করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার সারাদেশে বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) থেকে গণপরিবহন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এর আগের অর্থাৎ বুধবার (২৫ মার্চ) গাবতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে মানুষের এমন ভিড় দেখা গেছে।
করোনা পরিস্থিতিতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে বাড়িতে অবস্থানের কথা বলা হলেও জীবিকা কিংবা বিভিন্ন প্রয়োজনে রাজধানীতে থাকা মানুষজন মনে করছেন, এ সময় রাজধানী তাদের জন্য নিরাপদ নয়! তাই দলে দলে বাড়ি ফিরছেন তারা। যদিও তাদের ও ভ্রমণ বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। এরপরও কেউ-ই মানছেন সরকারের আহ্বান।
রাজধানীর একটি সুপারশপে কাজ করেন রিয়াজুল ইসলাম রমজান। থাকেন মিরপুর ১ এর প্রথম কলোনিতে। করোনা ভাইরাসের কারণে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত কর্মস্থল ছুটি ঘোষণা করায় ফরিদপুর গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন তিনি।
রমজান বাংলানিউজকে বলেন, বাসে-লঞ্চে করে বাড়ি যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু এরপরও রাজধানীতে মেছ বাড়িতে থাকি। তাই এখানে একটা আতঙ্কে দিন কাটছে। অফিস বন্ধ, বাড়ি থেকেও বারবার ফোন করছেন স্বজনেরা। তাই ঝুঁকি নিয়েই বাড়ির পথে রওনা হয়েছি।
তবে তিনি জানান, ফরিদপুরের বাস পেতে বেগ পেতে হয়েছে তাকে। যা পেয়েছেন সেখানেও আসন খালি নেই। তাই গাদাগাদি করেই যেতে হচ্ছে বাড়ি।
এক প্রশ্নের উত্তরে রমজান বলেন, বেতন অগ্রিম হয়ে গেছে। ঢাকায়ও ভাইরাস সেভাবে ছড়ায়নি। কিন্তু ছুটি যেহেতু তাই পরিবারের সবার সঙ্গে দেখা করতে বাড়িতেই চলে যাচ্ছি।
এক সপ্তাহ আগে মেয়ের বাড়ি টঙ্গী পূর্ব আরিসপুরে বেড়াতে আসেন মাগুরার মুস্তাক হোসেন। এই মুহূর্তে গণপরিবহন বন্ধের ঘোষণা শুনতে পেরেছেন তিনি।
মুস্তাকের ভাষ্য, করোনার কথা শুনছি। মেয়ে বলছিল থেকে যেতে। কিন্তু বাড়িতেও লোকজন রয়েছে। তারা বেশ চিন্তিত। তাই বাড়ির পথে রওনা দিয়েছি।
বর্তমান পরিস্থিতিতে বাসে যাতায়াত ঝুঁকিপূর্ণ- এমনটা বলা হলে পেশায় কৃষিজীবী মুস্তাক বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ শুনেছি। কিন্তু আমি তো মাস্ক ও জীবণুনাশক ব্যবহার করছি। বাড়ি তো যেতেই হবে। আল্লাহ-ই রক্ষা করবেন।
গণপরিবহন বন্ধ ঘোষণাকে পুঁজি করে এ অবস্থায় বাসের লোকজন বেশি টাকা নিচ্ছেও বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন গাবতলী বাসটার্মিনালের দ্রুতি পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার আতিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে না সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।
আতিকুল বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল তারিখ পর্যন্ত গণপরিবহন আমরা বন্ধ রাখবো। আমাদের যাবতীয় সুরক্ষা ও সরকার দেশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু মানুষ ঠিকই যাতায়াত করছে। জটলা পাকিয়ে চলাফেরাও করছে।
হানিফ এন্টারপ্রাইজের কাউন্টার মাস্টার রুবেল আহমেদ বলেন, যাত্রীরা আসলে ঈদের আমজে বাড়ি যাচ্ছেন। তারা বুঝতেই পারছেন না এটা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ। তবে বেশির ভাগ যাত্রী আগেই চলে গেছেন। আজকে একটু যাত্রীদের চাপ আছে।
বাংলাদেশ বাস-ট্রাক মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক কার্যনির্বাহী সদস্য মো. সালাউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে বাস পারাপার বন্ধ ঘোষণা হলেই আমরা এখান থেকে বাস চলাচল বন্ধ করে দেবো।
একপ্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরাও তো জানি এভাবে যাওয়া ঠিক হচ্ছে না। কিন্তু যাত্রী তো কমছে না। সবাই বাড়ি যেতে চাইছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২০
এমএমআই/এমএ