ঢাকা, রবিবার, ১২ মাঘ ১৪৩১, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ২৫ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

আধিপত্য নিয়ে ‘নরক’ কালিকাপুর, শিশুরাও প্রতিপক্ষ!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ৪, ২০২১
আধিপত্য নিয়ে ‘নরক’ কালিকাপুর, শিশুরাও প্রতিপক্ষ!

নরসিংদী: হত্যা, লুট, চাঁদাবাজিসহ নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চরাঞ্চলের চাঁনপুর ইউনিয়নের মেঘনার পাড়ের কালিকাপুর গ্রামে বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত হয়ে আসছে।

আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নিয়ে আওয়ামী লীগের দু’টি পক্ষের সংঘর্ষে বছরের পুরোটা সময়জুড়ে গ্রামটির পরিবেশ থাকে অশান্ত।

যে কারণে প্রায়ই সংবাদপত্রে শিরোনাম হতে দেখা যায়।

জানা গেছে, চাঁনপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বাবুল মিয়া ও যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক নাসির মিয়ার দ্বন্দ্বে সর্বশেষ গ্রামটিতে এক স্কুলছাত্রী টেঁটাবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারায়। প্রতিপক্ষের কাছে প্রায়ই নির্যাতনের শিকার হচ্ছে শিশুরাও। করোনার দীর্ঘ বিরতির পর খুলেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, যুবলীগ নেতা নাসির অনুসারীদের নির্যাতন ও বাধায় কালিকাপুর গ্রামের অনেক শিশুরা স্কুলে যেতে পারছে না। ফলে শিক্ষার্থীদের ঝড়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে চিন্তিত অবিভাবক ও শিক্ষকরা।

গত এক সপ্তাহ আগে নাসির অনুসারীদের হাতে নির্যাতনের শিকার কালিকাপুর প্রাইমারি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র পারভেজ জানায়, স্কুলে গেলে প্রতিপক্ষের লোকজন চর-থাপ্পড় দেন। যে কারণে ভয়ে স্কুলে যাওয়া হচ্ছে না তার।  

সদাগরকান্দি হাই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র সৌরভ জানায়, তার পরিবার আওয়ামী লীগ নেতা বাবুল সমর্থিত হওয়ার কারণে স্কুলে যাওয়ার সময় পথে প্রতিপক্ষের বাঁধা পেতে হয়। শুনতে হয় নানা কটুক্তিও।  

কালিকাপুর সরকারি প্রাথমকি বিদ্যালয়ের (ভারপ্রাপ্ত) প্রধান শিক্ষক লায়লী বেগম ও সদাগরকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান আবুল হাশেম জানান, স্কুলে আসতে বাধা ও নির্যাতনের কোনো অভিযোগ পাননি তারা। অভিযোগ পেলে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাসও দেন।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিপক্ষের নির্যাতনের ভয়ে আওয়ামী লীগ নেতা বাবুল সমর্থিত পরিবারগুলোর অর্ধশত শিশুর বেশির ভাগই স্কুলের যেতে পারছে না। বিগত দিনে যুবলীগ নেতা নাসির অনুসারীরা হামলা চালিয়ে অনেক ঘর ভাঙচুর, আসবাপত্র, পানির টিউবওয়েল, বিদ্যুতিক মিটার লুট করে নিয়ে গেছে। ফলে বাড়িতেও শিশুদের শিক্ষার পরিবেশ নেই। এখানকার শতকরা ৯০ ভাগ পরিবার কৃষি ও মাছ ধরা পেশায় জড়িত। ঝগড়ার কারণে তাদের অনেকেই জমির ধান ও নদীতে মাছ ধরতে যেতে পারেননি। এতে করে অর্থ সংকটে থাকা পরিবারগুলো তাদের শিশুদের মুখে পুষ্টিকর খাবার তুলে দিতে পারছেন না। দ্রুত দু’পক্ষের বিরোধ নিষ্পত্তি চায় গ্রামবাসী। যাতে সব শিশুরা নিরাপদে স্কুলে ফিরতে পারে।

বৃদ্ধ নান্নু মিয়া বলেন, প্রতিপক্ষের হামলার ভয়ে গত দুই মাস যাবত কালিকাপুর বাজারে যেতে পারছি না। অসুস্থ হলে মেঘনা পাড়ি দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার লালপুর বাজারে গিয়ে ওষুধ কিনতে হয়। নাসিরের লোকজনের ভয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুলে যেতে পারছে না। এ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ চাই।

চাঁনপুর ইউনিয়ন যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক নাসির মিয়া বলেন, কালিকাপুর বাজারে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প রয়েছে। বাবুল অনুসারীরা অবাধে বাজারে ও তাদের সন্তানরা স্কুলে যাচ্ছে। নির্যাতন ও বাধা দেওয়ার অভিযোগটি অসত্য।  

এসব ব্যাপারে রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজগর হোসেন বলেন, খোঁজ নিয়ে সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০২১
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।