বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের এ অভিযান শুরু হয়েছে। একইসঙ্গে অভিযানের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের সতর্ক ও সচেতন করার কাজও চলছে।
করোনা পরিস্থিতিতে সংকটের আশঙ্কায় সাধারণ মানুষ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য বিপুলভাবে ক্রয় করে নিচ্ছে। এ অবস্থায় সুযোগ বুঝে অসাধু ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন জানায় জেলা প্রশাসন।
গত কদিন ধরেই করোনা ভাইরাস নিয়ে বরিশালের মানুষের মধ্যে উৎকন্ঠা বিরাজ করছে। লকডাউন ঘোষণা হলে খাদ্যশস্যসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের সংকট দেখা দিতে পারে, এ ধারণা থেকে বরিশালের বাসিন্দারা খাদ্যশস্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনে মজুদ করা শুরু করেছেন।
নগরের বাংলাবাজার এলাকার ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত বাজারে ক্রেতাদের উপস্থিতিও যেমন বেশি ছিলো, তেমনি বিক্রিও বেশি হয়েছে। অনেকটা উৎসবের আগের দিনের বিক্রি যেমনটা হয়, তেমনই হয়েছে।
ক্রেতারা জানান, করোনা ভাইরাসের সংক্রমন এড়াতে যদি সাধারণ মানুষকে বাড়িতে অবস্থান করতে হয়, তাহলে খাদ্যশস্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের প্রয়োজনটা বেশি হবে। তাই প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোই কমপক্ষে দু’সপ্তাহের জন্য অগ্রিম কিনে নিয়ে বাড়িতে মজুদ করছেন।
তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, বাজারে পর্যাপ্ত সবপণ্যের সরবরাহ থাকলেও সংকটের দোহাই দিয়ে মূল্য বাড়িয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য কিংবা চাহিদা বেশি থাকা পণ্যগুলো বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।
আছিয়া খাতুন নামে এক গৃহিনী জানান, বরিশালের কাটপট্টিতে বাচ্চাদের গুড়ো দুধের দাম দু’শ টাকা বেশি চাওয়া হচ্ছে।
অন্যদিক খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় তারা বাড়তি দামে বিক্রি করছেন। বাজারে পণ্যের সংকট না দেখা দিলেও পাইকাররা পণ্যের সংকটের কথা বলেই দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। তবে পাইকাররা বলছেন, হঠাৎ করেই ভোক্তা পর্যায়ে প্রয়োজনের বেশি পণ্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাজারে কিছু পণ্যের সাময়িক সংকট সৃষ্টি হয়, যার সুযোগ নিচ্ছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।
ক্রেতাদের তথ্যানুযায়ী, বস্তাপ্রতি চালের দাম দু’শ থেকে তিনশ টাকা বাড়তিতে বিক্রি হচ্ছে পাইকার বাজারে। বৃহস্পতিবার পাইকারী বাজারে পেঁয়াজের সংকটের খবর শুনেই খুচরা বাজারে ৪০ টাকা দামের পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি জিনিসেরই দাম কেজি প্রতি দুই থেকে পাঁচ টাকা বেড়েছে।
বরিশাল ও ঝালকাঠি জেলায় নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর বাজার দর ঠিক রাখতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী জানিয়েছেন, বৃহষ্পতিবার দিনভর জেলা সদর ছাড়াও নলছিটি ও রাজাপুর উপজেলায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। যে অভিযানে ৯৩ হাজার টাকা জরিমানাও আদায় করা হয়।
অপরদিকে বরিশালের জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান জানান, বৃহষ্পতিবার দিনভর অভিযানে বরিশাল নগর এবং জেলার পাঁচটি উপজেলায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে এক লাখ ৫২ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। শুক্রবারেও (২০ মার্চ) ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে পুঁজি করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রচেষ্টাকে কঠোর হস্তে দমন করা হবে।
এদিকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তরও বাজার তদারকির কাজ করছে। বৃহস্পতিবার থেকে বরিশাল নগরসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ৫০ হাজারের বেশি টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে জানান বরিশাল জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. শাহ শোয়াইব মিয়া।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৩ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০২০
এমএস/এবি