ঢাকা, সোমবার, ১৩ মাঘ ১৪৩১, ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ২৬ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় সাধারণ মানুষ

ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২০
উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় সাধারণ মানুষ

ঢাকা: ধীরে ধীরে সক্রমণ এবং তারপর মৃত্যু। করোনায় দুটোই দেখেছে বাংলাদেশ। তারপর থেকেই এ ভাইরাস নিয়ে একধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের মাঝে। 

রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এবং মানুষের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্রই জানা গেছে।  একেতো রাজধানী এখন প্রায় জনশূন্য, আর যারা আছেন বা প্রয়োজনের তাগিদে পথে বের হচ্ছেন, তারাও আছেন উৎকণ্ঠা আর আতঙ্ক নিয়ে।

বুধবার (২৫ মার্চ) রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকায় কথা হয় নাজমুল হাসানের সঙ্গে। গণপরিবহনে যাত্রা করা এইব্যক্তি বলেন, সরকার এরই মাঝে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে কিন্তু করোনা নিয়ে আতঙ্ক কাটছে না। এ নিয়ে যতটা না আতঙ্ক, তার থেকে বেশি সাবধানতা আর উদ্বেগ। এই যে আমরা বাসে যাচ্ছি, এটাও তো নিরাপদ না। গণপরিবহন তো নিরাপদ না। কে জানে করোনা সংক্রমণে থাকা কেউ এই বাসে উঠেছে বা উঠেছিল কি না!

রাজধানীর কল্যাণপুরে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা শিক্ষার্থী বোরহান উদ্দিনের সঙ্গে।

গ্রামে ফিরতে উদ্যত এই শিক্ষার্থীর নিজের থেকে পরিবারের উদ্বেগেই আতঙ্কিত বেশি।

কথা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, করোনা নিয়ে আমি না যতটা আতঙ্কিত, তার থেকে আমাকে নিয়ে বেশি আতঙ্কিত গ্রামে থাকা আমার পরিবার। তাদের কথায় একপ্রকার বাধ্য হয়েই ঢাকা ছাড়ছি বলা যায়। আর আতঙ্কের বিষয় নিয়ে বলতে হয়, তবে বলা যায় এই পরিস্থিতিতে সাধারণ জনগণের ওপর যে প্রভাব পড়বে, সেটিই একটি বড় বিষয়। অন্তত চিকিৎসা ব্যবস্থাটা আরো জোরদার করা উচিত এখন।

দেশের অনেক নাগরিক ইতালি, মালেয়শিয়া, বাহরাইনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বাড়ি এসেছেন এই আতঙ্কের মধ্যেই। তারা সরকারি কোনো আইন না মেনে অবাধে হাট-বাজারে ঘুরেও বেড়াচ্ছেন। এতে সাধারণ মানুষের মাঝেও চরম আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে গাবতলীর বাসিন্দা আব্দুর রউফ বলেন, দেশে ফেরত আসা সব প্রবাসীকে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে।

এটা আমাদের ১৫দিনের একটা চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জে আমাদের সব নাগরিককে সহযোগিতা করতে হবে। এই চ্যালেঞ্জেও সবার  সচেতনতায় হয়তো বা দেশ অনেক বড় ঝুঁকির মধ্য থেকে বেরিয়ে আসতে পারে।  

কিন্তু এরকিছুই মানছেন না দেশে আসা প্রবাসীরা। ফলে সেখান থেকে যেমন সংক্রমণ বাড়ছে, তেমনই শঙ্কাও।

এদিকে করোনা ভাইরাসের প্রভাব পড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারে। খাদ্যদ্রব্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কেনার হার বেড়ে যাওয়ায় পণ্যের দাম বেড়ে গেছে।

পাশাপাশি বেড়েছে মাস্ক এবং স্যানিটাইজারের দামও। এ নিয়ে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম জানান, চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেশি হয়ে গেছে। সংক্রমণের থেকে সাধারণ মানুষের জন্য এটাও একটা আতঙ্ক।

আর সরকারের নীতিগত সমালোচনা করে পঞ্চাষোর্ধ্ব বাসযাত্রী কমল কুমার বলেন, এতোদিন সরকার কিছু করলো না। বিদেশ থেকে দেদারছে মানুষ আসতে দিয়েছে, তাদের আলাদা করে রাখেনি। যে যেমনে পারছে, ঘুরছে-ফিরছে। স্কুল বন্ধ করলো সেদিন। পৃথিবীর সবদেশ জরুরি অবস্থা জারি করেছে। আমাদের সরকার এখনও এর ভয়াবহতা বুঝতে পারছে না। ছেলে-মেয়েরা বলছিল, আর কিছুদিন গেলে বোঝা যাবে আমাদের কী অবস্থা হবে!

তবে এতো কিছুর পরেও আশা ছাড়ছেন না কেউ-ই। তাই তো নিলুফার রহমানের মতো পরিচ্ছন্নকর্মীরাও বলতে পারেন,  একটা রোগ যখন এসেছে, ব্যবস্থা একটা নিশ্চয় হবে। আমরা তো সবাই নিজের ভালোটা নিয়েই ভাবছি, আমাদের ভালোর জন্যই চেষ্টা করছি। আর এই রোগে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকলেই হলো। বাকিটা আল্লাহর উপর।

এদিকে এরই মাঝে দেশজুড়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। িএ পরিস্থিতিতে নেমেছে সেনাবাহিনী। বুধবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণও দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  

বাংলাদেশ সময়: ১২৫০ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২০
এইচএমএস/ওএইচ/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।