এ অবস্থায় দুগ্ধশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য মিল্কভিটা, প্রাণ ডেইরী ও ব্র্যাকের আড়ং ডেইরীকে দুধ কিনে পাউডার ও অন্যান্য খাদ্যপণ্য উৎপাদন করার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ ডেইরী ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশেন।
বুধবার (২৫ মার্চ) সংগঠনটির মোহাম্মদপুরের কার্যালয়ে আয়োজিত ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেশের দুগ্ধশিল্প রক্ষার আবেদন’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ অনুরোধ জানানো হয়।
এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন। এ সময় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শাহ এমরান, সহ-সভাপতি আলী আজম রহমান শিবলী উপস্থিত ছিলেন।
ইমরান হোসেন বলেন, পশুখাদ্যের উচ্চমূল্য, বিদ্যুৎ ও পানির বিল কৃষির আওতায় না এনে বাণিজ্যিকীকরণসহ নানা সমস্যার কারণে দেশের দুগ্ধ খামার শিল্প হুমকির মুখে। নতুন করে যোগ হয়েছে করোনা ভাইরাস। দেশে বার্ষিক চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশ বা ৯৯ লাখ মেট্রিক টন দুধ উৎপাদন করছে দুগ্ধ খামারিরা। গ্রামের একজন কৃষক দুধ বিক্রি করে প্রতিদিন গাভি ও পরিবারের আহারের ব্যবস্থা করেন।
তিনি বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে এক সপ্তাহ ধরে প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিরা দুধ বিক্রি করতে চরম অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন। দুধের দাম কোথাও কোথাও ১০-১২ টাকা লিটারে নেমে এসেছে। অবিক্রিত থেকে যাচ্ছে ১২০ থেকে ১৫০ লাখ লিটার দুধ। যার বাজার মূল্য প্রায় ৫৭ কোটি টাকা। একমাস এই অবস্থা চলতে থাকলে ক্ষতি হবে ১ হাজার ৭১০ কোটি টাকা।
ইমরান হোসেন বলেন, দেশে বৃহৎ দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ কোম্পানিগুলো (মিল্কভিটা, প্রাণ ডেইরী ও ব্র্যাকের আড়ং ডেইরী) বর্তমানে মোট উৎপাদনের মাত্র ৫ শতাংশ বা ১৩ লাখ ৫৯ হাজার লিটার দুধ প্রতিদিন সংগ্রহ করে। বাকি ২ কোটি ২৮ লাখ ৩৬ হাজার লিটার বা মোট উৎপাদনের ৮৪ শতাংশ দুধ খামারিরা মিষ্টি দোকান ও বাসা বাড়িতে বিক্রি করেন।
সাম্প্রতিক করোনা ভারাইসের প্রভাবে বর্তমানে মিষ্টির দোকানগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। জনমনে অস্থিরতার কারণে বাড়িতেও দুধ বিক্রি বন্ধ হওয়ায় খামারিরা আজ মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন। সাড়ে ৩ লাখ দুগ্ধ খামারে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ১ কোটি ২০ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা হুমকিতে পড়েছে।
ইমরান হোসেন বলেন, দেশে ৩টি বড় কোম্পানির প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৩ লাখ লিটার দুধ সংগ্রহ করে গুড়া দুধ তৈরির সক্ষমতা আছে। পাশাপাশি প্রায় আরো ১০ থেকে ১২টি কোম্পানির দুধ জাতীয় পণ্য (ঘি, মাখন, ফ্লেভারড মিল্ক, আইসক্রিম, ক্রিম) তৈরি করার সক্ষমতা আছে। এ অবস্থায় দেশের দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাত কোম্পানিগুলো এগিয়ে না এলে দুগ্ধশিল্প ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যাবে। এসব কোম্পানি খামারিদের সহযোগিতায় এগিয়ে না এলে প্রায় ৫০ শতাংশ খামার বন্ধ হয়ে যাবে।
‘এছাড়া আসন্ন রমজানে দুধ এবং দুধ জাতীয় পণ্যের সঙ্কট তৈরি হতে পারে। তাই এই সময় দুধ মজুদ করে রাখতে পারলেই দেশে যেমন বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয় হবে, তেমনি দেশের খামার শিল্পকে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে,’ যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২০
এসই/এমএ/এমকেআর