ঢাকা, সোমবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

ক্যানসার আক্রান্ত সন্তানকে বাঁচাতে মায়ের আকুতি

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২১ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২১
ক্যানসার আক্রান্ত সন্তানকে বাঁচাতে মায়ের আকুতি সন্তানকে বাঁচাতে মায়ের আকুতি

লালমনিরহাট: মরণব্যাধি ক্যানসারে আক্রান্ত একমাত্র সন্তান সাকিব আল হাসান সিফাতকে (১৩) বাঁচাতে সমাজের বিত্তবানদের দুয়ারে দুয়ারে ছুটছেন মা সবুজা বেগম।  

সবুজা বেগম লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার ভাদাই ইউনিয়নের কাছারি বাজার এলাকার দিনমজুর শাহজাহান আলী মেয়ে।

তার একমাত্র সন্তান সরকারি আদিতমারী জিএস মডেল উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অষ্টম শ্রেণির মেধাবী ছাত্র সিফাত মরণব্যাধি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর প্রহর গুণছে।  

স্থানীয়রা জানান, সবুজা বেগমের বিয়ের তিন বছর পরেই তাকে তালাক দেন স্বামী জামাল মিয়া। তালাকের পর বেঁচে থাকার অবলম্বন একমাত্র সন্তান ৬ মাসের শিশু সিফাতকে নিয়ে বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেন সবুজা। অন্ধের ষষ্ঠি খ্যাত একমাত্র সন্তান সিফাতকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকার সংগ্রামে প্রতিবেশীদের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে জীবন যাত্রা শুরু করেন। নিজে না খেয়েও ছেলেকে ভর্তি করেন স্কুলে। মেধাবী সিফাত কৃতিত্বের পরিচয় দিয়ে সরকারি আদিতমারী জিএস মডেল উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অষ্টম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়। মেধাবী হওয়ায় সহপাঠী বন্ধু-বান্ধব আর শিক্ষকদের প্রিয় হয়ে ওঠে সিফাত। ছেলের কৃতিত্ব দেখে তাকে বড় কর্মকর্তা বানানোর স্বপ্ন বুনেন দিনমজুর মা সবুজা বেগম।  

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি হঠাৎ অসুস্থতাবোধ করলে ছেলে সিফাতকে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান মা সবুজা। তারা তাকে চিকিৎসা না দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুরে যেতে পরামর্শ দেন। ছেলের চিকিৎসার জন্য বাড়িতে পালা মুরগিগুলো বিক্রি করে ছেলেকে নিয়ে যান রংপুর মেডিক্যাল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডা. আবুল কালাম আজাদ টুটুলের কাছে। চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাকে রেফার করেন রমেকের হোমাটোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. একেএম কামরুজ্জামানের কাছে। সেখানেও পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সিফাতের ব্লাড ক্যানসার হয়েছে বলে জানান চিকিৎসক। সিফাতকে বাঁচাতে দ্রুত ‘এ’ পজেটিভ গ্রুপের তিন ব্যাগ রক্ত ও উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। অন্ধের ষষ্ঠি ছেলে সিফাতের শরীরের মরণব্যাধি ক্যানসার বাসা বেঁধেছে শুনে নির্বাক হয়ে পড়েন সবুজা বেগম। অনেক কষ্টে রক্ত যোগার করলেও উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নেওয়া হয়নি সিফাতকে। বাড়িতেই চলছে চিকিৎসা। ছেলেকে বাঁচাতে বাবার একমাত্র সম্পত্তি ৮ শতাংশ জমি বন্দক রেখে ৪০ হাজার টাকায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করান সবুজা। এখন প্রতি সপ্তাহে দেড় হাজার টাকার ওষুধ প্রয়োজন। সেটা যোগানোই এখন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর প্রহর গুনছে মেধাবি সিফাত।  

ছবি: বাংলানিউজ

অর্থের অভাবে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর প্রহর গোনা ছেলের বাঁচার আর্তনাদ মায়ের চোখের ঘুম ও নাওয়া-খাওয়া বন্ধ হয়ে পড়েছে। চোখের সামনে ছেলে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করলেও দিনমজুর মা সবুজা বেগম নিরূপায় হয়ে অর্থ যোগাতে ছুটছেন বিত্তবানদের দুয়ারে।  

মেধাবী ছাত্র সিফাতের মরণব্যাধি ক্যানসারে খবরে তার সহপাঠী বন্ধু-বান্ধব ও শিক্ষকরাও নির্বাক হয়ে পড়েছেন। সিফাতকে বাঁচাতে উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। যা যথেষ্ট ব্যয় বহুল। এ খরচ বহন করা তার দিনমজুর মায়ের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব না। অন্ধের ষষ্ঠি সিফাতকে বাঁচাতে সমাজের বিত্তবানদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন দিনমজুর সবুজা বেগম। একইসঙ্গে সহপাঠী আর প্রিয় ছাত্রকে বাঁচাতে শিক্ষকরাও তহবিল গঠন করে হাট-বাজার ও বিত্তবানদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাহায্য উঠাচ্ছেন। তবুও যোগার হয়নি সিফাতকে বাঁচানোর ৮ লাখ টাকা।  

সবুজা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, নিজে এক বেলা খেয়ে ছেলেকে স্কুল পড়াচ্ছি বড় কর্মকর্তা বানাবো বলে। কিন্তু আমার সেই স্বপ্ন আজ মরণব্যাধি ক্যানসারে মরতে বসেছে। স্বামী ছেড়ে চলে গেছে। এখন একমাত্র সম্বল সিফাত ছাড়া এ জীবন থেকে কী লাভ?। সিফাতকে বাঁচাতে সমাজের বিত্তবানদের কাছে সাহায্যের আবেদন জানাচ্ছি।  

সিফাতের স্কুল শিক্ষক লুৎফর রহমান লুকাস বাংলানিউজকে বলেন, সিফাত অত্যন্ত মেধাবী একজন ছাত্র। তাকে বাঁচাতে তার সহপাঠী ও বন্ধুরা তহবিল গঠন করে সমাজের বিত্তবানদের কাছে সাহায্য নিচ্ছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। সে বেঁচে গেলে দেশ ও সমাজের জন্য ভালো কিছু নিয়ে আসতে পারবে। তাই মেধাবী সিফাতকে বাঁচাতে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।

বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২১
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।