ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

চালকের নির্দেশে বাকপ্রতিবন্ধী নারীকে ছুড়ে ফেলেন হেলপার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৫ ঘণ্টা, মার্চ ৯, ২০২১
চালকের নির্দেশে বাকপ্রতিবন্ধী নারীকে ছুড়ে ফেলেন হেলপার

ঢাকা: ভুক্তভোগী বাকপ্রতিবন্ধী নারীর কাছে ভাড়া না থাকায় বাসের ভেতরে প্রথমে তাকে নাজেহাল করেন হেলপার নাহিদ। এরপর বাসের চালক সবুজের নির্দেশনায় চলন্ত বাস থেকে তাকে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়।

মঙ্গলবার (০৯ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে রাজধানীর কুর্মিটোলায় র‌্যাব সদর সফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ।

গত ৭ মার্চ সকালে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থানাধীন কোনাখোলা এলাকায় এন মল্লিক পরিবহনের একটি বাসে (নম্বর: ঢাকা মেট্রো-ব-১৩-১৫২১) ওঠেন বাকপ্রতিবন্ধী এক নারী। চলন্ত বাসেই ভাড়া নিয়ে ওই নারী যাত্রীকে হেনস্থা করে বাসের হেলপার নাহিদ। একপর্যায়ে রোহিতপুরে এসে বাসের চালক সবুজের নির্দেশনায় চলন্ত বাস থেকে বাকপ্রতিবন্ধী ওই নারীকে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় ভুক্তভোগী ওই নারী গুরুতর আহত হন। ঘটনার পর তার স্বজনরা কেরানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। সোমবার (০৯ মার্চ) দিনগত রাতে কেরানীগঞ্জের ধলেশ্বর সাকিন কুচিয়ামারা এলাকায় অভিযান চালিয়ে বাসের চালক সবুজ (২৫) ও হেলপার নাহিদকে (১৯) কেরানীগঞ্জ কোনাপাড়া থেকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় এন মল্লিক পরিবহন বাসটিও জব্দ করে র‌্যাব-১০।  

অভিযানে তাদের কাছ থেকে ২টি মোবাইল ফোন, নগদ ৮০০ টাকা ও ১টি ড্রাইভিং লাইসেন্স জব্দ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, ভুক্তভোগী নারী বাকপ্রতিবন্ধী হওয়ার তার চলাচলে ভাড়ার বিষয়টি পরিবহন কর্তৃপক্ষ সিথিল রেখেছিল। কিন্তু বাসে ওঠার পর ভুক্তভোগীর কাছে ভাড়া না থাকায় বাকবিতণ্ডার মাধ্যমে নাজেহাল করে চলন্ত বাস থেকে তাকে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়।

এ ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ঘটনাটি মানুষের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করে। বাকপ্রতিবন্ধী এ নারীকে যে পাশবিক নির্যাতন করে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে তা সাধারণ মানুষজনকে আতঙ্কিত করেছে।

তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার আসামিরা জানান, বাকপ্রতিবন্ধী ওই নারী কেরানীগঞ্জের কোনাখোলা এলাকা থেকে একটি নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়ার জন্য বাসে ওঠেন। পরে তার কাছে হেলপার ভাড়া চাইলে তিনি তাকে কাগজে কলমে লিখে জানান যে, তার কাছে পর্যাপ্ত টাকা নেই। একথা শুনে হেলপার ক্ষিপ্ত হয়ে ওই নারীর সঙ্গে বাকবিতণ্ডা করতে শুরু করেন। ওই নারীর সঙ্গে এমন আচরণ করতে দেখে বাসের বাকি যাত্রীরা হেলপারকে বাঁধা দেয়। কিন্তু হেলপার কারো বাঁধা না মেনে এক পর্যায়ে বাসচালক সুজনের নির্দেশে বাকপ্রতিবন্ধী নারীকে চলন্ত বাস থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেন।

এতে ওই নারী পড়ে যাওয়ার পর গোংড়াতে থাকেন। স্থানীয়রা ওই নারীকে উদ্ধার করে এবং চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যায়। ভুক্তভোগীর পরিবার এ বিষয়ের দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা চেষ্টা মামলা দায়ের করেন।

তিনি আরও বলেন, আমরা তদন্তে জানতে পারি ওই নারী এন মল্লিক পরিবহনের নিয়মিত যাত্রী ছিলেন। বাকপ্রতিবন্ধী হওয়ায় পরিবহনের একজন কর্মকর্তা ওই নারীর যাতায়াতে ভাড়া শিথিল করে দিয়েছিলেন।

চালক ও হেলপার কি পালিয়ে গিয়েছিল কি না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আশিক বিল্লাহ বলেন, ঘটনার পর চালক ও হেলপার স্বাভাবিকই ছিলেন। কিন্তু ঘটনাটি ভাইরাল হওয়ায় তারা পালিয়ে যান। পরে তাকে খুঁজে বের করে গ্রেফতার করা হয়।

স্থানীয়রা বলছে, এন মল্লিক পরিবহনের বিরুদ্ধে এমন নির্যাতনের অনেক অভিযোগ রয়েছে, সে বিষয়টি র‌্যাব খতিয়ে দেখেছে কি না? জানতে চাইলে র‍্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমরা জানি। সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে।

অভিযুক্ত চালক ও হেলপারের বিরুদ্ধে র‍্যাব কি কি পদক্ষেপ নেবে? জানতে চাইলে লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, চালক সবুজ মিয়া হালকা যানের ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়ে ভারী যান (বাস) চালাতেন। ভাড়া নিয়ে বিরোধে বাস থেকে নারীকে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত বাসচালক সবুজ মিয়ার ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিলের আবেদন চেয়ে আমরা বিআরটিএ-তে লিখিত চিঠি দেবো। এছাড়াও বাসটির রুট পারমিট রয়েছে কি না তা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য বিআরটিএ'তে চিঠি দেওয়া হবে।

 

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০২১
এসজেএ/এমআরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।