ঢাকা, শুক্রবার, ১০ মাঘ ১৪৩১, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

মানুষকে আতঙ্কিত হতে দেওয়া যাবে না: ডা. আব্দুল্লাহ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৫৯ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০২০
মানুষকে আতঙ্কিত হতে দেওয়া যাবে না: ডা. আব্দুল্লাহ

ঢাকা: পৃথিবীখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও সচিব পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘টার্গেট একটাই মানুষকে আতঙ্কিত হতে দেওয়া যাবে না। প্রতিদিন করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে। অবস্থার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে যথাযথ সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।

শুক্রবার (২০ মার্চ) ইস্টওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের কনফারেন্স হলে দৈনিক কালের কণ্ঠ আয়োজিত করোনা ভাইরাস: সর্তকতায় সুরক্ষা শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ এসব কথা বলেন।
 
আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক বলেন, আমাদের হুজুগে ভাবনা থেকে সরে আসতে হবে।

যা শুনবে তাতেই ঢলে পড়লে হবে না। যাচাই করতে হবে। আমাদের প্রস্তুতি চলছে। মনে রাখতে হবে আমরা যুদ্ধ করছি অদৃশ্য শক্তির বিরুদ্ধে। এটা মানতে হবে আমরা প্রস্তুত ছিলাম না, মূলত বিশ্বও সেভাবে প্রস্তুত ছিল না। এটা নিয়ে দোষারোপের খেলা খেলে লাভ নেই। শুধু সরকার নয়, দেশের মানুষেরও দায়িত্ব রয়েছে।

আরও পড়ুন>> ‘করোনা চিকিৎসার দায়িত্ব বেসরকারি হাসপাতালকে দেওয়া হবে না’ 

গণমাধ্যমে শুধু মৃত্যুর খবর না ছড়িয়ে সেই সঙ্গে আক্রান্ত অনেকেই সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরছেন, সেটাও প্রচার করতে হবে। তাহলে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াবে না। ডাক্তারের জীবনের নিরাপত্তার সঙ্গে সাংবাদিক, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত হাসপাতালের সকল কর্মীদের কথাও ভাবতে হবে। ’
 
তিনি আরও বলেন, ‘বিদেশ ফেরত এবং দেশের নাগরিকদের লক্ষণ নিয়ে চলাফেরার ব্যাপারে সর্তক করে কাজ না হলে, তারা যদি হোম কোয়ারেন্টিনে না থাকতে চায় তবে শক্ত হতে হবে। একজনের অসুবিধায় যদি দেশ বেঁচে যায় তবে তাই করতে হবে। ’ 
 
পরীক্ষার বিষয়ে ডা. আব্দুল্লাহ বলেন, ‘ঢালাও পরীক্ষা করার মতো অবস্থা আমাদের নেই। শুধু আমাদের না, বিশ্বের কোন দেশেরই নেই। তাই যারা বিদেশ থেকে এসেছেন তারা কোয়ারেন্টিনে থাকবেন। যদি লক্ষণ দেখা দেয় পরীক্ষা করবে। অথবা তার পরিবার বা তার সঙ্গে মিশেছে এমন কারো লক্ষণ দেখা দিলে পরীক্ষা করবেন। ’
 
পরিস্থিতি মোকাবেলায় সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সম্মিলিত প্রয়াস ছাড়া কোন কিছু সম্ভব নয়। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে লকডাউন নয়, যা যা করা দরকার সব করার প্রস্তুতি নেওয়া আছে, নেওয়া হচ্ছে। আমরা দেশের পরিস্থিতি সবার কাছে পরিষ্কার রাখতে চাই। যাতে কোন বিভ্রান্তি না ছড়ায়। গণমাধ্যমকেও এই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। ’
 
সঞ্চালক, কালের কণ্ঠের সম্পাদক ও ইস্টওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের পরিচালক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, ‘করোনা ভাইরাস পৃথিবীর জন্য একটি বড় ধরনের আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বহু বহু বছর এই ধরনের আতঙ্কের মধ্যে মানবসভ্যতাকে পড়তে হয়নি। শুধু বাংলাদেশ নয় সারা পৃথিবীর যে পরিস্থিতি আমরা লক্ষ্য করছি তা চিন্তার বিষয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নিজেদের মতো করে অদৃশ্য এই শক্তির বিরুদ্ধে কাজ করছে। আমাদের ছোট দেশে মানুষ বেশি। তাই সরকারের পক্ষে সেভাবে সমর্থন দেওয়া কষ্টসাধ্য হবে। সবধরনের বাধা এড়িয়ে এরপরও এগিয়ে যেতে হবে। এই বিষয়ে আতঙ্কিত না হয়ে নিজেদের বাঁচাতে এদেশের মানুষগুলোর জীবন রক্ষা করতে, নিশ্চয়তার জন্য সবাইকে সর্তকতার সঙ্গে চলতে হবে। ’
 
কালের কণ্ঠের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তফা কামাল বলেন, ‘এই মুহূর্তে সারা বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও কঠিন সমস্যার নাম করোনা ভাইরাস। এই ভাইরাস মোকাবিলায় এক ধরনের ছন্দপতন আমরা দেখেছি। করোনার বিস্তার চীনে শুরু হলেও দেশটি পরিস্থিতি অনেকটাই সামলে নিয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়াও পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠছে। কিন্তু খুব দুর্ভাগ্যজনকভাবে ইতালি এখনো গভীর সংকটে রয়েছে।
 
মোস্তফা কামাল আরও বলেন, করোনা মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত-এ কথা বলা হলেও আমরা ঠিক কতটা প্রস্তুত তা এখনো জানি না। এখনো ইতালিসহ বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসীরা দেশে আসছেন। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে এখনো করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে বলে মনে হচ্ছে। বিদেশ থেকে ফিরে এক সন্তান তার বাবাকে আক্রান্ত করেছে আবার এক বাবার মাধ্যমে তার দুই সন্তান আক্রান্ত হওয়ার খবর পেয়েছি। আমার বিশ্বাস সরকার ও সংশ্লিষ্ট সবাই বৈশ্বিক এই সংকট মোকাবিলায় সক্ষম হবে। ’
 
ইমদাদুল হক মিলনের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন, জাতীয় জনস্বাস্থ্য আন্দোলনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশি ই মাহবুব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এম এ ফায়েজ, আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ড. মুসতাক আহমেদ, ইউনিভার্সাল মেডিক্যাল কলেজের রিচার্স সেন্টারের প্রধান অধ্যাপক ডা. রিদওয়ানুর রহমান, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ও ইউনিভার্সাল ফিভার (জ্বর) ক্লিনিকের কনসালটেন্ট অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির, শহীদ সোহরাওয়ার্দি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাকিল আহম্মদ ও ওজিএসবির সভাপতি অধ্যাপক ডা. সামিনা চৌধুরী প্রমুখ।
 
বাংলাদেশ সময়: ২৩৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০২০
এসই/জেআইএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।