সাতক্ষীরা: সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার বিজয়া দশমীতে সাতক্ষীরার দেবহাটার আন্তঃসীমান্ত নদী ইছামতিতে এবারও ভাসবে না মিলনমেলার তরি।
এবারও বিজয়া দশমীতে ইছামতি নদীর নোম্যান্স ল্যান্ড বরাবর রশি টানিয়ে সীমানা নির্ধারণসহ যাতে কোনো দেশের প্রতিমাবাহী ট্রলার আর্ন্তজাতিক সীমারেখা অতিক্রম করতে না পারে সেজন্য থাকবে বিজিবি ও বিএসএফর টহল।
করোনা সংক্রমণ এড়াতে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত মেনে নিজ নিজ সীমানায় শান্তিপূর্ণভাবে ভারতীয় সময় দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৪টা এবং বাংলাদেশ সময় দুপুর দেড়টা থেকে সাড়ে ৪টার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন দেবে উভয় দেশের মানুষ।
বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনকে কেন্দ্র করে শনিবার (২ অক্টোবর) দুপুর আড়াইটা থেকে ইছামতি নদীর নোম্যান্স ল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ঘণ্টাব্যাপী পতাকা বৈঠকে বাংলাদেশ ও ভারতের উচ্চ পর্যায়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) নাজমুল হুসেইন খাঁন, দেবহাটা সদর ইউপি চেয়ারম্যান আবু বকর গাজী, বিজিবির টাউনশ্রীপুর কোম্পানির নায়েব সুবেদার বন্দে আলী, হাবিলদার মোকতারুজ্জামান, ল্যান্স নায়েক আবুল কামাল এবং ভারতের পক্ষে হাসনাবাদের বিডিও মোস্তাক আহমেদ, এসডিপিও দেবরাজ ঘোষ, হাসনাবাদ পুলিশ স্টেশনের ইন্সপেক্টর কৃষ্ণেন্দু ঘোষ, টাকী পৌরসভার মেয়র সোমনাথ চ্যাটার্জী, বিএসএফর এসি বিনোদ কুমার, ইন্সপেক্টর সুভাস চন্দ্র, এসআই পারভীন কুমার সানি, এইচসি ইত্তেফাক আহমেদসহ দুদেশের সিভিল প্রশাসন ও বিজিবি-বিএসএফর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, প্রতিমা বিসর্জনকে ঘিরে গত কয়েক বছর আগেও ইছামতির দুই পাড়ে বাংলাদেশ ও ভারতের লাখো মানুষের উপস্থিতিতে বসতো শত বছরের ঐতিহ্যবাহী মিলনমেলা।
সেসময় বছরে ওই একটি দিনে সীমানার গন্ডি এবং জাতি-ধর্ম-বর্ণের ভেদাভেদ ভুলে সৌহার্দ ও সম্প্রীতির মেলবন্ধনে আনন্দ উৎসবে মেতে উঠতো দুদেশের লাখো মানুষ।
ইছামতি নদীর বুক চিরে ভাসতো বাংলাদেশ ও ভারতের হাজারো নৌকা, ট্রলার, লঞ্চ। দিনটিতে থাকতো না আইনের কোনো বাধ্যবাধকতা।
পাসপোর্ট ভিসা ছাড়াই কয়েক ঘণ্টার জন্য বাংলাদেশ-ভারতের মানুষ মিলেমিশে একাকার হয়ে যেত। বেড়ানো, কেনাকাটা এবং ভিন্ন দেশে থাকা আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে দেখা করে সন্ধ্যার আগেই সবাই আবার ফিরে যেত যার যার দেশে।
সর্বশেষ ২০১৭ সালে ইছামতি নদীর বুকে ভেসেছিল এমন সৌহার্দপূর্ণ মিলনমেলার তরী। পরবর্তীতে আইনি জটিলতার কারণে বাংলাদেশ ও ভারতের উচ্চ পর্যায়ের প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে বন্ধ হয়ে যায় শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এই মিলনমেলা। তবুও প্রতিবছর দুর্গাপূজা আসলেই কাঙ্ক্ষিত সেই মিলনমেলার অপেক্ষা করতে থাকে দুদেশের মানুষ। তবে এবারও বাংলাদেশ ও ভারতের উৎসুক লাখো মানুষের সেই আকাঙ্ক্ষা অপূর্ণ থাকবে।
১৫ অক্টোবর প্রতিমা বিসর্জনকে ঘিরে ইছামতির দুই পাড়ে বসবে না সৌহার্দ ও সম্প্রীতির সেই মিলনমেলা।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৩, ২০২১
আরএ