ঢাকা, সোমবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে নিঃস্ব দম্পতি

সাগর ফরাজী, সাভার করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২১
শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে নিঃস্ব দম্পতি আলাউদ্দিন ও তার স্ত্রী শুকেদা বেগম

সাভার (ঢাকা): মধ্য বয়সী আলাউদ্দিন ও তার স্ত্রী শুকেদা বেগম। প্রায় ২০ বছর ধরে আশুলিয়ার পলাশবাড়ী ও পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় বাসা-বাড়ির আবর্জনার পরিষ্কার করতেন তারা।

ময়লা টেনেই তাদের সংসার চলতো।

কাজের সুবিধার্থে ও প্রয়োজনে বছর খানেক আগে জমানো কষ্টের টাকা ও ঋণ নিয়ে একটি পুরাতন ট্রাক কিনেছিলেন ওই দম্পতি। যা দিয়ে ময়লা সংগ্রহ করে তা নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে ফেলা হতো। কিন্তু হঠাৎ করেই তাদের ট্রাকটি গত ০৪ মার্চ দিনগত রাতে চুরি করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। ফলে উপার্জনের এক মাত্র মাধ্যম ও শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন আলাউদ্দিন ও শুকেদা দম্পতি। বর্তমানে দিশাহারা হয়ে স্থানীয় নেতাসহ প্রশাসনের দারে দারে ঘুরছেন তারা। শেষমেশ গত ০৬ মার্চ আশুলিয়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন শুকেদা বেগম।   

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করার জন্য একটি পুরোতন ট্রাক কেনেন ওই দম্পতি। ট্রাকটির নম্বর ঢাকা-মেট্রো-ন-৮৭৬৭। ট্রাকটির আনুমানিক মূল্য ২ লাখ টাকা। তিনি তার ট্রাকটি প্রতিদিন পল্লী বিদ্যুৎ বাসস্ট্যান্ডের উত্তর পাশে ময়লা পট্টিতে রাখতেন। গত ০৪ মার্চ ময়লা ফেলা কাজ শেষে ওই একই স্থানে ট্রাকটি রাখা হয়। কিন্তু দিনগত রাতে ট্রাকটি চুরি করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।  

শুকেদা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বাসা-বাড়ির ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারের কাজ করি। ময়লা বেশি হওয়ায় আর অনেক দূর থেকে আনতে হয় বলে জমানো কষ্টের টাকা ও ঋণ নিয়ে গত ৭-৮ মাস আগে ২ লাখ টাকা দিয়ে একটি ট্রাক কিনি। ঋণের অর্ধেক টাকা পরিশোধ করেছি। কিন্তু ট্রাকটি চুরি হয়ে যাওয়ায় এখন আমরা নিঃস্ব। একদিকে ঋণ আর অন্যদিকে সংসার খরচ চালানো অসম্ভব হয়ে গেছে।  

কান্না জড়িত কন্ঠে শুকেদা বেগম আরও বলেন, আমি তো ময়লা তুলি মানুষের কাজ করি, গরিব মানুষ। আমার গাড়িটা কেন নিলো বাবা? আমার তো কারো সঙ্গে শত্রুতা নাই। এখন আমি ঋণ পরিশোধ করবো কী দিয়ে? গাড়িটা চুরি হওয়ায় ময়লা আনতে না পারায় বাসা-বাড়িতে ময়লা জমে গেছে। আমাকে একটা গাড়ির ব্যবস্থা করে দাও বাবা। চোর যদি আমার ট্রাকটি ফেরত দেয়, তবে আমি তাকে ২০ হাজার টাকা দেব। তাকে কিছু বলবো না।

আলাউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। ট্রাকটির খোঁজে ধোলাইখাল, গাবতলী ও মিরপুর গিয়েছি, কিন্তু কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না।  

তিনি বলেন, ট্রাক হারানোর পর নতুন করে গাড়ি নেওয়ার জন্য সব বাড়িওয়ালা থেকে ১ হাজার করে টাকা ধার হিসাবে চেয়েছি। পরবর্তীকালে ময়লা টেনে আস্তে আস্তে পরিশোধ করে দেবো।  গাড়িটা হারানোর পর আমরা অসহায়-নিঃস্ব।  

ট্রাক চুরি অভিযোগ তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইকবাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে গাড়িটি শনাক্তের চেষ্টা চলছে।

এ বিষয়ে আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (ওসি) জিয়াউল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি আমি জানি না। থানায় অনেকই তো অভিযোগ হয়। যেহেতু একজন কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়েছে, তাই তিনিই ব্যবস্থা নেবেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২১
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।