ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ২২ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

প্রকৃতিতে অপরূপ সৌন্দর্য বিলাচ্ছে অশোক ফুল

মো. মামুনুর রশীদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১৮ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০২১
প্রকৃতিতে অপরূপ সৌন্দর্য বিলাচ্ছে অশোক ফুল অশোক ফুল

নাটোর: এখন চৈত্র মাস। প্রকৃতিতে চলছে রুক্ষ পরিবেশ।

সর্বত্রই বইছে মৃদু তাপপ্রবাহ। কোথাও কোনো বৃষ্টিপাত নেই। ঝরে পড়ছে গাছের পাতা। এরই মধ্যে বসন্তকালীন এই সময়ে গাছগাছালি থেকে উৎপন্ন হরেক রকম ফুল প্রকৃতির মধ্যে বিলিয়ে দিচ্ছে অপরূপ সৌন্দর্য্য। তেমনি একটি দৃষ্টিনন্দন ফুল হচ্ছে অশোক।

সাধারণত বসন্তকালে এই ফুল ফোটার প্রধান মৌসুম। হেমন্ত ও শীতকালেও ফোটে এই ফুল। তবে সংখ্যায় খুবই কম। ফুলগুলো ছোট ছোট কিন্তু বহুপৌষ্পিক, ছত্রাকৃতি মঞ্জুরি আকারে বড় এবং অজস্র ফুলে ঘনবদ্ধ ও গড়নেও বেশ আকর্ষণীয়। দৃষ্টিনন্দন এই ফুলের সুরভিতে মানুষের প্রাণ ভরে যায়। গাঢ় ও দীর্ঘ সবুজপাতার মধ্যে এখন গাছে উঁকি দিচ্ছে অশোক ফুল। আর তাই প্রকৃতিতে এক অপরূপ সৌন্দর্য বিলাচ্ছে এই অশোক ফুল। সচরাচর লোকালয় এই ফুল দেখা যায় না। তবে বিভিন্ন পার্ক ও উদ্যানে দেখা মিলবে অনায়াসে।

সম্প্রতি নাটোরের উত্তরা গণভবন থেকে দেড় কিলোমিটার উত্তরে ভাতুরিয়া গ্রামের একটি বাগানে দেখা মেলে অশোক ফুল। ওই গ্রামের বাসিন্দা সাবেক অতিরিক্ত সচিব ড. মো. নূরন্নবী মৃধা তার গড়ে তোলা সমন্বিত কৃষি পার্ক বা জীবন্ত সংগ্রহ শালায় (বর্তমানে নামকরণ প্রক্রিয়ায়) গত ১০ বছর আগে ঢাকা বন সম্প্রসারণ বিভাগ থেকে বেশ কয়েকটি অশোক গাছের চারা সংগ্রহ করে রোপণ করেছিলেন। এখন সেসব পরিপূর্ণ গাছ। গাছের কাণ্ড ফুঁড়ে বেরিয়েছে থোকা থোকা ফুল। কমলা আর লালে মেশানো ফুলগুলো দেখতে ঝলমল করছে। সবুজ প্রকৃতির মধ্যে ছড়াচ্ছে যেন এক অপরূপ সৌন্দর্য্য। তবে এই গাছটি অন্যান্য গাছের মত নাটোরের আর কোথাও দেখা মেলেনি।  

ড. নূরন্নবী বাংলানিউজকে জানান, শুধুমাত্র অশোক ফুল নয় গত ২৫ বছর ধরে তিনি তার পৈত্রিক জমিতে বিলুপ্ত প্রজাতির গাছ সংগ্রহের জন্য একটি সমন্বিত কৃষি পার্ক বা জীবন্ত সংগ্রহশালা গড়ে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সেই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে এমন বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় পাঁচ শতাধিক বিলুপ্ত প্রায় প্রজাতির ফলজ, বনজ ও ওষুধি গাছের চারা রোপণ করেছেন। বিশেষ করে হিজল, তমাল, আগরবাতি, ডুমুর, চাপালী, ছাতিয়ান গাছ, আমলকি, হরিতকি, কদম, জামরুল, বহেরা, ডেওয়া, বেঁত, বিরল জাতের বাঁশসহ বিভিন্ন ওষুধি গাছ রয়েছে। যা এখন শোভা বর্ধন করছে তার কৃষি পার্কে।  

তিনি বলেন, উত্তরা গণভবন থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার অদুরে সবুজ প্রকৃতির মধ্যে অবস্থিত তার এই জীবন্ত সংগ্রহ শালা। প্রতিনিয়ত উত্তরা গণভবনে বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকসহ শিক্ষা সফরে আসা শিক্ষার্থীদের উৎকৃষ্ট স্থান হতে পারে এটি। কারণ তারা এখানে প্রবেশ করলে প্রকৃতি, উদ্ভিদ, প্রাণিজ ও কৃষি সর্ম্পকে জানতে পারবেন। একই সঙ্গে সবুজে ঘেরা পরিবেশ দেখে মুগ্ধ হবেন। ভবিষ্যতে একটি দর্শনীয় স্থান হিসাবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। যার নাম দেওয়া হবে বনলতা বোটানিক্যাল গার্ডেন এন্ড ইকো পার্ক। ইতোমধ্যে কাজও শুরু করেছেন তিনি।  

এদিকে উইকিপিডিয়া সুত্রে জানা যায়, অশোক হচ্ছে মাঝারি আকৃতির ছায়াদানকারী একটি প্রাচীনতম সবুজ বৃক্ষ। এদের পাতার রং গাঢ় সবুজ। পাতাগুলো দীর্ঘ, চওড়া ও বর্শাফলাকৃতির। কচিপাতা কোমল, নমনীয়, ঝুলন্ত ও তামাটে প্রকৃতির। ফুল ফোটার প্রধান মৌসুম হচ্ছে বসন্তকাল। তবে হেমন্ত ও শীতকালেও এরা অল্পসংখ্যক ফোটে থাকে। অশোক ফুল গাছের কাণ্ড থেকেও ফোটে। ফুল আকারে ছোট হলেও বহুপৌষ্পিক, ছত্রাকৃতি। মঞ্জুরি আকারে বড়। অজস্র ফুলের সমষ্টি অশোক মঞ্জুরী মৃদু গন্ধ যুক্ত এবং বর্ণ ও গড়নে আকর্ষণীয়। তাজা ফুলের রং কামলা। তবে বাসি ফুল লাল রং ধারণ করে থাকে। পরাগকেশর দীর্ঘ। এর ফল বড়সড় শিমের মত চ্যাপ্টা, পুরু এবং ঈষৎ বেগুনি রঙের। অশোকের এর বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে Saraca asoca, Saraca indica। আর ইংরেজি নাম হচ্ছে Yellow Ashok, Yellow Saraca। এটি Fabaceae পরিবারের এক প্রজাতির বৃক্ষ। এটি কখনো কখনো ভুল ভাবে Saraca indica হিসেবেও পরিচিত। অশোক গাছের ফুল ভারতের ওড়িশার রাজ্যের রাজ্য ফুল। অশোক ফলের বীজ থেকে সহজে চারা জন্মানো যায়। তবে চারার বৃদ্ধি মন্থর গতি। সূত্র মতে, এই অশোক ছাড়াও ভারত এবং বাংলাদেশে রাজ অশোক এবং স্বর্ণ অশোক নামে আরও দুই রকমের অশোক গাছ রয়েছে। যাদের ফুলের রং হলুদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Saraca thaipingensis ।

নাটোর হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. মাহমুদুল ফারুক বাংলানিউজকে বলেন, অশোক উদ্ভিদ সাধারণত ফুলের জন্যই বিখ্যাত। এই অশোক অন্যান্য গাছের তুলনায় একটু ভিন্ন প্রকৃতির। কারণ এই গাছের ডালপালা জুড়ে এবং কাণ্ডে ফুল ফোটে। প্রাচীনকাল থেকেই এই গাছটির খ্যাতি রয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে ভেষজ গুণ রয়েছে এই অশোক গাছে। তিনি বলেন, সচারচর সব স্থানে এই অশোক গাছ দেখা যায় না। সৌখিন মানুষ তাদের বাড়ি কিংবা বাগানে সৌন্দর্যের জন্য এই অশোক গাছ লাগিয়ে থাকেন। তার জানা মতে নাটোরের দুই একটি স্থানে এই অশোক ফুলের গাছ রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৭ ঘণ্টা, ৩০ মার্চ ২০২১
কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।