ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

স্বপ্ন পূরণ হলো না নাইমুরের

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০২১
স্বপ্ন পূরণ হলো না নাইমুরের নাইমুর রহমান শুভ।

নাটোর: অসুস্থ বাবাকে চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ করার স্বপ্ন নিয়ে শিক্ষা জীবন শেষ না করেই চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন নাইমুর রহমান শুভ। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারলেন না তিনি।

 

সোমবার (১১ জানুয়ারি) ভোরে নরসিংদী জেলার ভেলানগর এলাকায় দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারান তিনি। নাইমুর নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার তারানগর গ্রামের আবু বক্করের ছেলে।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট নাইমুর। বড় ভাই বিয়ে করে পৃথক সংসার গড়েছেন। নাটোর এনএস সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক পাস করেন নাইমুর। এর মধ্যে বাবা আবু বকর অসুস্থ হয়ে পড়লে তার চিকিৎসা আর সংসার খরচ যোগানোর ভার পড়ে তার কাঁধে। তাই অসুস্থ বাবাকে সুস্থ করতে সেঞ্চুরি এগ্রো লিমিটেড নামে একটি ভেটেরিনারি ওষুধ কোম্পানিতে বিক্রয় প্রতিনিধির চাকরি নেন নাইমুর। তার পোস্টিং ছিল নরসিংদী।

নাইমুরের স্বজনরা জানান, নরসিংদী শহরের ভেলানগর এলাকার ঢাকা বাসস্ট্যান্ডের পেছনে একটি মেসে ভাড়া থাকতেন নাইমুর। শনিবার দুই দিনের ছুটি কাটিয়ে বাড়ি থেকে মোটরসাইকেলে করে নরসিংদী যান। এ সময় আশিক নামে এক বন্ধুও তার সঙ্গে যান। সোমবার ভোরে বন্ধুকে ঢাকা যাওয়ার ট্রেনে তুলে দিয়ে মোটরসাইকেলে করে মেসে ফিরছিলেন।  

পথে চিনিশপুর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে পৌঁছালে দুর্বৃত্তদের এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে মারা যান নাইমুর। ময়নাতদন্ত শেষে মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) সকালে নাইমুরের গ্রামের বাড়িতে জানাজা শেষে মরদেহ দাফন করা হয়।

চাচাতো ভাই বিপ্লব বাংলানিউজকে জানান, নাইমুরের বুক, হাতসহ শরীরের পাঁচ জায়গায় ছুরিকাঘাত করেছে দুর্বৃত্তরা। মরদেহের পাশেই তার মোটরসাইকেলটি পড়ে ছিল। টাকা-পয়সা, মোবাইল সবই আছে, শুধু ভাই নেই। কী কারণে কারা তাকে হত্যা করেছে কিছুই বুঝতে পারছেন না।

মঙ্গলবার সকালে নাইমুরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাবা নিথর দেহ নিয়ে শুয়ে আছেন। মায়ের ও স্বজনদের কান্নায় বাতাস ভারী হয়ে আসছে। নাইমুরের বৃদ্ধা দাদি টুলু বেওয়া বুক চাপড়ে বিলাপ করতে করতে বলেন, আমার নাতি খুবই ভালো ছেলে। লেখাপড়া শেষ না হতেই চাকরি নিয়েছিল আমাদের জন্য। কিন্তু কারা আমার বুকের মানিককে কেড়ে নিল, এ বিচার কার কাছে চাইব।

নিহতের মা ইতি বেগম কান্নারত অবস্থায়ই বিলাপ করে বলেন, আমি চাইনি ছেলে এখনই এতদূরে গিয়ে চাকরি করুক, কিন্তু ওর বাবা অসুস্থ। সংসারের কথা ভেবে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ও চাকরিতে গিয়েছে। কাজের ব্যাঘাত ঘটে বলে এবার এসে মোটরসাইকেল নিয়ে গেল। কিন্তু এভাবে খুনিরা আমার বুক খালি করে দিল, এখন আমাদের কী হবে?

নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিপ্লব কুমার চৌধুরী মোবাইলে জানান, হত্যাকাণ্ডটি ভোর রাতে ঘটেছে। মোটরসাইকেলসহ সবই আছে তাই এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে রহস্য সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ রহস্য উদঘাটনে কাজ করছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।