ঢাকা, শুক্রবার, ১০ মাঘ ১৪৩১, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

করোনা বোঝে না সীমান্ত ও চরাঞ্চলের মানুষ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৬ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০২০
করোনা বোঝে না সীমান্ত ও চরাঞ্চলের মানুষ

লালমনিরহাট: প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস ইতোমধ্যে দেশে সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। সচেতনতাই মুক্তির পথ হলেও সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটের অধিকাংশ মানুষ এখনো অসচেতনভাবেই চলাফেরা করছে। ফলে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন সুধীজনের। 

তিস্তার আর ধরলার নদীর জেলা লালমনিরহাটের অধিকাংশ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। তিস্তা ও ধরলা নদীর বুকে জেগে ওঠা প্রায় অর্ধশত চরাঞ্চলে হাজার হাজার পরিবারের বসবাস।

প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে নিত্য লড়াই করে চলা চরাঞ্চলের মানুষ ব্যস্ত রয়েছে নিজেদের জীবিকার কাজে। সচেতন তো দূরের কথা আসন্ন করোনা ভাইরাস সম্পর্কে কোনো ধারণাই তাদের নেই। তাদের সচেতন করতে স্বাস্থ্য বিভাগেরও তেমন কোনো কার্যক্রম নেই। অজ্ঞ-অশিক্ষিত মানুষগুলো এখনো জানে না করোনা মোকাবেলায় কী করা উচিত।

এ ছাড়াও সীমান্তবর্তী এ জেলার প্রায় ২২ কিলোমিটার কাঁটাতারের বেড়াহীন ভারতীয় সীমান্ত। লালমনিরহাটের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর অধিকাংশ মানুষ অবৈধ পথে চোরাচালান বা শ্রমিকের কাজে ভারতে যাতায়াত করে থাকেন। এদের মধ্যে অনেকে ভারত বাংলাদেশ দুই দেশের নাগরিকত্ব রয়েছে বলেও স্থানীয়রা জানান। করোনা পরিস্থিতিতেও অনেকে ভারতে যাতায়াত আগের মতোই স্বাভাবিক রেখেছেন। যার গতিবিধি নিয়ন্ত্রণে সরকারিভাবে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে করোনা ঝুঁকিতে আতঙ্কিত স্থানীয়রা।

চরাঞ্চলের ছিন্নমূল মানুষদের দ্রুত করোনা মোকাবেলায় সচেতন করা না হলে দ্রুত মহামারি আকার ধারণ করবে স্বাস্থ্য অসচেতন ও পুষ্টিহীন এ জনপদে। চরাঞ্চলে স্বাভাবিক স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছানো কষ্টকর হবে। সেখানে করোনার মতো মরণঘাতী ভাইরাস মোকাবেলায় সেবা প্রদান অসম্ভব হয়ে পড়বে। ফলে আক্রান্ত শুরু হলে মুহুর্তে মহামারি আকার ধারণ করার আশঙ্কা করছেন সচেতন নাগরিকরা।  

তাদের দাবি, শহরের বাসিন্দাদের মতো দ্রুত চরাঞ্চলের মানুষকে করোনা মোকাবেলায় স্বাস্থ্য সচেতন করতে হবে। একই সঙ্গে আক্রান্ত হওয়ার আগেই তাদের খাদ্য নিশ্চিত করে চলাফেরা বন্ধ করে দিতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে বিরাট ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে, বিদেশ ফেরতরা হোম কোয়ারেন্টিন না মেনে অবাধে ঘুরে বেড়িয়েছেন বিভিন্ন গ্রামে। সীমান্তে কঠোর নজরদারি এবং গ্রামীণ ও চরাঞ্চলের খেটে খাওয়া অজ্ঞ অশিক্ষিত জনগোষ্ঠিকে মাইকিং করে দ্রুত সচেতন করে স্বাস্থ্য বার্তা মেনে চলতে বাধ্য করার পাশাপাশি গ্রামীণ হাটবাজারে গণজমায়েত বন্ধ করতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন জেলার সচেতন মহল।  

ভারতীয় সীমান্ত ঘোঁষা দুর্গাপুরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক ও ছাত্র বাংলানিউজকে জানান, এ এলাকার শত শত মানুষ গরুসহ বিভিন্ন চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। তারা প্রায় সময় অবৈধ পথে ভারতে যাতায়াত করছে। অনেকে শ্রমিকের কাজেও ভারতে যাচ্ছেন। এক-দুই সপ্তাহ কাজ করে ফিরছেন। তাদের কোনো হিসাব রাখা হচ্ছে না। ফলে জেলার সীমান্তবর্তী গ্রামগুলো সব থেকে বেশি করোনা ভাইরাস ঝুঁকিতে রয়েছে।

তিস্তা চরাঞ্চল গোবর্দ্ধন গ্রামের স্কুল শিক্ষক কাজী শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, চরাঞ্চলের মানুষ করোনা তো বোঝেই না। স্বাস্থ্য সচেতনও নয়। খেটে খাওয়া মানুষজন জীবিকার তাগিদে কাজে ছুটছেন এবং চলাফেরায়ও নেই সীমাবদ্ধতা। করোনা সচেতনতার কথা বলতে গেলে এসব মানুষের ধারণা, ভয়ে ঘরে বসে থাকলে না খেয়ে মরতে হবে। আর করোনা ভাইরাস এলেও মরতে হবে। আল্লাহ যা করার করবে। এই বৃহত্তর চরবাসীকে সচেতন করতে না পারলে করোনা ভাইরাসে বড় খেসারত দিতে হতে পারে।  

লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডা. নিমর্লেন্দু রায় বাংলানিউজকে বলেন, জনসচেতনতার জন্য মাঠপর্যায়ে স্বাস্থ্য বার্তার লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। মাইকিং করলে আতঙ্কিত হতে পারে তাই করা হচ্ছে না। ৫৩ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে ও ভারত ফেরত একজনকে পাটগ্রাম হাসপাতালে প্রতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। করোনার আইসলোশন বাড়াতে লালমনিরহাট রেলওয়ে হাসপাতাল ও লালমনিরহাট সরকারি কলেজের নবনির্মিত মহিলা হোস্টেল চাওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য চিকিৎসা সরঞ্জাম সংকট রয়েছে। যা চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

বডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) লালমনিরহাট ১৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল তৌহিদুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, একটু আগে জেলা প্রশাসকের দেওয়া পরামর্শে সীমান্তে নজরদারি বাড়াতে ক্যাম্পগুলোতে জরুরি নির্দেশনা দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সীমান্তবাসীকে সীমান্ত অতিক্রম না করাতে নির্দেশনা দেওয়া হবে।  

জেলা প্রশাসক আবু জাফর বাংলানিউজকে বলেন, সীমান্তে নজরদারি বাড়াতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) কেন্দ্রীয় নির্দেশনার পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের সভায়ও বলা হয়েছে। করোনা মোকাবেলায় জেলাবাসীর সচেতনতা বাড়াতে লিফলেটের পাশাপাশি মাইকিং করা হবে। আতঙ্কিত না হয়ে সকলকে স্বাস্থ্য বার্তা মেনে চলার আহ্বান জানান তিনি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৩ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০২০
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।