ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ মাঘ ১৪৩১, ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

প্রতারক শাহীন ট্রেড লাইসেন্স দিয়েই শুরু করে টিভি চ্যানেল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০২১
প্রতারক শাহীন ট্রেড লাইসেন্স দিয়েই শুরু করে টিভি চ্যানেল

ঢাকা: মতিঝিল এলাকায় ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসা। পাশাপাশি বেবি ফুডসের পরিবেশক হিসেবেও কাজ করেন শাহীন খান (৫০)।

মাত্র একটি ট্রেড লাইসেন্স দিয়েই শুরু করেন অনলাইন ভিত্তিক স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল ‘‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট টিভি (বিএসটিভি নিউজ ২৪)। তিনি এই চ্যানেলের ম্যজেজিং ডাইরেক্টর (এমডি)।

শুধু তাই নয়, দেশের বিভিন্ন জেলার প্রতিনিধি আবশ্যক বলে ৫টি ফেসবুক পেজে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেন। চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে সাংবাদিক প্রতিনিধি নিয়োগের কথা বলে শিক্ষিত বেকার ও নিরীহ যুবক/তরুণী ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আত্মসাৎ করে আসছিলো এই প্রতারক শাহীন খান। আর এহেন কাজে তার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন চ্যানেলের চেয়ারম্যান নূর হোসেন ওরফে নুরুল ইসলাম নাহিদসহ (৩৭) মোট ১০ জন।

র‌্যাব বলছে, প্রতারক এই চক্রটি ভুয়া এই স্যাটেলাইট চ্যানেলের বিশেষ প্রতিনিধি ও জেলা প্রতিনিধি নিয়োগের কথা বলে অন্তত ৫ শতাধিক লোকের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে মোটা অংকের টাকা।

সম্প্রতি প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানীর হাতিরঝিল ও মতিঝিল এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের মুলহোতা শাহীন খান, তার অন্যতম সহযোগী নুর ইসলাম ওরফে নুরুল ইসলাম নাহিদসহ ১০ জনকে আটক করেছে র‌্যাব-৪।  

গ্রেফতার বাকি ৮ আসামি হলেন- রাজিব হোসেন (৩৯), রায়হান পারভেজ (২১), মো. রিয়াদ মাহমুদ (২৪), গাজীপুরের রিমন পারভেজ (২৬), নেত্রকোনার মো. জয়নুল আবেদন (৫৫), আইয়ুব খান (৩০),  নারায়ণগঞ্জের আকবর হোসেন (৩৯) ও পটুয়াখালীর ইমরুল কায়েচ ওরফে ফয়েজ (২৫)।

সোমবার (২২ মার্চ) বিকেল ৫টার দিকে রাজধানীর মিরপুরের পাইকপাড়া অবস্থিত র‌্যাব-৪ এর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক।

তিনি বলেন, প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে রোববার হাতিরঝিল ও মতিঝিল এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের স্ট্যান্ডসহ ক্যামেরা, কম্পিউটার, ভিজিটিং কার্ড ও ব্যানার ক্রেস্ট, স্টুডিও লাইট উদ্ধার করা হয়।

প্রতারক শাহীন খান ও নুর ইসালাম দুজনেরই হাতিরঝিল ও মতিঝিলে নিজস্ব ভবনে অফিস রয়েছে। তারা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাটই চ্যানেল ও নিউজ২৪ নাম দিয়ে ফেসবুকে ৫টি পেজ খোলে। আসলে টিভি চ্যানেল বলে কিছু নেই। তারা ২০২০ সাল থেকে এই ভুয়া চ্যানেলের নাম ভাঙিয়ে ৫ শতাধিক মানুষের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। জেলা প্রতিনিধি নিয়োগের সময় ১৫-২০ হাজার টাকা করে নিয়েছে।

তিনি বলেন, অনলাইনভিত্তিক চ্যানেলের বিষয়ে তাদের কাছে কোনো অনুমতি ছিল না, কোনো নিবন্ধন বা লাইসেন্স ছাড়াই শুধুমাত্র একটি ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে তারা এই প্রতারণা করে আসছিলো।

তিনি বলেন, গ্রেফতার হওয়া আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, প্রতারক চক্রটি দীর্ঘদিন ধরেই অবৈধভাবে অনুমোদনহীন অনলাইনভিত্তিক ভুয়া স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল ‘‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট টিভি (বিএসটিভি নিউজ ২৪)’’ এর মাধ্যমে চাকরির প্রলোভন সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিলো। এতে হাতিয়ে নেয় বিপুল পরিমাণ অর্থ। তাদের কৌশল ছিলো- রিপোর্টার নিয়োগের নিমিত্তে বিভিন্ন জেলায় তাদের বিশেষ প্রতিনিধি নিয়োগ করেছে বলে জানা যায়। নিজেরা নামি-দামি ব্র্যান্ডের গাড়ি ব্যবহার এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গাড়ি ফটোশপের মাধ্যমে এডিট করে ‘‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট টিভি (বিএসটিভি নিউজ ২৪)’’ চ্যানেলের কথিত লোগো ব্যবহার করতো। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে চাকরির জন্য সরল বিশ্বাসে যোগাযোগ করতো এমন ভুক্তভোগীদের কাছ কাছ থেকে জনপ্রতি ১৫-২৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিতো।

তিনি আরো বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারক চক্রের মুল হোতা শাহিন খান জানায়, সে এসএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। ২০০৩ সালের দিকে মতিঝিল এলাকায় ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসার পাশাপাশি বেবি ফুডস এর পরিবেশক হিসেবে কাজ শুরু করে। এছাড়াও সে বিদেশে লোক পাঠানোর উদ্দেশে এ পর্যন্ত বিশ্বের প্রায় ১২টি দেশে ভ্রমণ করেছে। ২০২০ সালে অনুমোদনহীন অনলাইন ভিত্তিক স্যাটেলাইট টিভি চ্যনেল “বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট টিভি (বিএসটিভি নিউজ ২৪)” প্রতিষ্ঠা করে প্রতারণা করে আসছিলো। এই প্রতারক জানায় প্রতিষ্ঠানে সে ম্যানেজিং ডাইরেক্টর হিসেবে এবং তার সহযোগী নুর হোসেন নাহিদ পরিচালক হিসেবে যুক্ত হন।

মূলত তারা দুইজন মিলেই চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিলো। প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগীরা টাকা চাইতে এলেই অস্ত্রের মাধ্যমে ভয়ভীতি ও হুমকি দেখিয়ে তাদের তাড়িয়ে দিতো। শাহিন খান এর নামে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা থাকার তথ্য রয়েছে।

এদিকে চক্রের অন্যতম সহযোগী নূর হোসেন ওরফে নুরুল ইসলাম নাহিদ (৩৭) শরীয়তপুরে এসএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। ২০০৯ সালে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ আরব আমিরাতে যায়। সেখানে ২ বছর থাকার পর দেশে ফেরত এসে পুনরায় কাতারে ড্রাইভার হিসেবে পারি জমায়। কাতার থেকে ২০১৬ সালে দেশে ফেরত আসে। দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকার কারণে হিন্দি, ইংরেজি এবং আরবি ভাষা ভালোভাবে রপ্ত করে সে। দেশে ফিরে “চাঁদের আলো সমবায় সমিতি” নামে একটি এনজিও প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। তারা দুইজন কেউ চাকরি দেওয়ার কথা বলে আবার কাউকে বিদেশ পাঠানোর কথা বলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতো।

অভিযানে গ্রেফতার হওয়া চক্রের বাকি ৮ জন বিভিন্নভাবে প্রতারক শাহীন খান ও নূর হোসেনকে সহায়তা করতো।

আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০২১
এসজেএ/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।