্যে সেটাও বন্ধ করা হবে। আমরা বলতে চাই, সরকার বর্তমানে কোনো ধরনের পর্যটক বা কারো কোথাও বেড়াতে যাওয়াতেও সম্মতি দিচ্ছে না। আমাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠান যেমন, সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান সীমিত করা হোক। এছাড়া নির্বাচনী প্রচারণায় বড় বড় মিছিল বন্ধের জন্য নির্বাচন কমিশনকে বলা হয়েছে। ক্লাব, সিনেমা, বন্ধ। এবং আমরা চাই না, এখন কোনো বিয়ের অনুষ্ঠান বড় আকারে হোক। এসব সীমিত আকারে করতে হবে। এছাড়া বাস, রেল ও লঞ্চে যাত্রীরা যেন সীমিত আকারে যাতায়াত করে। একই সঙ্গে যাদের জ্বর বা অসুস্থ তারা কোনো ধরেনর যানবাহনে ভ্রমণ করবেন না।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই দেশবাসী নিরাপদে থাকুক। দেশে যাতে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে না পড়ে, এ জন্য সব মন্ত্রণালয় একযোগে কাজ করছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী একনেক মিটিংয়ে অনেক নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই নির্দেশনার আলোকে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আগামীতেও কাজ করবো।
বিদেশ থেকে প্রবাসীরা এসে বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপন করে থাকে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা বুঝতে পারছে না যে, তাদের মাধ্যমেও করোনা ছড়াতে পারে। এতে করে তারা নিজের ও পরিবারের ক্ষতিসহ মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। কোয়ারেন্টিন ভেঙে তারা বিভিন্নস্থানে ঘোরাফেরা করেও মানুষকে আক্রান্ত করছেন। আবার দেখা গেছে, অনেক প্রবাসী ভুল তথ্য দিচ্ছে, সে কোথা থেকে আসছে। তারা আক্রান্ত দেশ থেকে আসলে তা লুকাচ্ছে। আমরা চাই না কেউ এ ধরনের মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করুক। যদি এমনটা করেন তাহলে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। ইতোমধ্যে আমরা বিভিন্ন জেলায় প্রায় ৩০/৪০ জনকে জরিমানাও করেছি, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।
‘আমরা আমাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করছি। অনেক টেস্টিং কিটস পেয়েছি। ১ লাখ টেস্টিং কিটস অর্ডার করা হয়েছে। পাইপলাইনে আরও আছে। আরও অনেক দেশ মাস্ক ও স্যুট দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এছাড়া যারা বিদেশে আছেন এ মুহূর্তে তাদের দেশে আসার প্রয়োজন নেই। আমরা এখনও ভালো আছি, নিয়ন্ত্রণে আছি। লোকজন যাতে টেলিফোনে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে সেজন্য অনেকগুলো লাইন দেওয়া হয়েছে। সেগুলোতে লাখ লাখ ফোন আসছে। আমাদের প্রায় ১৭টি লাইন দেওয়া হয়েছে। আমরা যদি নির্দেশনা মেনে চলি তাহলে সবাই ভালো থাকবো। সবাই মিলে কাজ করলে করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবো।
আরও পড়ুন>>> পরিস্থিতি অবনতি হলেই এলাকা লকডাউন: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০২০
জিসিজি/এইচজে