ফরিদপুর: ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার গুনবহা ইউনিয়নের চন্দনী এলাকার বাসিন্দা মুন্নু মিয়া। মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশকে স্বাধীন করতে যুদ্ধ করেছিলেন হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে।
পাঁচ বছর আগে উচ্চ আদালত বকেয়াসহ ভাতা চালুর নির্দেশ দিলেও অজ্ঞাত কারণে আজও চালু হয়নি বীর মুক্তিযোদ্ধা মুন্নু মিয়ার। আর্থিক দৈন্যতার কারণে কিছুদিন তিনি বোয়ালমারী উপজেলা পরিষদে নৈশ প্রহরী হিসেবেও চাকরি করেছেন। কিন্তু বয়স বাড়ায় তিনি আর কাজ করতে পারেন না। বীর মক্তিযোদ্ধা হিসেবে ন্যায্য প্রাপ্য তার সম্মানী ভাতা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
২০১৫ সালের জুলাই মাসে মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা বন্ধ হওয়ার পরে মানিক মিয়া ওরফে মুন্নু মিয়া উচ্চ আদালতে রিট করেন। হাইকোর্টের বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী এবং বিচারপতি রাজিক আল জলিল ২০১৬ সালের ১২ জুলাই মুন্নু মিয়ার পক্ষে রায় দেন। রায়ে ২০১৫ সালের জুলাই মাস থেকে বকেয়াসহ ভাতা চালুর নির্দেশ দেওয়া হয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ বিবাদীদের। হাইকোর্টের রায় নম্বর ২০৮৫/২০১৬।
জানা যায়, ১৯৬৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুর জেলায় পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেন মুন্নু মিয়া। এরপর তিনি রাজশাহী পুলিশ লাইন্সে যোগদান করেন। রাজশাহী পুলিশে কর্মরত অবস্থায় ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত রাজশাহী পুলিশ লাইন্সে পাক-বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করেন। পরে পাকিস্তানিরা রাজশাহী পুলিশ লাইন্স দখল করে নিলে পালিয়ে পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে ভারতের মুর্শিদাবাদে চলে যান। সেখান থেকে কলকাতা বাংলাদেশ মিশনে ১ নম্বর সেক্টরে যোগদান করেন।
দেশ স্বাধীনের পর মুন্নু মিয়া ১৯৭২ সালের ৭ জানুয়ারি রাজশাহী পুলিশ লাইন্সে পুনরায় যোগদান করেন। পরে রাজশাহী জেলায় কর্মরত থাকা অবস্থায় ঠিকমতো বেতন-ভাতা না পাওয়ায় স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে চলে আসেন।
রায়ের পর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটে নাম অন্তর্ভুক্তকরণ ও সনদ প্রত্যয়নের জন্য ২০২০ সালের ১৫ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জননিরাপত্তা বিভাগ পুলিশ শাখা-২ এর উপ-সচিব ফারজানা জেসমিন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবকে ২০২০ সালের ১৫ অক্টোবর চিঠি পাঠান। এর স্মারক নম্বর ৪৪.০০.০০০০.০৯৫.১১.০০৫.১৯.৪১৬। কিন্তু এর পরও মুন্নু মিয়ার মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা চালু হয়নি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মানিক মিয়া মুন্নু জানান, হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়াই বন্ধ হয়ে যায় মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা। বিভিন্ন দপ্তরে ঘোরাঘুরি করে ভাতা চালু করতে না পেরে উচ্চ আদালতে ভাতা পাওয়ার জন্য রিট আবেদন করেন। আদালত তার পক্ষে রায়ও দেন। আদেশ দেন যে তারিখ থেকে ভাতা বন্ধ হয়েছিল সেই মাস থেকেই ভাতা চালু করতে। কিন্তু দুঃখের বিষয় আজও চালু হয়নি মুক্তিযোদ্ধা ভাতা।
তিনি জানান, ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বশেষ পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত ভাতা পেয়েছেন। ভাতা বই নং ১৫০। সোনালী ব্যাংকের বোয়ালমারী শাখায় হিসাব নং ৩৪০৯৬৫৭৪।
বোয়ালমারী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার অধ্যাপক আব্দুর রশিদ দ্রুত মুন্নু মিয়ার মুক্তিযোদ্ধা ভাতা চালুর জোর দাবি জানিয়ে বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমি মুন্নু মিয়াকে চিনি। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। বর্তমানে তার সংসারের পরিস্থিতি ভালো নয়। তিনি পরিবার নিয়ে খুবই খারাপ অবস্থায় আছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৫, ২০২১
আরআইএস