ঢাকা, বুধবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

পুড়ে যাওয়া রোহিঙ্গা শিবির এখন বিরানভূমি

সুনীল বড়ুয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০২১
পুড়ে যাওয়া রোহিঙ্গা শিবির এখন বিরানভূমি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে প্রায় ১০ হাজার ঘর/ ছবি: বাংলানিউজ

কক্সবাজার: যে দিকে চোখ যায়, শুধু পোড়া ক্ষতচিহ্ন। একটু ছায়ার নিচে মাথা গুঁজার মতো কেনো জায়গা নেই।

বসতি তো নয়, এমনকি ছায়া দেওয়ার মতো একটি জীবিত গাছও অবশিষ্ট নেই আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায়। তার ওপর তীব্র গরমে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের। এ পরিবেশেই হাজারো রোহিঙ্গা প্লাস্টিক আর ত্রিপল টানিয়ে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

এমন মানবেতর দৃশ্য দেখা গেলো কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালীর ৮ নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরে। যেখানে আগুনে পুড়ে গেছে প্রায় ১০ হাজার বসতঘর, পুরো এলাকা পরিণত হয়েছে বিরানভূমিতে।

সোমবার (২২ মার্চ) বিকেলে কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা শিবিরে আগুন লাগে। এতে পাঁচটি শিবিরের প্রায় ৯ হাজার ৩০০টি বসতঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আগুনে পুড়ে মারা গেছেন ১১ জন নারী-শিশু ও পুরুষ। আর ৪৫ হাজারের মতো রোহিঙ্গা আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন। এসব রোহিঙ্গা এখন খাবার, পানিসহ মানবিক নানা সংকটের মুখোমুখী।  

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ৯ নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরের সলিম উল্লাহ (৫৫), প্রতিবন্ধী রফিক আলম (২৫), আব্দুল্লাহ (৮), মিজান মাঝির মেয়ে আসমাউল (৭), আট নম্বর ক্যাম্পের মো. আইয়ুবের ছেলে মিজান (৪), বশির আহমেদ (৬৫), খদিজা বেগমের (৭০) পরিচয় জানা গেছে।

আগুনে বালুখালীর ৮ নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরে হাজারো ঘর পুড়ে গেছে। এরমধ্যে ছিল দিলাংকিছ বেগমের (৩০) ঘরটিও।  

এখন সে জায়গায় তিনি প্লাস্টিক টানিয়ে কোনোমতে দুই মেয়েকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানে ঘরের কোনো অস্তিত্ব আদৌ ছিল কি-না তো বোঝা যাচ্ছে না।

দিলাংকিছ বেগম বলেন, আগুন লাগার পর এক ও দুই বছরের দুটি বাচ্ছা হারিয়ে ফেলছিলাম। পরে তাদের খুঁজে পেয়েছি। রাতে একটি স্কুলে আশ্রয় নিয়ে ছিলাম। সকালে এখানে চলে আসি।

‘সকাল থেকে বাচ্ছাদের কিছু খাওয়াতে পারিনি। এখন খাবারের জন্য তারা কান্নাকাটি করছে, কিন্তু কিছু দিতে পারছি না’, যোগ করেন দিলাংকিছ।
 
একই ক্যাম্পের নুর আহম্মদ বলেন, ঘর পুড়ে গেছে। এখন গরমে খুব কষ্ট পাচ্ছি। ছোট ছোট ছেলে, বাবা-মা সবাইকে নিয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে।
 
খাবারের কি অবস্থা জানতে চাইলে নুর বলেন, খাবার-দাবার একবেলা এক আত্মীয় দিয়ে গেছে। কেউ কিছু চাল, কেউ হাঁড়ি দিয়েছে। এভাবে আছি।

শুধুমাত্র দিলাংকিছ বা নুর আহমেদ নয়- এমন পরিস্থিতি ক্ষতিগ্রস্ত সব রোহিঙ্গাদের।

ত্রাণ সচিব মো. মোহসিন জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত পুনর্বাসনে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

ত্রাণ সচিব বলেন, ইতোমধ্যে জরুরিভাবে প্রাথমিক অবস্থা মোকাবিলার জন্য নগদ দশ লাখ টাকা, ৫০ মেট্রিক টন চাল এবং ৮০০ তাঁবু বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তাদের পুনর্বাসনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর হাতে নির্যাতনের শিকার হয়ে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরে প্রায় সাড়ে আট লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। এছাড়া নতুন পুরনো মিলিয়ে কক্সবাজারের ৩৪টি শিবিরে বাস করছেন ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০২১
এসবি/এইচএডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।