ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

ব্যতিক্রম কিছুর ইচ্ছা থেকেই ট্রেনচালক সালমা

দীপন নন্দী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০২১
ব্যতিক্রম কিছুর ইচ্ছা থেকেই ট্রেনচালক সালমা

ঢাকা: মেয়েরা তো সাধারণত শিক্ষিকা বা চিকিৎসক হতে চান, আপনি কেন রেল চালনার মতো পেশায় এলেন—প্রথমে এ প্রশ্নটিই ছিলো তার কাছে। জবাবে তিনি বললেন, ব্যতিক্রম কিছু করার ইচ্ছা থেকেই রেল চালনার পেশায় আসা।

এখন অনেক মেয়ের কাছে আমি অনুপ্রেরণা। এটাই আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।  

ট্রেনচালক সালমা খাতুনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বাংলানিউজকে বলেন তার সংগ্রামের কথা, স্বপ্নের কথা।

প্রথমেই শোনালেন এ পেশায় আসার গল্প। তিনি বলেন, ২০০২ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে আমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণিবিদ্যায় ভর্তি হই। শিক্ষার্থী হিসেবে খারাপ ছিলাম না। কিন্তু সবসময় এমন একটি পেশায় যোগ দিতে চেয়েছিলাম, যা সচারচর কেউ আসে না। এ ইচ্ছার কথা আমার পরিবারের সদস্যরাও জানতেন। আমি অনার্সে পড়ার সময় আমার ভাই জানালেন, রেলওয়েতে সহকারি চালক হিসেবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। সে অনুযায়ী, পরীক্ষা দিয়ে এ পেশায় এসেছি। এই ৮ মার্চ আমার এ পেশায় আসার ১৮ বছর পূর্ণ হলো।

এ পেশায় আসার প্রতিবন্ধকতার বিষয়ে জানতে চাইলে সালমা খাতুন বলেন, পুরো পেশাটাই প্রতিকূল পরিবেশের। কাজের কোনো সিডিউল নেই। সেই সঙ্গে আমার সহকর্মীরাও বলতেন, মেয়ে হয়ে কেন এ পেশায় এসেছেন? অন্য কোন পেশায় যান। কিন্তু আমার অদম্য ইচ্ছা থেকেই এ পেশায় রয়েছি।
পরিবারের সহযোগিতার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি চাকরিতে যোগ দেওয়ার পরের বছরেই আমার বাবা মারা যান। এরপর আমার ভাইয়েরা আমাকে সবসময় সহযোগিতা দিয়েছেন। বিয়ের পর আমার স্বামীও সবসময় আমার পাশে আছেন। রাতের ডিউটিতে তিনি আমাকে কর্মস্থলে দিয়ে যান। বাসায় বাচ্চাকেও দেখভাল করেন। আমি অনেক সৌভাগ্যবতী যে, আমি আমার পরিবারের সমর্থন সবসময় পেয়েছি।

বর্তমানে রেলওয়েতে ১৫ জন নারী চালক রয়েছেন, তাদের বিষয়ে জানতে চাইলে সালমা দৃপ্ত কণ্ঠে বলেন, আমি চাই আরও অনেক মেয়ে আসুক। তাদের এ পথ যেন সহজ হয়, সে জন্যই আমার এত পরিশ্রম, সাধনা। যদি মেয়েরা না আসে তাহলে আমার সব সাধনা বিফলে যাবে। মেয়েরা এগিয়ে আসবে।

তিনি বলেন, এখন অনেক মেয়ের অভিভাবকরা আমাকে ট্রেন চালাতে দেখে কথা বলতে আসেন। নিজেদের মেয়েকে দোয়া করতে বলেন। এমনকি ছেলেদের অভিবাবকরাও আসেন। তাদের অনুপ্রেরণা হতে পেরেছি। এটাই তো অর্জন।

কৃষক বাবা বেলায়েত হোসেন ও গৃহিণী মা তাহেরা খাতুনের ৫ সন্তানের মধ্যে চতুর্থ সালমা খাতুনের জন্ম টাঙ্গাইলে ১৯৮৩ সালের ১ জুন।

২০০০ সালে অর্জুনা মুহসীন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং ২০০২ সালে কুমুদিনী সরকারি কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। ২০০৪ সালে তার কর্মজীবনের সূচনা হয় সহকারী লোকোমাস্টার হিসেবে। বর্তমানে তিনি ঢাকা-নারায়নগঞ্জ এবং ঢাকা-কালিয়াপুর রুটে ট্রেন চালান।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০২১
ডিএন/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।