ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন স্মরণে ডাকটিকিট অবমুক্ত

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০২১
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন স্মরণে ডাকটিকিট অবমুক্ত

ঢাকা: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে দশ টাকা মূল্যমানের একটি স্মারক ডাকটিকিট ও দশ টাকা মূল্যমানের একটি উদ্বোধনী খাম অবমুক্ত করেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।

রোববার (১০ জানুয়ারি) সচিবালয়ে তার দপ্তরে এসময় তিনি পাঁচ টাকা মূল্যমানের একটি ডাটাকার্ড ও একটি সীলমোহর ব্যবহার করেন।

স্মারক ডাকটিকেট, উদ্বোধনী খাম এবং ডাটাকার্ড রোববার থেকে ঢাকা জিপিওর ফিলাটেলিক ব্যুরো থেকে এবং পরে দেশের অন্যান্য জিপিও এবং প্রধান পোস্ট অফিসগুলো থেকে সংগ্রহ করা যাবে।

দিবসটির ঐতিহাসিক তাৎপর্য তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ১০ জানুয়ারি। বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিস্মরণীয় একটি দিন। ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন-সার্বভৌম ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেন।

মন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতাযুদ্ধের মহান বিজয় পূর্ণতা পায়। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর বাংলাদেশ প্রবেশ করে আলোকিত অভিযাত্রায়।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফা জব্বার বলেন, বাঙালিদের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হওয়ার পর বিশ্বনেতারা বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। পরাজিত পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আন্তর্জাতিক চাপে শেষ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুকে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। তিনি ২৯০ দিন পাকিস্তানের কারাগারে মৃত্যুর প্রহর গণনা শেষে লন্ডন থেকে দিল্লি হয়ে ১০ জানুয়ারি ঢাকায় পৌঁছেন।

বঙ্গবন্ধু তার বিস্ময়কর নেতৃত্বের ক্ষমতায় বিশ্ব নেতাদের কাছেও অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা এবং বাঙালিকে গৌরবান্বিত করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু লন্ডনে পৌঁছানোর কথা শুনে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি বাতিল করে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী অ্যাডোয়ার্ড হিথ ১০নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে ছুটে আসেন। প্রধানমন্ত্রী হিথ বঙ্গবন্ধুকে নজীরবিহীন সম্মান দেখান। ঐদিন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিথ নিজে তার কার্যালয়ের বাইরে এসে যতক্ষণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গাড়ি থেকে বেড়িয়ে না এলেন ততক্ষণ গাড়ির দরজা খুলে দাঁড়িয়ে রইলেন।

বঙ্গবন্ধুকে স্বদেশে ফেরার জন্য ব্রিটিশ রাজকীয় বিমান বহরের কমেট জেটে উঠানো হয় উল্লেখ করে মোস্তাফা জব্বার বলেন, বাংলাদেশে ফেরার পথে বিমানটি দুই ঘণ্টার যাত্রা বিরতি করে দিল্লিতে। ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরি ও প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী বঙ্গবন্ধুকে অভ্যর্থনা জানান।

বঙ্গবন্ধু, বাঙালি ও বাংলার প্রতি দিল্লির সমবেত জনতার বিরল ভালোবাসার দৃষ্টান্ত তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, জাতির জনক শেখ মুজিব মুক্তি পেয়ে আসার খবর শুনে দিল্লি বিমানবন্দরের পাশে হাজার হাজার ভারতীয় নারী-পুরুষ বঙ্গবন্ধুকে এক নজর দেখার জন্য ভিড় জমায়। সেখানে বক্তব্য দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। বিদেশের মাটিতে বক্তব্যের রীতি অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু সেদিন ইংরেজিতে ভাষণ শুরু করে ‘লেডিস অ্যান্ড জেন্টেলম্যান...’ বলতে না বলতেই উপস্থিত হাজার হাজার ভারতীয় দর্শক একসঙ্গে সমস্বরে চিৎকার করে তাকে বাংলায় ভাষণ দেওয়ার অনুরোধ করতে থাকেন। জনতার দাবির মুখে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী স্মিত হেসে বলেন, ‘দে নিড বেঙ্গলি’। তিনিও বঙ্গবন্ধুকে বাংলায় বক্তব্য দেওয়ার আহ্বান জানান। এরপরে বঙ্গবন্ধু ‘ভাই ও বোনেরা’ বলতেই উল্লাসে ফেটে পড়ে ভারতের অভ্যর্থনা সভার জনস্রোত।

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন কেন্দ্র করে বাংলাদেশের মানুষের আবেগ ও সে সময়কার ঢাকার চিত্র তুলে ধরে বিবৃতিতে বলা হয়, তেজগাঁও বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধুকে বহনকারী বিমানটি অবতরণ করার পর খোলা গাড়িতে দাঁড়িয়ে জনসমুদ্রের ভেতর দিয়ে রেসকোর্স ময়দানে এসে পৌঁছাতে আড়াই ঘণ্টা সময় লাগে। সেদিনের মানুষের অনুভূতি বর্ণনা করে বলা হয়, রেসকোর্স ময়দান ছিল লোকারণ্য, জয়বাংলা, জয়বঙ্গবন্ধু স্লোগানে স্লোগানে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হয়েছিল সেদিন বিজয়ের আনন্দ গীতিধারার মূর্ছনায়। বাঙালির হৃদয়ের মুকুট বিহীন সম্রাট বঙ্গবন্ধুও সেদিন বাংলার মাটিতে পা দিয়েই আবেগে কেঁদেছিলেন।

বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১৭ মিনিট জাতির উদ্দেশে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর সেদিনের ভাষণটি ছিল জাতির জন্য দিকনির্দেশনা। বাংলাদেশের আদর্শগত ভিত্তি কী হবে, রাষ্ট্র কাঠামো কী ধরণের হবে, পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে যারা দালালি করেছে তাদের কী হবে, বাংলাদেশ বহির্বিশ্ব স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য অনুরোধ, মুক্তিবাহিনী, ছাত্রসমাজ, কৃষক, শ্রমিকদের কাজ কী হবে, এসব বিষয়সহ বিভিন্ন দিক নিয়ে নির্দেশনা।

বিবৃতিতে বলা হয়, বঙ্গবন্ধুর দেশ গড়ার সংগ্রামের সেদিনের ডাকে রেসকোর্স ময়দানে উপস্থিত লাখ লাখ মন্ত্রমুগ্ধ দু’হাত তুলে সেই সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০২০
এমআইএইচ/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।