বিশ্বজুড়ে মহামারী রূপ নেওয়া করোনা ভাইরাস এখন বাংলাদেশেও মূর্তিমান আতঙ্কের নাম। সংশ্লিষ্টদের মতে, বর্তমানে ‘করোনা স্প্রেডিং’ সময়ে রয়েছে বাংলাদেশ।
মাঠপর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনার বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ যেকোনো জনসমাগম রোধ করতে সার্বক্ষণিক কাজ করছেন পুলিশ সদস্যরা। চিহ্নিত বিদেশফেরতদের হোম কোয়ারেন্টিন (ঘরে থাকা) নিশ্চিত করতে প্রত্যন্ত এলাকায় ছুটে যাচ্ছেন। যেকোনো সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ করতেও হস্তক্ষেপ করছেন তারা।
সন্দেহভাজন ঝুঁকিপূর্ণ কোনো এলাকায় যানবাহন বা জনসাধারণের চলাচল নিয়ন্ত্রণসহ সার্বিক নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। এর বাইরে করোনা সংকটকে পুঁজি করে অনিয়ন্ত্রিত বাজারের লাগাম টেনে ধরার চেষ্টাও করে চলেছেন এই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাই।
করোনা ভাইরাসে আসন্ন পরিস্থিতি মাথায় রেখে ইতোমধ্যে পুলিশ সদস্যদের সবার ছুটি বাতিল করা হয়েছে। সংকট প্রতিরোধে যারা প্রতিনিয়ত ছুটে চলেছেন জনসাধারণের কাছে, বিপুল সংখ্যক এ বাহিনীর সদস্যদের নিজেদের সুরক্ষা প্রস্তুতি কতটা?
পুলিশ সদরদপ্তর জানায়, করোনায় সংকটের প্রথম দিন থেকেই প্রতিটি সদস্যকে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলা হয়েছে। দায়িত্বরত অবস্থায় মাস্ক এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের পাশাপাশি সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
মাঠপর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, সব সদস্যকে মাস্ক-স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে বলা হলেও অফিসিয়ালি সবাইকে এসব সরবরাহ করা হচ্ছে না। পুলিশ সদস্যদের স্বপ্রণোদিত হয়ে মাস্ক-স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। জনসাধারণের সঙ্গে মিশতে ঝুঁকি থাকলেও এখনও কাউকে পার্সোনাল প্রোটেকটিভ ইক্যুইপমেন্ট (পিপিই) সরবরাহ করা হয়নি। তবে কোনো অবস্থাতেই পুলিশ সদস্যদের জনসাধারণের কাছ থেকে দূরে থাকার সুযোগ নেই। যতটুকু সম্ভব সচেতন থেকে কাজ করতে বলা হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারী জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) মো. হান্নানুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে আইজিপির নির্দেশে পুলিশ সদরদপ্তর ব্যক্তিগত সুরক্ষার জন্য সবার ছুটি বাতিল করেছে। যেন পুলিশ সদস্যরা ছুটি নিয়ে বাড়িতে গিয়ে নিজেদের কমিউনিটিতে না মিশতে পারেন। প্রতিটা থানাতে স্বপ্রণোদিত হয়ে সেবাপ্রার্থীদের জন্য হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করছে। ব্রিফিং প্যারেডে নিজেদের সচেতনতার বিষয়গুলো বার বার বলা হচ্ছে।
ব্যারাক ও পুলিশ লাইনে প্রবেশের সময় সবাইকে স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করানো হচ্ছে। তবুও রাষ্ট্রের স্বার্থে পুলিশ সদস্যদের সাধারণ মানুষের কাছ থেকে দূরে থাকার সুযোগ নেই। নিরাপত্তার কথা ভেবে কোনো পুলিশ সদস্য আসামি ধরা থেকে বিরত থাকতে পারেন না। এরপরেও যতটা সম্ভব আমরা নিজের অবস্থান থেকে সচেতন রয়েছি।
প্রতি ঘণ্টায় হাত ধোয়ার ব্যবস্থা ট্রাফিক পুলিশের
ডিএমপি ট্রাফিক উত্তর বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) সাইফুল হক বলেন, ট্রাফিক সদস্যদের দায়িত্বরত অবস্থায় মাস্ক-হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। এছাড়া বর্তমানে গাড়ির সংখ্যা অনেক কমে গেছে। মামলাও কমে গেছে। এরপরেও ট্রাফিক সদস্যদের রাস্তাতেই থাকতে হবে। এক ঘণ্টা পরপর প্রতিটি সদস্যকে হ্যান্ডওয়াশ বা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধুয়ে নিজেদের পরিষ্কার থাকতে বলা হয়েছে।
প্রতি ইউনিটে কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা
পুলিশের প্রতিটি ইউনিটকে নিজস্ব কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা রাখতে নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ সদরদপ্তর। কারও মধ্যে অসুস্থতার কোনো লক্ষণ দেখা দিলে যেন তাদের সঙ্গে সঙ্গে কোয়ারেন্টিনে রাখা যায়। এছাড়া পুলিশ সদস্যদের নিজেদের মধ্যেও এলোমেলোভাবে মিশতে নিষেধ করা হয়েছে।
এসি হান্নানুল ইসলাম বলেন, বিদেশফেরতদের কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে গিয়ে এ বিষয়ে পুলিশ সদস্যদের স্পষ্ট ধারণা রয়েছে। কোনো সদস্যের মধ্যে সামান্য লক্ষণ দেখা দিলেও তাদের কোরারেন্টিনে পাঠাতে যেন বিলম্ব না হয় এমন নির্দেশনা রয়েছে।
ডিসি সাইফুল হক বলেন, ট্রাফিক সদস্যদের মধ্যে জ্বর, ঠাণ্ডা-কাশি উপসর্গ দেখা দিলেই তাদের হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠিয়ে দিচ্ছি। এমন কোনো লক্ষণ কারও মধ্যে দেখা গেলে সঙ্গে সঙ্গে নোটিশ করতে বলা হয়েছে।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) সদস্যদের নিরাপত্তার বিষয়ে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বাংলানিউজকে বলেন, যত রোগ-বালাই কিংবা দুর্যোগই হোক, আমরা কখনও পিছপা হই না। বরং সামনে এগিয়ে যাই। আমাদের ধর্ম ও মূল লক্ষ্য মানুষের সেবা করা।
করোনা পরিস্থিতিতে নিজেদের সুস্থ রাখতে বাহিনীটির সদস্যদের প্রতি বেশকিছু নির্দেশনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কাউকে ছুটি নিতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফিরলে তাদের জ্বর-সর্দি-কাশিসহ নির্দিষ্ট কিছু পরীক্ষা করার কথা বলা হয়েছে।
এছাড়া আমরা সবাইকে মাস্ক সরবরাহ করার চেষ্টা করছি। প্রত্যেক সদস্য যেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকেন, সে বিষয়ে যথেষ্ট উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। করোনা ভাইরাসের উপসর্গের বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে নানা উদ্যোগের কথাও জানান তিনি।
সার্বিক বিষয়ে পুলিশ সদরদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) সোহেল রানা বাংলানিউজকে বলেন, পুলিশ সদস্যদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। প্রথম দিন থেকেই নানাভাবে ব্রিফ করে তাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলা হচ্ছে। আমরা প্রতিটি ইউনিটে হোম কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা নিয়েছি। যেন প্রয়োজনে যেকোনো সদস্যকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা যায়।
সবাইকে কর্মক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার পাশাপাশি হ্যান্ড স্যানিটাইজার-মাস্ক ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। পুলিশ সদস্যদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তায় ইতোমধ্যে বেশকিছু পিপিই সংগ্রহ করার কথাও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০২০
পিএম/টিএ