কক্সবাজার: গত তিন বছরে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা শিবিরে অন্তত ১৫টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় আগুনে পুড়ে মারা গেছেন অন্তত ২০ জন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৮ সালে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মা-সন্তানসহ একই পরিবারের চারজন মারা যায়। এছাড়া চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি টেকনাফে নয়াপাড়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডে ৫৫২টি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এ ঘটনায় গৃহহীন হয় তিন হাজারের বেশি মানুষ। সর্বশেষ গত ২২ মার্চের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মারা গেছেন নারী শিশুসহ ১১ জন। যদিও আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার দেওয়া তথ্য মতে এর সংখ্যা ১৫ জন। শুধু তাই নয়, রোহিঙ্গা শিবিরে এ যাবতকালের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গেছে প্রায় ১০ হাজার বাড়ি, ঘর ও দোকানপাট। এতে উদ্বাস্তু হয়েছে অন্তত ৪৫ হাজার মানুষ।
এছাড়া চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি উখিয়া পালংখালী শফিউল্লাহ কাটা ১৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুনে চারটি লার্নিং সেন্টার পুড়ে যায়। পরে উখিয়া থেকে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। গত ১৯ মার্চ উখিয়ার কুতুপালং ১৭ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৭৩ নম্বর ব্লকে বিদেশি অর্থায়নে পরিচালিত সেভ দ্য চিলড্রেন হাসপাতালে এবং ১৭ মার্চ টেকনাফের জাদিমুরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কয়েকটি বাড়ি ভস্মীভূত হয়। এনিয়ে শুধুমাত্র গত আড়াই মাসে অন্তত পাঁচটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলো।
এছাড়াও গত বছর ১২ মে উখিয়ার লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ এক অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ৬০০ বসতঘর পুড়ে যায়। এ ঘটনার পাঁচ দিনের মাথায় ১৭ মে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুনে ৩৬২টি বসতঘর ও ৩০টি দোকানপাট পুড়ে যায়। এসব ঘটনায় অর্ধ-শতাধিক রোহিঙ্গা অগ্নিদগ্ধ হয়।
গত বছরের ৮ অক্টোবর কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের সি-ব্লকে অর্ধ শতাধিক বসতঘর, একই বছরের এপ্রিল ২৬ কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১৪টি দোকান, ১ এপ্রিল টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চাকমারকুল (পুটিনবনিয়া) রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডে স্কুলসহ ১৫টি বসতঘর আগুনে ভস্মীভূত হয়।
২০১৯ সালেও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বেশ কয়েকটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তবে অতীতের সবচেয়ে মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডের মধ্যে ২০১৮ সালের ১১ জানুয়ারির ঘটনাটি সবচেয়ে হৃদয় বিদারক। এদিন উখিয়ার কুতুপালং ট্রানজিট পয়েন্ট এলাকার রোহিঙ্গা আবদুর রহিমের তাবুতে আগুন লেগে তার ঘুমন্ত স্ত্রী নুর হাবা (৩০), সন্তান আমিন শরীফ (৮), দিলশান বিবি (১২) ও আসমা বিবি (৫) অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যায়।
রোহিঙ্গা শিবিরে বার বার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার বিষয়ে কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কয়েল, চুলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হচ্ছে।
রোহিঙ্গা শিবিরগুলো ঘন বসতিপূর্ণ ও দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় হওয়ার কারণে আগুন ধরলে পানি পেতে সমস্যা হয়। যে কারণে আগুন দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয় না বলেও জানান আব্দুল্লাহ।
তবে কুতুপালং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য হেলালউদ্দিন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ড রোধে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগ পর্যাপ্ত নয় বলে দাবি করেন।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শামসুদ্দোহা নয়ন বাংলানিউজকে বলেন, সোমবারের (২২ মার্চ) অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে সরকার সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ইতোমধ্যে তদন্ত কাজ চলমান রয়েছে।
তদন্ত কমিটি আগামী দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন হাতে পেলে তাদের সুপারিশ অনুযায়ী ভবিষ্যতে রোহিঙ্গা শিবিরে অগ্নিকাণ্ড রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে (আরাকান) কয়েকটি সেনাচৌকিতে হামলার অভিযোগে রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংস দমনপীড়ন শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। এ সময় প্রাণ বাঁচাতে ২৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে সাত লাখ ৪০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা। এর আগে ও পরে আসা রোহিঙ্গাসহ বর্তমানে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ এবং নোয়াখালীর ভাসান চরে অবস্থান করছে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গা।
বাংলাদেশ সময়: ১২২০ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০২১
এসবি/আরআইএস