ঢাকা: আধুনিক প্রযুক্তি এবং সুযোগ-সুবিধায় রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন অনেকখানি এগিয়ে গেলেও সেসব থেকে বঞ্চিত পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধীন এই কর্মীদের এখনও কাজ করতে হচ্ছে পুরনো আমলের সরঞ্জাম দিয়েই।
রাজধানীর উত্তর অংশের দেখভালের দায়িত্ব ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি)। ঢাকার এই অংশটিকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে দুই হাজার ৮০০ জন নিজস্ব কর্মী আছে ডিএনসিসির। পুরনো ৫৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৪৬টি ওয়ার্ডে দায়িত্বপালন করেন এসব কর্মীরা। বাকি আটটি ওয়ার্ড এবং নতুন ১৮টি ওয়ার্ডে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় আরও দায়িত্ব পালন করেন প্রায় এক হাজার ৯৫০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী।
ডিএনসিসি এলাকার মিরপুর, আগারগাঁও, তালতলা, বাড্ডা এবং বনশ্রীসহ বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখা যায়, বহুদিনের প্রচলিত ঝাড়ু, হাতে টানা গাড়ি (হ্যান্ড ট্রলি), বেলচা, নিড়ানির মতো যন্ত্রপাতি দিয়ে চলছে আবর্জনা পরিষ্কারের কাজ। অথচ সড়কের ধুলাবালি পরিষ্কার করতে সিটি করপোরেশনের আছে তিনটি সুইপার ট্রাক। কিন্তু সেগুলোকে বসিয়ে রাখা হয়েছে। গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে তিনটি করে মোট ছয়টি সুইপার ট্রাক দেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তবে সেসব ট্রাক এখনও কাজে ব্যবহার করা শুরু করেনি ডিএনসিসি।
উপরন্তু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের বেশিরভাগ কর্মীরই নেই হ্যান্ড গ্লাভস, বুট জুতা এবং মাস্কের মতো ন্যূনতম স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী। এর জন্য অবশ্য একে অপরকে দুষছে সিটি করপোরেশন এবং পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। দায়িত্ব পালনের জন্য বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম না পাওয়ার অভিযোগ পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের। আবার নিজেদের সুযোগ সুবিধার এমন অপ্রতুলতা নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতেও পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের মধ্যে আছে ব্যাপক ভীতি।
অন্যদিকে বারংবার বিভিন্ন উপকরণ দেওয়া হলেও পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের মধ্যেই সেগুলো ব্যবহারে অনীহা রয়েছে বলে দাবি সিটি করপোরেশনের কর্তাদের।
রাজধানীর তালতলা এলাকার এক পরিচ্ছন্নতাকর্মী পরিচয় গোপন রেখে বাংলানিউজকে বলেন, করোনার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র দুই বার কিছু মাস্ক, গ্লাভস আর এক জোড়া বুট পেয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো কিছুদিন পরেই আর ব্যবহারের অবস্থায় ছিল না। এরপর থেকে আর কোনো কিছু দেওয়া হয়নি। তাই নিজেরা যেভাবে পারি সেভাবেই কাজ করি।
সম্প্রতি তালতলা এসটিএস (সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন) এ গিয়ে এই পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে মাস্ক, গ্লাভস বা বুট ছাড়াই ময়লা আবর্জনার মধ্যে কাজ করতে দেখা যায়।
মিরপুর পল্লবী এলাকার আরেক পরিচ্ছন্নতা কর্মী কাঞ্চন বলেন, আমাদের দিকে এসব বিষয়ে কারও নজর নাই। মাঝে মাঝে যেসব জিনিস দেয় সেগুলো পরে এই কাজ করা যায় না। আমাদেরকে আমাদের জন্য উপযোগী সরঞ্জাম দিতে হবে।
এসব বিষয়ে ডিএনসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে এই বিভাগটিকে আরও আধুনিকায়ন করা হবে জানানো হয়। একই সাথে কর্মীদের মাঝে বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি বিশেষ করে পোশাক নিয়মিত সরবরাহ করা হয় বলেও দাবি করা হয়। ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এম সাইদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, একজন কর্মীকে প্রতি বছর দুই জোড়া নতুন পোশাক এবং এপ্রন সিটি করপোরেশনের নিজস্ব খাত থেকে দেওয়া হয়। এছাড়া বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং দাতব্য সংস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম দেওয়া হয়।
করোনার প্রকোপের শুরুর সময় থেকে এখন পর্যন্ত কর্মীদের মাঝে অন্তত চার দফা সরঞ্জাম দেওয়া হয়েছে বলে দাবি এই কর্মকর্তার। সাইদুর রহমান বলেন, করোনার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র দুই দফা স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী দেওয়া হয়েছে এমন কথা ঠিক নয়। অন্তত চারবারের কথা এখনই বলতে পারি। এছাড়া জাইকা, সুইডিশ দূতাবাসের মতো সংস্থা থেকেও কয়েক দফায় সাহায্য এসেছে। সেগুলো পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ছিল পিপিই, হ্যান্ড গ্লাভস, বুট, হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং মাস্কের মতো জিনিস। দফায় দফায় এগুলো তাদের জন্য ইস্যু করা হয়েছে।
তবে এসব জিনিস পরিচ্ছন্নতাকর্মীরাই ব্যবহার করতে চান না বলে জানিয়েছেন সাইদুর রহমান। তিনি বলেন, আমরা এসব দিলেও পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা নিজেরাই পরতে চান না। তারা বলেন, পিপিই পরে নাকি কাজ করা যায় না। এরজন্য আমাদের দেশের সামগ্রিক তাপমাত্রার বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে। এমন তাপমাত্রায় তারা পিপিই, গ্লাভস বা বুট পরে কাজ করতে স্বচ্ছন্দ অনুভব করে না। তবে আমরা এটা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি যেন সবাই অন্তত মাস্ক পরা থাকে সবসময়। এর জন্য আমরা ওয়ার্ড সর্দার ও সুপারভাইজারদের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে কর্মীদের পরামর্শ দিয়েছি, তাদের বোঝাচ্ছি। প্রতি জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী একটা করে সাবান পান। সাবান কেনার টাকা আমরা তাদেরকে দিয়ে দিচ্ছি।
বাংলাদেশ সময়: ১১০৯ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০২১
এসএইচএস/এজে