বৃহস্পতিবার (মার্চ ১৯) সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনয়াতনে ‘কোভিড-১৯ এখন বাংলাদেশেও: চাই জনগণ, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য সেবাকর্মীর সুরক্ষা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
অধ্যাপক ডাক্তার নজরুল ইসলাম বলেন, হোম কোয়ারেন্টিনের সিদ্ধান্ত অত্যন্ত বোকামি।
তিনি বলেন, কোয়ারেন্টিনে যারা থাকবেন, তাদের যারা খাবার ও দেখভাল করবে, তাদের কি পারসোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট রয়েছে। তার কি হ্যান্ড গ্লাভস, মাস্ক, গাউন, আছে? হোম কোয়ারেন্টিনে মেইনটেইন করা থেকে বিদেশফেরত প্রবাসীদের কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানে পর্যবেক্ষণে রাখা অনেক সহজ ছিল। আমরা অনেক বোকামি করেছি হোম কোয়ারেন্টিনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
আইইডিসিআরের সমালোচনা করে তিনি বলেন, দেশের একটা মাত্র প্রতিষ্ঠান কেন করোনা ভাইরাস আক্রান্তদের পরীক্ষা করছে, এটা কেন হবে? দু’জন রোগী তারা আইইডিসিআর এ রক্ত পরীক্ষা করতে গেলে, তাদের বলা হয়, আমরা সরাসরি রক্ত পরীক্ষা করবো না, আপনারা আমাদের হটলাইনে কল করলে, আমরা টিম পাঠিয়ে নমুনা সংগ্রহ করবো। এখন কথা হচ্ছে ১২টি হট লাইন নম্বরে ১২ জন লোক ফোন করলে ১২টি অ্যাম্বুলেন্স, ১২টি কিট ও ১২ জন পারসোনাল প্রটেকশন ইউনিট নিয়ে সেই গ্রামে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করবে। অথচ কেউ স্বেচ্ছায় আইইডিসিআরে এলে তার রক্ত পরীক্ষা হবে না এটা হতে পারে না।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালসহ অন্য হাসপাতালেও ডাক্তার শুনলাম কোয়ারান্টিনে রয়েছে। তাহলে ওই সব হাসপাতালে কর্মরত অন্য ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ড বয় এবং অন্যদের কি অবস্থা সেটাও আমার বিবেচনায় নিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্য বক্তারা বলেন, গত সপ্তাহে প্রায় ৯৫ হাজার যাত্রী কোভিড- ১৯ আক্রান্ত দেশ থেকে বাংলাদেশে এসেছেন। অথচ মাত্র ২ হাজার ৫০০ জন হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। বাকিরা কোথায় কি অবস্থায় রয়েছে আমরা জানি না। তাদের কারও মধ্যে করোনা ভাইরাসের রোগী রয়েছে কিনা তাও জানা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে আমাদের অধিকতর গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডা. এম এইচ ফারুকী। সভাপতিত্ব করেন ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট এর সভাপতি অধ্যাপক ডা. আবু সাঈদ।
আলোচনা করেন ডা. এম এইচ চৌধুরী লেলিন, ডা. ফয়জুল হাকিম লালা, অধ্যাপক ডা. শাকিল আক্তার, অধ্যাপক ডা. হারুন-অর-রশিদ, ডা. গোলাম আজম প্রমুখ।
ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমন্টে প্রেক্ষাপটে সরকারের কাছে ১০টি প্রস্তাবনা ও দাবি উল্লেখ করা হয়, দাবিগুলো হচ্ছে-অনতিবিলম্বে সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের নিয়ন্ত্রণে থাকা বিলর্বোড সমূহে জনসাধারণরে জন্য দিক নির্দেশনা প্রচারণা চালানো (হোম কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থাপনা, জন-সমাগম কম করা, জরুরি ছাড়া হাসপাতালে না আসা, আক্রান্ত দেশ সমূহ থেকে আগত বাংলাদেশি তালিকা নিয়ে সন্দেহজনক এলাকাসমূহে নিবিড় রোগী শনাক্তকরণ পরীক্ষার ব্যবস্থা করা, র্পযাপ্ত পরিমাণ রোগ নির্ণয় কিট সংগ্রহ ও সরবরাহ নিশ্চিত করা, সব বিভাগীয় ও র্পযায়ক্রমে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী জেলা হাসপাতালগুলোতে একই সঙ্গে কোভডি-১৯ এর দ্রুত পরীক্ষা ও চিকিৎসা সুবিধা চালু করা, সব হাসপাতালে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা ক্ষেত্রে চিকিৎসক , র্নাস ও স্বাস্থ্য কর্মীদের নিরাপত্তায় র্পযাপ্ত ব্যবস্থা প্রস্তুত, সুরক্ষা সরঞ্জামাদি (হাত মোজা, গগলস, মাস্ক, এপ্রোন, সাবান, স্যানেটাইজার প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে, স্বাস্থ্যর্কমী, রোগী ও সম্ভাব্য রোগী পরিবহনের জন্য র্পযাপ্ত অ্যাম্বুলেন্স ও গাড়ির ব্যবস্থা করতে হবে, কোয়ারেন্টিন ও আইসোলশনের ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের পদক্ষেপ ও অংশগ্রহণ বাড়ানো, সরকারি কোয়ারেন্টিন কেন্দ্রসমূহ পরিবেশ ও ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে হবে, পাশাপাশি কোয়ারেন্টিনে আওতায় থাকা ব্যক্তিদের খাবার ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা রাখতে হবে, হটলাইনে সংখ্যা বাড়ানো এবং জনগণে সব তথ্য প্রাপ্তি সহজতর এবং দ্রুততার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা, সব স্থরে জনপ্রতিনিধিদের আরও দ্রুততার সঙ্গেও ব্যাপকভাবে জনসচতেনতা বাড়ানো র্কাযক্রমে সম্পৃক্ত করা।
বাংলাদেশ সময়: ২২১৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০২০
আরকেআর/আরআইএস/