ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ মাঘ ১৪৩১, ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

আদালতের দ্বারস্থ হলেন কন্যাশিশু জন্ম দেওয়ায় ঘরহারা সেই গৃহবধূ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৫ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০২১
আদালতের দ্বারস্থ হলেন কন্যাশিশু জন্ম দেওয়ায় ঘরহারা সেই গৃহবধূ রোকসানা

গাইবান্ধা: কন্যা শিশু জন্ম দেওয়ায় স্বামীর বাড়ি থেকে বিতারিত হওয়া সেই গৃহবধূ রোকসানা খাতুন (২৩) আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। সন্তানের পিতৃ পরিচয় ও নির্যাতনের বিচার দাবিতে মামলা করেছেন তিনি।

 

 
রোববার (২১ মার্চ) দুপুরে ১৩ দিনের শিশুকে কোলে নিয়ে গাইবান্ধা নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-২ এ মামলাটি দায়ের করেন তিনি।
 
আদালতের বিচারক আবদুর রহমান পুলিশকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশদিয়েছেন বলে বাংলানিউজকে জানান রোকসানার আইনজীবী অ্যাডভোকেট হাছিবুল হাসান হ্যাপী।
 
হাছিবুল হাসান হ্যাপী বলেন, মামলায় রোকসানার স্বামী রাজা মিয়াকে প্রধান আসামি করে পাঁচ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অপর আসামিরা হলেন- রাজার মা  আছমা বেগম, বাবা মহব্বর আলী, ভাই আশরাফুল ও তার বউ আইরিন বেগম।
 
মামলার এজাহারে রোকসানা অভিযোগ করেন, গত ৮ মার্চ রংপুরে একটিবেসরকারি ক্লিনিকে তিনি কন্যা সন্তান জন্ম দেন। চার দিন পর সাদুল্লাপুরের নলডাঙ্গা ইউনিয়নের প্রতাপ (ঘোড়ামারা) গ্রামে স্বামী রাজা মিয়ার বাড়িতে গেলে তার শ্বশুর-শ্বাশুরীসহ পরিবারের অন্যরা তাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। তখন থেকে তিনি বাবার বাড়ি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের সর্বানন্দ ইউনিয়নের ধনিয়ারকুড়া গ্রামে অবস্থান করছেন।  
 
রোকসানা বাংলানিউজকে জানান, এক বছর আগে সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের ঘোড়ামারা গ্রামের মহব্বর আলীর ছেলে রাজা মিয়ার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পরই গর্ভধারণ করেন তিনি। স্বামীর স্বপ্ন ছিল পুত্র সন্তানের বাবা হবেন। তাই অনাগত সন্তানের লিঙ্গ নিশ্চিত হতে আল্ট্রাসনোগ্রাম করান। কিন্তু রিপোর্টে কন্যা সন্তান জানার পর থেকেই তার জীবনে নেমে আসে অযত্ন-অবহেলাসহ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন।
 
নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে রোকসানা জানান, শ্বশুরবাড়িতে বৈদ্যুতিক মোটর দিয়ে পানি তোলা হলেও আমাকে ওই পানি ব্যবহার করতে দেওয়া হয়নি। পেটে সন্তান নিয়ে আমাকে টিউবওয়েল চেপে সাংসারিক কাজকর্মে পানি ব্যবহার করতে হয়েছে। একপর্যায়ে তাকে বাড়িতে রেখে ঢাকায় চলে যায় রাজা। স্বামীর অবর্তমানে নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। এমনি অবস্থা চলাকালে গত ৮ মার্চ প্রসব বেদনা উঠলে শ্বশুর বাড়ির কেউ এগিয়ে আসেনি। খবর পেয়ে সুন্দরগঞ্জ থেকে তার মা এসে তাকে রংপুরে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করান। সেখানে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে কন্যা সন্তান জন্ম দেন তিনি।  
 
রোকসানা আরো জানান, ক্লিনিক থেকে ছাড়পত্র পেয়ে বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) দুপুরে কন্যা সন্তানসহ স্বামীর বাড়িতে গেলে তাকে আশ্রয় না দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে জানিয়ে দেওয়া হয় তিন মাসে আগেই তাকে তালাক দেওয়া হয়েছে। এর পর বাড়িতে তালা দিয়ে সটকে পড়েন শ্বশুরবাড়ির লোকজন।
 
একপর্যায়ে ৯৯৯-এ কল দিলে ওইদিন সন্ধ্যায় সাদুল্লাপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। কিন্তু বাড়িতে কেউ না থাকায় পুলিশের পরামর্শে সন্তানকে নিয়ে সুন্দরগঞ্জে বাবার বাড়িতে চলে যান রোকসানা। পরে থানা পুলিশের পরামর্শ অনুযায়ী আদালতে মামলা দায়ের করেন তিনি।  
 
অপরদিকে রাজা মিয়ার দাবি, সন্তান পেটে নিয়েই রোকসানাকে বিয়ে দিয়েছে তার পরিবার। পরে বিষয়টি জানতে পেরে তিনি স্ত্রীকে তালাক দেন। কিন্তু গর্ভধারণকালীন তালাক দেওয়ার বিধান না থাকায় বিষয়টি গোপন রাখেন।

** কন্যা সন্তানের জন্ম দেওয়ায় সংসার ভাঙল গৃহবধূর
 
বাংলাদেশ সময়: ২০০৩ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।