ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

পল্লবীজুড়ে চলছে আরজু গ্যাংয়ের তাণ্ডব

মিরাজ মাহবুব ইফতি, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০২১
পল্লবীজুড়ে চলছে আরজু গ্যাংয়ের তাণ্ডব গ্যাংয়ের লিডার আরজু ওরফে গান্ধা আরজু

ঢাকা: রাজধানীর পল্লবী জুড়ে চলছে আরজু বাহিনী বা ‘আরজু গ্যাং’ এর তাণ্ডব। আরজু গ্যাং এর সদস্যরা দলবেঁধে দাপিয়ে বেড়ায় পাড়া-মহল্লার অলিগলি।

ছিনিয়ে নেয়ার নেশায় মত্ত এ বাহিনীর কাছে অনেকেই হয়েছেন সর্বস্বান্ত, আবার অনেকে হয়েছেন রক্তাক্ত। নির্যাতনের শিকার হলেও অভিযোগ এবং কথা বলার সাহস করে না কেউ। কারণ অভিযোগ করলেই প্রাণনাশের শঙ্কা।  

একাধিক সূত্রে জানা যায়, ওই গ্যাংয়ের লিডার আরজু ওরফে গান্ধা আরজু। মিরপুর-১১ ফুটবল গ্রাউন্ড ক্যাম্পের বাসিন্দা এই আরজু এলাকায় বিহারী আরজু হিসেবে পরিচিত। বিহারী নেতা মোস্তাকের ভাতিজা ও পুলিশের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী মিস্টারের চাচাতো ভাই। মিস্টারের ভাই হওয়ার সুবাদে এলাকায় রয়েছে বাড়তি দাপট।  

আরজু পল্লবীজুড়েই বসিয়েছেন মাদকের কারবার। এমসিসি ক্যাম্প, ফুটবল গ্রাউন্ড ক্যাম্প, শাহীন স্কুল ক্যাম্প,কাইল্লা বস্তি, নন লোকাল রিলিফ ক্যাম্প, এবং এভিনিউ ফাইভে আরজুর রয়েছে বেশ কয়েকটি কিশোর গ্যাং। এ গ্যাং-এর সদস্যরা মাদক গ্রহণ, চুরি, ছিনতাই, অন্যের হয়ে মারামারি, দখল, বিএনপির মিছিল মিটিং ও অবরোধে লোক সরবরাহ করে। গ্যাং সদস্যদের বেশিরভাগই বখে যাওয়া তরুণ। অনেকে স্কুলের গণ্ডিতেও পা রাখেনি। গ্যাং প্রধান আরজুর ইশারা-ইঙ্গিতে পল্লবীতে মুহূর্তেই চলে তাণ্ডব।  

জানা যায়, ২০২০ সালের ২ জুনে আরজু বাহিনী তুচ্ছ তর্কতর্কিকে কেন্দ্র করে বিহারী নেতা ফাক্কু ও শাহিদ আলী বাবুল ও তার পরিবারের ওপর অতর্কিত হামালা চালায় । এ হামলায় পাঁচজনকে কুপিয়ে জখম করা হয়। এ ঘটনায় আরজুসহ কয়েকজনকে আসামি করে পল্লবী থানায় দুটি মামলা হয়েছে।  

২০২০ সালের বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে দশটায় রাজধানীর পল্লবীর ১১ নম্বরের এভিনিউ ফাইভের হাজী হোটেলের সামনে মিষ্টি খাওয়ার টাকা না দেয়ায় এক শাড়ী ব্যবসায়ীসহ তিনজনকে কুপিয়ে জখম করে আরজু ও তার সহযোগীরা। এ ঘটনায় আরজুসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে ১৯ ডিসেম্বর শনিবার পল্লবী থানায় মামলা করা হয়। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- ছাত্রলীগ নেতা জয়, ওয়াহিদ, সোহাগ, এহতেশাম, আশিক, আমান, রাসেল, সাকিল, আকাশ, সৈকত, ইমন, রানাসহ  আরও অজ্ঞাত ৭-৮ জন।

এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পল্লবী থানার (এসআই) উপ-পরিদর্শক জহির উদ্দিন জানান, মামলা হওয়ার পরের দিনই আরজু জামিনে এসেছেন। এ জন্য তাকে গ্রেফতার করা যায়নি। এখনও তদন্ত চলছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, মাস ছয় আগে ১১/সি লেন ১৪, রোড ১০ পল্লবীতে স্বামীর সামনে স্ত্রীকে উত্যক্ত করেন আরজু। এ ঘটনায় ওই নারীর স্বামী তাকে ধমক দিলে এর কিছুক্ষণ পরে আরজু তার বাহিনী নিয়ে তাদের বাড়িতে হামলা চালান। বাসা থেকে ডেকে নিয়ে ওই ব্যক্তিকে কুপিয়ে জখম করা হয়।  

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, প্রতি মাসে আরজুর লোকজনকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিতে হয়। কেউ প্রতিবাদ করলে আরজু ও তার গ্যাং এর সদস্যরা বাসাবাড়িতে তাণ্ডব চালায়। সম্প্রতি এমন দু’টি ঘটনা ঘটেছে। ভয়ে কেউ থানায় অভিযোগও দেয়নি।  

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কারো হাতে দামি মোবাইল ফোন বা মূল্যবান কিছু দেখলে বিভিন্ন ফাঁদে ফেলে তা হাতিয়ে নেয় আরজু বাহিনী।  
সিকদার নামে এক কলেজ ছাত্র জানান, বাসায় বন্ধুদের নিয়ে গল্প করার সময় একদিন দলবল নিয়ে হাজির হন আরজু। উপস্থিত সবাইকে জেরা করে তারা। আমাদের কাছে ইয়াবা ও চোরাই মোবাইল আছে বলে ‘ফিটিং’ চায়।

জানা যায়, কিশোর গ্যাং প্রধান আরজুর বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় তিনটি হত্যাচেষ্টাসহ চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে। বিএনপির হরতাল-অবরোধের সময় গ্যাং সদস্যদের দিয়ে গাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ রয়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের তিন নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী জহিরুল ইসলাম মানিক বলেন, আমার ওয়ার্ডে সাত জন কিশোরকে কাউন্সেলিং করানো হয়েছে। সবাই পড়াশুনায় মনোযোগ দিয়েছে। আরজুর অভিভাবকের সঙ্গে কথা হয়েছে। সে কাজ করছে। অভিযোগ আসলে ব্যবস্থা নেব।  

পল্লবী থানার (ওসি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী ওয়াজেদ আলী বলেন, পল্লবীর কিশোর গ্যাং অপরাধীদের তালিকা হচ্ছে। আরজুর বিষয়ে তথ্য থাকলে দেন। অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০২১
এমএমআই/আরকেআর/এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।