ফেনী: ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার শুভপুর ইউনিয়নের জয় চাঁদপুর এলাকা ভূমি অফিসের পাশে প্রায় শত বছর ধরে বসবাস করছেন বেশকয়েকটি পরিবার। সরকারি ওই অফিসের পাশ দিয়েই রয়েছে ওই পরিবারগুলোর চলাচলের একমাত্র পথ।
এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে বুধবার (১০ মার্চ)। কুয়েত প্রবাসী মোশারফ হোসেনের অসুস্থ মাকে নিয়ে আসা অ্যাম্বুলেন্স তার বাড়িতে প্রবেশ করতে পারেনি। কোনো রকমে তারা কাঁটাতারের বেড়ার নিচ দিয়ে টেনে হিচড়ে বৃদ্ধ অসুস্থ মোশারফের মা জাহানারা বেগমকে নেওয়া হয়েছে তার ঘরে।
এভাবেই ভোগান্তি পোহাচ্ছে ওই পরিবারগুলো। উপায় না দেখে গ্রামের ৬৫টি পরিবার ঘুরছে প্রশাসন ও জন প্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে। সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গত বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) তারা আসেন জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজজামানের কাছে।
চলাচলের রাস্তা উন্মুক্ত রাখার দাবিতে ফেনী জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে তারা। এছাড়া করা হয়েছে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি। কিন্তু এতে কোনো উপায় বের হচ্ছে না ভুক্তভোগী ওই পরিবারগুলোর।
তারা বলছে, একজন মানুষ মারা গেলে তার মরদেহ বাড়ির বাহিরে নেওয়ার রাস্তাটাও তাদের নেই। এছাড়া কোনো গর্ভবতী নারীকে চিকিৎসকের কাছে নেওয়ার রাস্তাটাও তাদের থাকবে যদি ভূমি অফিস তাদের চলাচলের রাস্তা না দেয়।
এলাকাবাসী বলেছে, শুভপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের পশ্চিম ও উত্তর পাশে জয়চাঁদপুর গ্রামের দুই নম্বর ওয়ার্ডে প্রায় ১০০ বছর ধরে ৬৫টি পরিবারের তিন শতাধিক মানুষের বসবাস। চলাচলের ক্ষেত্রে শুভপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের জায়গার ওপর দিয়ে তাদের মূল সড়কে উঠার জন্য যাতায়াত করতে হয়।
সম্প্রতি উপজেলা ভূমি অফিস সরকারি সম্পত্তির বে-দখল ও নিরাপত্তার স্বার্থে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করার উদ্যোগ নেন। সীমানা প্রাচীর ও কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ হলে এলাকাবাসীর চলাচলের এক মাত্র রাস্তাটি স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাবে।
তারা আরও জানায়, চলাচলের বিকল্প রাস্তা না থাকায় এলাকাবাসীর মধ্যে চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা দেখা দেয়।
এর আগে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে তাদের চলাচলের একমাত্র রাস্তা উন্মুক্ত রাখার জন্য লিখিত আবেদন করা হয়েছিল তাতে বরফ গলেনি। শেষ চেষ্টা হিসেবে তারা এসেছিলেন জেলা প্রশাসকের কাছে।
চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি উন্মুক্ত রাখার দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসকে তারা বলেছেন, প্রায় একশ’ বছর ধরে আমরা এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করে আসছি। এখন সরকার আমাদের চলার পথ বন্ধ করে দিলে আমরা কোথায় যাবো।
এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের কাছে মানবিক দিক বিবেচনা করে চলাচলের রাস্তা উন্মুক্ত রাখার জন্য সহনুভূতি কামনা করেছেন তারা।
এদিকে জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজজামান বাংলানিউজcRকে বলেন, সরকারি জায়গা সরকার ইচ্ছে করলেই সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করতে পারে। সংরক্ষণের জন্য যেকোনো ধরনের পদক্ষেপ সরকার গ্রহণ করতে পারে। সরকারি জায়গা সরকার না চাইলে সাধারণ মানুষের ব্যবহার করার নিয়ম নেই।
স্থানীয় শুভপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ সেলিম বাংলানিউজকে বলেন,
ওই পরিবারগুলোর হয়ে জেলা প্রশাসন এবং উপজেলা প্রশাসনের কাছে অনেকবার গিয়েছি, যাতে করে তারা চলাচলের পথটি পায়। সাবেক জেলা প্রশাসক মনোজ কুমার পরিবারগুলোর চলাচলের জন্য মৌখিকভাবে জায়গাও নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমান প্রশাসন আবার সেখানে কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৩২১ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২১
এসএইচডি/আরআইএস