ঢাকা: ‘নানা ভাইরাসের ছড়াছড়ি এই সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে। তাই সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা জরুরি।
শনিবার (২০ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর মহাখালীতে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের চারতলার টিটেনাস (ধনুষ্টংকার) ওয়ার্ডের বাইরে দাঁড়িয়ে হাসপাতাল সম্পর্কে কথাগুলো বলছিলেন এক রোগীর স্বজন মো. সোহেল রানা।
গত ৬ মার্চ টিটেনাস রোগে আক্রান্ত ছোট ভাই নীরবের চিকিৎসা করাতে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে নিয়ে আসেন সোহেল রানা। এরপর থেকে এখানেই ছোট ভাইয়ের চিকিৎসা করাচ্ছে। হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের প্রতি তার কোনো ক্ষোভ বা অভিযোগ নেই। তবে, হাসপাতালের পরিবেশ সম্পর্কে তার অভিযোগের অন্ত নেই।
সোহেল রানা অভিযোগ করে বাংলানিউজকে বলেন, চিকিৎসক ও নার্সরা তাদের দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু এই হাসপাতালে লোক বল কম থাকায় নানা সমস্যা হচ্ছে। পরিবেশটা অপরিষ্কার। সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল। এমনিতেই এখানে নানা পদের ভাইরাসের ছড়াছড়ি। যেমন পরিচ্ছন্ন থাকার কথা হাসপাতালটি তেমন না।
তিনি বলেন, হাসপাতালের ক্লিনাররা টয়লেট ঠিকমত পরিষ্কার করেন না। একটি ওয়ার্ডের জন্য একটি টয়লেট। আবার যেগুলো আছে, সেগুলোর বেশিরভাগই দরজা ভাঙা। রোগীর সঙ্গে থাকা কোনো নারী স্বজনরা টয়লেট ব্যবহার করতে পারে না। আবার হাসপাতালের কলের পানিতে একটা গন্ধ পাওয়া যায়। ঠিকমত পানিও পাওয়া যায় না। হাসপাতালটি অনেক সমস্যায় জর্জরিত বলে মনে হয়।
‘বড় কথা হলো-রোগীদের জন্য এখানে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র (আইসিইউ) নেই। অনেক সময় রোগীদের অক্সিজেন প্রয়োজন হয়, কিন্তু হাসপাতালে নিচ থেকে অক্সিজেন বোতল এনে দেওয়ার লোকই নেই।
মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালের ভেতরে-বাইরের পরিবেশটা স্যাঁতসেঁতে। হাসপাতাল ভবনের বাইরে অসংখ্য কুকুর ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই কুকুর জলাতঙ্ক রোগের বাহক। হাসপাতালটির অনেক ওয়ার্ডই সম্পূর্ণ খালি। হাসপাতাল ভবনের ভেতরে প্রতিটি ফ্লোরেই রয়েছে রান্নাঘর। সেখানে ঝুঁকিপূর্ণভাবে গ্যাসের চুলা লাগানো রয়েছে। এদিকে চারতলায় ওয়ার্ডের বাইরে বারান্দার থাকা সিমেন্টের বসার বেঞ্চ ভাঙা অবস্থায় পড়ে আছে। ওয়ার্ড ও টয়লেটের দরজাগুলো হাতলে ও সিটকানি ময়লাযুক্ত হয়ে আছে। হাসপাতালের ছয় ও সাততলার সিঁড়ির বেদিতে অকেজো সব আবর্জনার স্তূপ থাকতে দেখা গেছে। হাসপাতাল ভবনের বাইরে গাড়ি ও মোটরসাইকেল পার্কিংয়ের পর্যাপ্ত জায়গা থাকা সত্ত্বেও হাসপাতালের ভবনের সিঁড়িও লিফটের পাশ কর্মকর্তাদের মোটরসাইকেল থাকতে দেখা গেছে। হাসপাতালের বাইরেও বিভিন্ন স্থানে ময়লা পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
টিটেনাস (ধনুষ্টংকার) রোগে আক্রান্ত কাজী জামাল উদ্দিন (৫৭) মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। গত ১৬ মার্চ এই হাসপাতালে তার ছেলে কাজী মিজানুর রহমান তাকে নিয়ে এসেছেন। সিলেট ও ঢাকার কয়েকটি হাসপাতালে গিয়েও কোনো লাভ হয়নি। পরে টিটেনাস রোগ ধরা পড়লে দ্রুত এই হাসপাতালে ভর্তি করে বৃদ্ধ এই বাবাকে।
আক্রান্ত জামাল উদ্দিনের ছেলে কাজী মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমার বাবা পড়ে গিয়ে মাথায় ও পায়ে আঘাত পায়। এরপর আমরা ভেবেছি বাবা স্টোক করেছেন। দ্রুত তাকে সিলেট সদর হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখান থেকে বলেন সিটি স্ক্যান করতে। এদিকে বাবার অবস্থাও নাজুক। তাই দেরি না করে ঢাকার জাতীয় কিডনি ইনস্টিটউটে নিয়ে যাই। তারা ধারণা করেছেন বাবা স্টোক করেছেন তাই পাঠিয়ে দেন নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে। সেখানকার চিকিৎসক বললেন স্টোক হয়নি, রোগীকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলে। বাবাকে সোহরাওয়াদী হাসপাতালে আনলেই জানতে পারি বাবার টিটেনাস হয়েছে। সেখান থেকে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে নিয়ে আসি এবং এখানেই বাবার চিকিৎসা করাচ্ছি। তিনি বলেন, এখানে আসার পর দুইদিন বাবার খুব খারাপ অবস্থা ছিলো। বর্তমানে আগের তুলনায় ভালো। এই হাসপাতালে স্যালাইন ও ওষুধ পাচ্ছি। এখানে চিকিৎসায় খুব খরচ হয় না। আর কিছু ওষুধ বাইরে থেকে কিনে দিতে হচ্ছে। তবে, হাসপাতালে লোক কম। নার্সরা যথেষ্ট টেষ্টা করান। কিন্তু লোক কম থাকায় তারা সঠিক সেবা দিতে পারছেন না।
এ বিষয়ে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, দেশের একমাত্র বিশেষায়িত রাজধানীর মহাখালী সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল এটি। এখানে মূলত এইচআইভি, ধনুষ্টংকান, হাম, বসন্ত, প্রাণীর (কুকুর, বিড়াল, শিয়াল, বানর, বেজি) কামড়ে গুরুতর আহত ও জলাতঙ্কে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা করা হয়। এখানে প্রতিদিন আসে গড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ রোগী আসে চিকিৎসা নিতে।
তিনি আরো বলেন, চিকিৎসক ও নার্স পর্যাপ্ত থাকলেও তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর ঘাটতি বয়েছে। শূন্য পদে নিয়োগ দিলে হাসপাতালের রোগীরা আরো সেবা পাবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০২১
এসজেএ/এএটি