ঢাকা, রবিবার, ১২ মাঘ ১৪৩১, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ২৫ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

অচেতন বৃদ্ধকে নিয়ে ৭ ঘণ্টা ঘুরলো দুই ছাত্র, ঢামেকে ভর্তি

আবাদুজ্জামান শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ৪, ২০২১
অচেতন বৃদ্ধকে নিয়ে ৭ ঘণ্টা ঘুরলো দুই ছাত্র, ঢামেকে ভর্তি

ঢাকা: রাজধানীর তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা এলাকায় রোগাক্রান্ত ৭০ বছরের এক বৃদ্ধ অচেতন অবস্থায় পড়েছিলেন। ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের থার্ড সেমিস্টারের দুই ছাত্র মো. তানভীর ইসলাম ও কাজী সারোয়ার তাকে উদ্ধার করে রাজধানীর তিনটি সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করার জন্য সাত ঘণ্টা ঘুরে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে বৃদ্ধকে ভর্তি করেছেন।

সোমবার (৪ অক্টোবর) দুপুর ১২টার দিকে সাতরাস্তা এলাকায় লুঙ্গি ও শার্ট পরা অবস্থায় ওই অজ্ঞাতপরিচয় বৃদ্ধকে রাস্তায় অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন তারা। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এ বিষয়ে বাংলানিউজকে তানভির ও কাজী সারোয়ার বলেন, কলেজ থেকে বের হয়েই ওই বৃদ্ধকে অচেতন অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখি। তিনি এতটাই রোগক্রান্ত তার শরীরের হাড় পর্যন্ত দেখা যাচ্ছিলো। পরে আমরা স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করি তাকে কেউ চেনেন কিনা। স্থানীয় লোকজন আমাদের জানান, ওই বৃদ্ধ তেজগাঁওয়ের টুনিপাড়া কলোনি এলাকায় থাকেন। পরে আমরা তাকে রিকশায় করে ওই কলোনিতে নিয়ে যাই। সেখানের কেউ তাকে চিনতে পারেননি।  

তারা বলেন, তবে স্থানীয় অনেকেই আমাদের বলেছেন, তিনি ওই এলাকায় ভিক্ষা করেন। কিন্তু কেউ তার নাম-পরিচয় বলতে পারেননি। পরে বৃদ্ধকে হাসপাতালে ভর্তির জন্য রওয়ানা হই। রাস্তায় এই দৃশ্য দেখে আমাদের এক ব্যক্তি তিন হাজার টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেন। পরে বৃদ্ধকে আমরা স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই। সেখানে দায়িত্বরত  লোকজন বলেন, এখানে তার চিকিৎসা হবে না। আপনারা ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যান। সে অনুযায়ী প্রচণ্ড যানজট পেরিয়ে আমরা তাকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যাই। ঢামেকের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা জানান, এখানে তাকে ভর্তি করা যাবে না, তাকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যান।

তারা আরও বলেন, এমনিতেই প্রচণ্ড যানজট পেরিয়ে দুটি হাসপাতালে নেওয়ার পরও যখন অচেতন বৃদ্ধকে ভর্তি নিচ্ছে না, তখন একটু হতাশ হয়ে পড়ি। এরপরেও মনোবল চাঙ্গা করে তাকে ঢামেক হাসপাতালের সরকারি অ্যাম্বুলেন্স করে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যাই। মিটফোর্ডে নিয়ে যাওয়ার পরে ঘটে আরেক ঘটনা। অচেতন বৃদ্ধকে জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়ার পরে সেখানকার কয়েকজন ব্যক্তি আমাদের জানান, তোমরা ছাত্র মানুষ, ওই বৃদ্ধকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে এসেছো এটা ভালো কাজ করেছো। কিন্তু উনি যদি মারা যান, এই দায়ভার কে নেবেন। তাই এই হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা যাবে না। এ বক্তব্য শোনার পরে আমরা আবারও হতাশ হয়ে পড়ি। পরে মিটফোর্ড থেকে আবারও তাকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসকরা জানান, এই রোগী এখানে ভর্তি করা যাবে না।

অবশেষে এই ঘটনার বিস্তারিত ঢামেকের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক জানাতে পারে। তিনি বিস্তারিত শুনে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, অবশ্যই আমার তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে উন্নত চিকিৎসা দেবো। পরে তার নির্দেশ মোতাবেক অবশেষে বৃদ্ধকে ঢামেকে হাসপাতালে ভর্তি করতে পারি।

এ বিষয়ে পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল বলেন, ঢামেক হাসপাতাল জাতীয় হাসপাতাল। সারাদেশ থেকে রোগীরা এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন। সব জেনারেশনের পাশাপাশি মধ্যবিত্ত ও দরিদ্রদের শেষ ভরসা হচ্ছে আমাদের এই হাসপাতাল।  

তিনি বলেন, এই হাসপাতাল থেকে কোনো রোগী চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাবেন এটা হতে পারে না। তবে করোনার কারণে হাসপাতালের নতুন ভবনের মেডিসিন বিভাগ পুরোটাই করোনা ইউনিট করা হয়েছে। এই কারণে মেডিসিনের রোগী ভর্তি নেওয়া হতো না। কয়েক মাস আগে থেকেই আউটডোরে আমরা মেডিসিন বিভাগ খুলেছি। সেখানে রোগী ভর্তি নেওয়া হচ্ছে।

সন্ধ্যা সাতটার দিকে ওই দুই ছাত্রের কাছে বৃদ্ধর বিস্তারিত বিষয়ে জানতে চাইলে তারা জানান, ঢামেক হাসপাতালের পরিচালকের নির্দেশে ওই বৃদ্ধকে হাসপাতালের ১০০ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। তাকে ইনজেকশনসহ স্যালাইন দেওয়ার পর তার কিছুটা উন্নতি হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০২১
এজেডএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।