ঢাকা: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা বই পাঠসহ শিক্ষার্থীদের বইমুখী করতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র। ‘পড়ি বঙ্গবন্ধুর বই, সোনার মানুষ হই’ প্রতিপাদ্যে মুজিববর্ষ ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে নেওয়া এ কার্যক্রমের পৃষ্ঠপোষকতা করছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র সূত্র জানিয়েছে, বঙ্গবন্ধুর লেখা বই পড়ে উদ্বুদ্ধ হওয়া, শিক্ষা ও অনুপ্রেরণা নেওয়া এবং স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়ার কার্যক্রম এটি। ২০২১-২২ অর্থবছরে মুজিববর্ষে সারা দেশের শত গ্রন্থাগারের অংশগ্রহণে কার্যক্রমটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক মিনার মনসুর বাংলানিউজকে বলেন, সম্প্রতি করোনাজনিত সংকটের মধ্যে দেশের সব গ্রন্থকেন্দ্র এক প্রকার বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় শিক্ষার্থীরা অনলাইনে ক্লাস করার ফলে ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে আসক্ত হয়ে পড়ে। এতে বইয়ের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততাও কমতে থাকে। তখন আমরা ভাবি এই সংকট কীভাবে দূর করা যায়। পরে পরীক্ষামূলক পাঠ কার্যক্রমের চিন্তা করি। এর ফলে শিক্ষার্থীকে গ্রন্থাগারে আসতে হবে না, বরং গ্রন্থাগারই পৌঁছে যাবে তাদের কাছে।
তিনি আরও বলেন, প্রথমে সীমিত পরিসরে ঢাকা মহানগরের ১০টি বেসরকারি গ্রন্থাগারের অংশগ্রহণে একটি ধারাবাহিক পাঠ কার্যক্রম নেওয়া হয়েছিল। কার্যক্রমটি ব্যাপক আলোচিত ও প্রশংসিত হয়। এরপর সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এটি সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। পরে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতেও কার্যক্রমটি নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় এটি আরও বিস্তৃত পরিসরে বাস্তবায়িত হওয়া প্রয়োজন বলে মত দেন সবাই। সেই প্রেক্ষাপটে এ বছর সারাদেশে শত গ্রন্থাগারের অংশগ্রহণে কার্যক্রমটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে আমরা এত সাড়া পেয়েছি যে, ইতোমধ্যে গ্রন্থাগারের সংখ্যা কিছু বাড়াতে হয়েছে।
এবারের কার্যক্রমে তিনটি গ্রুপে শিক্ষার্থীরা অংশ নিতে পারবেন। দেশের প্রতিটি জেলা থেকে কমপক্ষে একটি করে গ্রন্থাগার এতে অংশ নেবে। এর মধ্যে ‘ক’ গ্রুপে থাকবে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির পাঠক, ‘খ’ গ্রুপে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি এবং 'গ' গ্রুপে থাকবে স্নাতক ও অন্যান্য পর্যায়ের পাঠকরা।
প্রতিটি গ্রুপের শিক্ষার্থীকে বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী' বইটি পড়তে দেওয়া হবে। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে বইটি পড়ে তারা নিজেদের ভাবনা ও পাঠ প্রতিক্রিয়া লিখে জানাবেন। মতামত জানানোর ক্ষেত্রে ‘ক’ গ্রুপে 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ছেলেবেলা', 'খ' গ্রুপে 'জাতির পিতাকে যেমন জেনেছি' এবং 'গ' গ্রুপে 'মানবতাবাদী বঙ্গবন্ধু' বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে।
জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র সূত্র জানিয়েছে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের অনুদানপ্রাপ্ত ও নির্বাচিত ১০০ বেসরকারি গ্রন্থাগারের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে এ কার্যক্রম। প্রতিটি গ্রন্থাগার তাদের সদস্য-পাঠকদের মধ্য থেকে ১০ জনকে মনোনীত করবে। এরপর নিজ দায়িত্বে নির্ধারিত বইগুলো পৌঁছে দেবে। এ কার্যক্রমে তিনটি গ্রুপ এবং ৮টি প্রশাসনিক বিভাগ থেকে সর্বমোট ৭২ জন সেরা পাঠককে পুরস্কার দেওয়া হবে। পুরস্কার হিসেবে বই, অর্থ এবং সনদপত্র পাবেন বিজয়ীরা। এছাড়া অংশগ্রহণকারী সবাইকে দেওয়া হবে সনদপত্র। আর প্রাপ্ত নির্বাচিত রচনা নিয়ে প্রকাশিত হবে আলাদা একটি গ্রন্থ। আগামী ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ীদের হাতে এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।
মিনার মনসুর বলেন, এখনকার ছেলেমেয়েরা বইয়ের তুলনায় অনলাইনের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়ে গেছে। আমরা তাদের বইয়ের প্রতি আকৃষ্ট করতে চাই। আমরা চাই বইমুখী একটি কর্মযজ্ঞ শুরু হোক। আমরা এটি এগিয়ে নিয়ে যাবো। আর শুধু বঙ্গবন্ধুর বই নয়, পরবর্তী ধাপে আমরা অন্যান্য বই নিয়েও কার্যক্রম পরিচালনা করবো। কেননা বইয়ের সঙ্গে যদি কেউ যুক্ত হয়ে যায়, তাকে আর কেউ দমিয়ে রাখতে পারে না।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫১ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৬, ২০২১
এইচএমএস/এনএসআর