এসএ টিভির ৩২ সাংবাদিকের চাকরিচ্যুতির বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে সোমবার (২৩ মার্চ) ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) নেতারা সচিবালয়ে উদ্বেগ জানাতে গেলে এসব কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী।
ডিইউজে সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপুর নেতৃত্বে সংগঠনের অন্য নেতারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতকালে ডিইউজে সভাপতি বলেন, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে যখন শত্রুমিত্র সব এক হয়ে গেছে, সেই মুহূর্তে গণমাধ্যমে চাকরিচ্যুতির ঘটনা আমাদের রীতিমত হতবাক ও বিস্মিত করেছে। এ ধরনের সিদ্ধান্তে আমরা উদ্বিগ্ন অনুভব করছি।
হাছান মাহমুদ বলেন, করোনা ভাইরাস একটি বৈশ্বিক দুর্যোগ। এই দুর্যোগের মধ্যে সবাই অত্যন্ত উৎকণ্ঠিত। এই সময় কারো উৎকণ্ঠা বাড়ানো সমীচীন নয়। এই সময়ে কোনো ধরনের চাকরিচ্যুতি অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক। আমি সবাইকে অনুরোধ জানাতে চাই, এই সময়ে কোনো কারণে যদি মালিকপক্ষের অসুবিধাও হয়ন তবুও চাকরিচ্যুতি না করার জন্য।
এসময় লিখিত বক্তব্যে ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সম্প্রতি বেসরকারি টেলিভিশন এসএ টিভির ২৭ জন ও আগামী নিউজের ৭ জনকে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। অনেক গণমাধ্যম পাওনাদি বকেয়া রেখেছে। দুর্যোগের এ সময়ে এ ধরনের অপতৎপরতা সাংবাদিক সমাজকে রীতিমত হতবাক ও ক্ষুব্ধ করেছে। একইসঙ্গে প্রচলিত শ্রম আইন লঙ্ঘন করে গণচাকরিচ্যুতির এ দুটি ঘটনা নজীরবিহীন এবং গণমাধ্যমের স্থিতিশীল পরিবেশকে উত্তপ্ত করছে। আমাদের অভিভাবক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রী হিসাবে গণমাধ্যমকর্মীদের চাকরিতে পুর্নবহালের জন্যে আপনার একান্ত হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর নবম সংবাদপত্র ওয়েজবোর্ড রোয়েদাদ ঘোষণা করা হলেও গ্র্যাচুইটি ও আয়কর প্রদান বিষয়ক সুপারিশ সাংবাদিক সমাজকে মর্মাহত ও হতাশ করেছে। আশা করি অসঙ্গতিগুলো দূর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। টেলিভিশন সাংবাদিকদের জন্য আলাদা ওয়েজবোর্ড গঠনেরও দাবি জানান তিনি।
এছাড়াও গত ১০ মার্চ হতে নিখোঁজ সিনিয়র ফটো সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলের সন্ধান পেতে সহযোগিতা চান সাংবাদিকরা। এ বাদে চলমান করোনা ভাইরাস ইস্যুতে কাজ করা ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় তাদের সুরক্ষা দিতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও চান সাংবাদিকেরা।
এ প্রসঙ্গে তপু বলেন, আপতৎকালীন সময়ে সাংবাদিকদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তামূলক পোশাক সরবরাহ ও কর্মস্থলে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ আনুষঙ্গিক বিভিন্ন সামগ্রী সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে অফিস যাতায়াতের ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্ন পরিবহন সুবিধা নিশ্চিত করারও দাবি জানানো হয়। সাংবাদিকদের মধ্যে জ্বর, সর্দি-কাশি বা অন্য কোনো উপসর্গ দেখা গেলে চিকিত্সকের পরামর্শ অনুযায়ী শর্তহীন ছুটি মঞ্জুর করতে হবে বলেও জানান তপু। ঝুঁকি এড়াতে সরকারের পক্ষ থেকে অতি প্রয়োজনীয় না হলে প্রেস কনফারেন্স এড়িয়ে ভিডিও কনফারেন্স বা ফেসবুক লাইভের সুবিধা গ্রহণ করা যেতে পারে বলেও জানানো হয়।
এদিকে করোনা ভাইরাস নিয়ে গণমাধ্যম উদ্যোগী হয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সাংবাদিক ইউনিয়নের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজন অনুসারে সাংবাদিকদের ব্যক্তিগত প্রটেকশনের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপ করে কিছু পদক্ষেপ নেব।
চলমান করোনা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী বলেন, এটি আমাদের সবাইকে সম্মিলিতভাবে মোকাবিলা করতে হবে। এখন মতানুবাদ বা দোষারোপের সংস্কৃতি বাদ দিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে বৈশ্বিক দুর্যোগ মোকাবিলা প্রয়োজন। এখন রাজনীতি করার সময় নয়। সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই বৈশ্বিক দুর্যোগ মোকাবিলা করার সময়। সেই ক্ষেত্রে সরকার নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। জনগণ ইতোমধ্যে অনেক সচেতন হয়েছে, কিন্তু গ্রামেগঞ্জে এখনও সচেতনতার কিছুটা অভাব রয়েছে। সবাই যাতে আরও সচেতন হয়, আমাদের সাংবাদিক সমাজের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
এদিন সাংবাদিকদের স্বাস্থ্যবীমা দাবির বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, আমি আগেও বলেছি, গ্রুপ ইন্স্যুরেন্স করলে ভালো হয়। গ্রুপ ইন্স্যুরেন্স করলে মিডিয়া হাউজগুলোর জন্যই ভালো। গ্রুপ ইন্স্যুরেন্স করলে একজন কর্মীর অসুস্থতা বা দুর্ঘটনা বা অন্য কোনো কারণে যখন কোনো অসুবিধা হয়, তাদেরকে সহায়তা দেওয়া সম্ভবপর হয়, এটি প্রয়োজন। সাংবাদিক সংগঠনগুলো সদস্যদের জন্য গ্রুপ ইন্স্যুরেন্স করতে উদ্যোগ নিতে পারে। সেটি করলে সবার জন্যই কল্যাণকর হয়। আমি আপনাদের এই প্রস্তাবকে সমর্থন করি।
এছাড়া নবম ওয়েজবোর্ড প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী বলেন, নবম ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত প্রয়োজন। আমরা মনিটরিং কমিটি করে দিয়েছি। আমি আশা করবো সংবাদপত্রগুলো নবম ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন করবে।
গণমাধ্যমকর্মী আইন আগামী সংসদ অধিবেশনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, আইনটি পাস হলে সমস্ত সাংবাদিক, শুধু ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া নয়, অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকদেরও আইনী সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব হবে।
এছাড়া সম্প্রচার আইন নিয়ে আইন মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করেছে জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, এ দুটি আইন হলে সমস্ত গণমাধ্যমকর্মীদের আইনী সুরক্ষা দেওয়া সম্ভবপর হবে। সবারই আইনী সুরক্ষা প্রয়োজন।
করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যে বাংলাদেশ বেতারে একটি নিয়োগের ব্যাপারে মৌখিক পরীক্ষা প্রসঙ্গে প্রার্থীদের ক্ষোভ নিয়ে তোলা এক প্রশ্নে তথ্যমন্ত্রী বলেন, এই সিদ্ধান্ত অনেক আগের এবং পরীক্ষাও শুরু হয়েছে অনেক আগে। আর ভাইবা পরীক্ষা হলে বসিয়ে নেওয়া হয় না। সবাইকে সেখানে ব্যক্তিগত প্রটেকশন দিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০২০
এমআইএইচ/এইচজে