ঢাকা: দুবাই প্রবাসী মোহাম্মদ ইমরান হোসেনের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা। দীর্ঘ করোনাকালীন সময় তিনি দেশেই অবস্থান করায় ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান বলেন, আমিরাতের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া প্রবাসীদের জন্য এরইমধ্যে প্রবাসীকল্যাণ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বিমান কর্তৃপক্ষ কাজ করছে। তারা যেন নিজ কর্মস্থলে ফিরে যেতে পারেন সে জন্য আমিরাতের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত আছে। ইতোপূর্বে তারা বলেছিল মেয়াদোত্তীর্ণদের পুনরায় ভিসা দেওয়া হবে, সে বিষয়ে চেষ্টা চলছে। এ ক্ষেত্রে প্রবাসীদের আবার নতুন করে ভিসা চাইতে হবে। ভিসা দেওয়ার বিষয়গুলো এখন আগের থেকে অনেক সহজ হয়েছে।
সোমবার (০৪ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ১ নম্বর টার্মিনালে বহির্গমন কনকোর্স হলে আয়োজিত গণশুনানিতে যাত্রীরা তাদের নানা সমস্যা ও ভোগান্তি কথা তুলে ধরেন।
এ সময় গাজীপুরের কাপাসিয়ার বাসিন্দা হালিমা জানান, দীর্ঘ পাঁচ বছর যাবত তিনি সৌদি আরবে চাকরি করছেন। সেখানে থাকাকালীন তিনি করোনার ভ্যাকসিন নিয়েছিলেন। সে সময় তাকে বলা হয়েছিল বাংলাদেশেও এর দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া যাবে। কিন্তু এখন বাংলাদেশ থেকে বলা হচ্ছে পুনরায় করোনার ভ্যাকসিন নিতে হবে। গত চার মাস যাবত ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য আবেদন করলেও সেটি কার্যকর হচ্ছিল না। এরপরও বহু চেষ্টা করে ভ্যাকসিন নিয়েছেন ১০ দিন হয়েছে। কিন্তু ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় এখন সৌদি আরব যেতে পারছেন না। সোমবার (৪ অক্টোবর) সকাল সোয়া ১০টায় তার ফ্লাইট ছিল, যা বাতিল হয়ে গেছে। এয়ারলাইন্স তাকে ফিরিয়ে দিয়েছে। সে ক্ষেত্রে করনীয় কী- জানতে চান তিনি।
এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বলেন, সমস্যাটা আমরা বুঝতে পেরেছি। কিন্তু এ বিষয়ে এয়ারলাইন্সের কোনো কিছু করার সুযোগ নেই, এটি স্বাস্থ্যবিধি। আসলে করোনা ভ্যাকসিন নেওয়ার পর দুই সপ্তাহ অতিবাহিত না হলে সে ক্ষেত্রে কারো কোনো কিছু করার থাকে না। এটা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। ১৪ দিন না হলে আপনার ইমিউনিটি পাওয়ার গ্রো করবে না। তাই শুধু এয়ারলাইন্স নয়, কেউ কিছু করতে পারবে না।
বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা চিকিৎসক ডা. মো. শাহরিয়ার সাজ্জাদ এ বিষয়ে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ফাইজার, মডার্না বা সিনোফার্মার দুটি টিকা নেওয়ার পর ১৪ দিন অতিবাহিত হতে হবে। তা না হলে সেটি ডোজ হিসেবে ধরা হয় না। যেহেতু তার দ্বিতীয় ডোজের ১০ দিন হয়েছে, ১৪ দিন হয়নি। সে কারণেই এয়ারলাইন্স তাকে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছি। তাই আমি এমিরাত এয়ারলাইন্সকে অনুরোধ জানাবো, যে বিষয়টি বিবেচনা করে তার সমস্যা সমাধানের জন্য। সঙ্গে যাত্রীদের সবাইকে অনুরোধ, টিকা নেওয়ার ১৪ দিন পরে যাতে তারা ফ্লাই করেন। সে ক্ষেত্রে কোনো জটিলতা থাকবে না।
গণশুনানিতে একযাত্রী অভিযোগ করেন, টাকা না দিলে বিমানবন্দরে কাস্টমস কর্মকর্তারা কাজ করে না। টাকা দিলে সিরিয়াল আগে দেয়া হয়। এছাড়াও ফ্লাইট মিস হলে টিকেট রি-ইস্যু করার ক্ষেত্রে বিমানবন্দরে এয়ারলাইন্স গুলো যাত্রীদের কোনো সহযোগিতা করে না বলেও অভিযোগ করেন তিনি। সেই সঙ্গে শুধু ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নয়, চট্টগ্রাম বিমানবন্দরেও করোনা টেস্টিং ল্যাব বসাতে অনুরোধ জানান।
গণশুনানিতে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য বিধি ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা, এয়ারলাইন্স সংক্রান্ত, ট্রাভেল এজেন্সির চিটিং, টিকিটের সময় থাকা সত্ত্বেও নতুন করে টিকিট কাটতে হচ্ছে এতে জটিলতা তৈরি হচ্ছে, সময়মতো বিমানবন্দরে আসেননি, এমন বিষয়গুলোকে আমরা শনাক্ত করেছি। যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমরা এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করব।
যাত্রীদের অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাত্রীদের জন্য বিমানবন্দরে করোনা ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। শর্ত অনুযায়ী ৪৮ ঘণ্টা আগে এবং যাত্রার ৬ ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে এসে করোনা টেস্ট করতে হবে। বর্তমানে বিমানবন্দরে পিসিআর পোস্ট ব্যবস্থা করা হয়েছে। আয়তন ছোট থাকায় মাত্র ১০টি স্থাপন করা সম্ভব হয়েছে। প্রচুর পরিমাণে জনসমাগম হচ্ছে এবং হবে। এ সমস্যা সমাধানে যাত্রীদের কমপক্ষে ৮ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে উপস্থিত হতে হবে।
তিনি বলেন, যাত্রী যদি দেরি করে এসে যানজটকে কারণ দেখান এবং ফ্লাইট মিস হয়, তবে বিমানবন্দরে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। যানজট বিবেচনায় প্রয়োজনে একদিন আগে ঢাকা এসে পৌঁছান। তারপরও যথা সময় বিমানবন্দরে আসেন। নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষা করে গন্তব্যে যান। সেক্ষেত্রে কোনো জটিলতা হলে আমাদের জানান, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এয়ারলাইন্সসগুলো বলেছে, ফ্লাইটের শেষ সময় পর্যন্ত যাত্রীদের নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, যাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে। সামনে আরও বেশি ফ্লাইট চলাচল করবে, তখন আপনাদের যাওয়া-আসা আরও সহজ হবে। এক্ষেত্রে কোনো যাত্রী যাতে প্রতারিত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সি ও দালালদের কাছ থেকে সব সময় সতর্ক থাকতে হবে।
বিমান কর্তৃপক্ষ চেয়ারম্যান বলেন, নিজস্ব লাগেজ ছাড়া অন্য কারও দেওয়া লাগে বহন করবেন না। কেউ যদি কোনো ব্যাগ দেয় এটি বিদেশে নিয়ে গিয়ে কাউকে দিতে আপনারা নেবেন না। কারণ বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন পোস্টে স্মাগলিং বেড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে মাদক চোরাচালানও হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে আমাদের সবাই মিলে জোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
তিনি বলেন, বিমানবন্দরে বিষয়গুলোকে জিরো টলারেন্স' নীতিতে দেখা হচ্ছে। কারো কাছে মাদক দ্রব্য পাওয়া গেলে তিনি আর কোনোদিন বিদেশে যেতে পারবেন না। আইনি ব্যবস্থা তো আছেই, সঙ্গে দেশের বাইরে যাওয়া একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। বেশকিছু যাত্রীর লাগেজে স্ক্যান করে আমরা মাদক পেয়েছি। ধরা খাওয়ার পর অনেকেই বলে ‘আমি জানি না, আমাকে দিয়েছে’। সুতরাং এ ধরনের বক্তব্য বিমানবন্দরে গ্রহণযোগ্য হবে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০২১
এসজেএ/এমএমজেড